preloader
বাংলা বইয়ের e-ভুবন
Menu Categories Search Cart 0
Menu
Cart

Total 0 Items

☹ Your cart is empty

Sub Total:

$0

₹0

বিভাগ
ব্যবচ্ছেদ: পর্ব ২
ধারাবাহিক

ব্যবচ্ছেদ: পর্ব ২

ফিরে এলাম আবার আমার নিজস্ব কুঠুরির মধ্যে। মনে হল এই হয়তো জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্টের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি। কিন্তু কাউকে বলতে পারছি না। কারণ কেউ কেউ বলে সন্ধ্যাবেলা সাপ বলতে নেই, চলে আসবে। কেউ কেউ বলে আমি অনেক বলেছি কিন্তু একবারও আসেনি। যারা যারা বলে আর যারা যারা মানে তারা বলতে গেলে একই নৌকোর সওয়ারি হয়ে নিজেদের ভাসিয়ে দেয় অকুল দরিয়ার মাঝে। গানে গানে শুনে এসেছি যার কূল নাই সীমা নাই। তাহলে আছে কী?

দুই

এখন একটা নতুন অধ্যায় লিখতে বসলে অনেক সময় চলে যাবে। তার চেয়ে কিছু না লিখে স্বয়ংক্রিয় একটা দরজা রাখি ঘরের সামনে। যখনই কোনো চিন্তা মাথায় ঘর করবে তখনই সে বন্ধ হবে। কিন্তু বন্ধ কেন? দরজা তো খুলে যাওয়ার কথা। অথচ বন্ধ শব্দটাই কেন মাথায় এল?

আজ সারাদিন অনেক কাজ ছিল তাই দুপুরে কিছুটা ঘুমিয়ে গেছিলাম। এত ঘুম যে কোথা থেকে আসে কে জানে? ঘুম ভাঙল একেবারে সন্ধ্যের আগে। তখন গোধূলি নিজেকে যেন ফিরিয়ে নিচ্ছে। মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে। কী যেন মনে হচ্ছে কিন্তু মাথা আর কথা বানাতে পারছে না। দরজায় কেউ ঠকঠক করছে। আস্তে বা তাড়াতাড়ি কে জানে কোনভাবে দরজা খুললাম। দেখি কে এল।

কিন্তু আরে এটা আমি কী দেখছি? দরজার বাইরে আমার পৃথিবীটাই যে উলটে গিয়েছে। আমার ফ্ল্যাট এখন তাদের সামনে, মানে আমি তাদের দিকে উলটোভাবে ঝুলে আছি। না ভুল বললাম, তারা আমার দিকে ঝুলে আছে, মাথা নীচে পা উপর। কিন্তু পড়ে যাচ্ছে না। কীকরে সম্ভব?

ভয় হল খুব। এভাবেই কি মানুষ পাগল হতে শুরু করে? অথচ আজ পর্যন্ত কোনো পাগলের তো কোনো ক্ষতি করেছি বলে মনে পড়ে না। তাহলে আমার চোখ এভাবে উলটে গেল কীভাবে? না চোখ উলটে যাওয়া যদিও তেমন কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। অনেকেরই শুনেছি চোখ উলটে গিয়েছে নিজের অবস্থা দেখে। তা যাইহোক একদিন যে এমন দিন আসবে তা কিছুটা ভাবাই ছিল। তবু আবার একবার দরজা খুললাম। এখন কোনো শব্দে নয়। বরং বিনা শব্দে। এবং যা অবধারিত ছিল তাই হল। দেখি দরজায় আমাদের সেই ওয়াচ-ম্যান, খাকি একটা উর্দি পরে দাঁড়িয়ে রয়েছে কিছু একটা জিজ্ঞাসা নিয়ে। এবং এবং যা বলতেই হবে তা হল, সে সোজাভাবেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। মাথা উপর পা নীচে। তাহলে সব ঠিক হল নাকি? এই কথাটা আবার ওয়াচ-ম্যান জিজ্ঞাসা করল। বললাম হ্যাঁ এবারে সব ঠিকই দেখছি। কিন্তু বলেই মনে হল কেন একথা বললাম? বা সে জিজ্ঞাসা করলই-বা কেন?
বললাম, এখন কী মনে করে? সে জানাল, একজন এসেছিল দেখা করতে, সে ঢুকতে দেয়নি। বললাম, কে সে? সে জানাল, তার নাম নিখিল ছিল।
ওঃ বাবা তোমাকে এখন কী বলে সম্বোধন করি, ফাক বলবো না বাঞ্চত ওয়াচ-ম্যান না কি আমি নিজেই বোকাচোদা। কেন যে এই হাড়বুড়ো লোকটাকে রেখেছিলাম কে জানে?
—আপনি ঢুকতে দেননি?
—না দিইনি, কেননা আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
—কিসের ভয়?
—তখন সন্ধে সন্ধে হবে। বা তখন রাতই ছিল। আমি কিছুটা ঘুম চোখ নিয়ে যেই না দরজা খুলেছি দেখি লোকটা উলটোভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বা বলতে গেলে হাতে হেঁটে এসেছে। মাথা নীচে পা উপরে।

কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’

স্বয়ংক্রিয় দরজাটা বন্ধ হয়ে গেল নিজে থেকে। ফিরে এলাম আবার আমার নিজস্ব কুঠুরির মধ্যে। মনে হল এই হয়তো জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্টের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি। কিন্তু কাউকে বলতে পারছি না। কারণ কেউ কেউ বলে সন্ধ্যাবেলা সাপ বলতে নেই, চলে আসবে। কেউ কেউ বলে আমি অনেক বলেছি কিন্তু একবারও আসেনি। যারা যারা বলে আর যারা যারা মানে তারা বলতে গেলে একই নৌকোর সওয়ারি হয়ে নিজেদের ভাসিয়ে দেয় অকুল দরিয়ার মাঝে। গানে গানে শুনে এসেছি যার কূল নাই সীমা নাই। তাহলে আছে কী? এক জলোচ্ছ্বাস। আর ওপারে পৌঁছতে পারলে এ জীবনের অন্য এক মানে। কিন্তু ওপারটা যে মিথ, তা কে বলে দেবে?

তাহলে কি নিখিল এসেছিল এখানে? নাকি বুকুদা এসেছিল আমার ঘরে। কে জানে কে ছিল। এবং আর যাইহোক ওই ওয়াচ-ম্যান নিশ্চয়ই পাগল হয়ে যায়নি এখনও। যদিও বয়স ষাটের উপর তাও শক্ত হাড়। ভুল দেখেনি, বরং কিছুটা বেশি দেখেছে।

নিখিল তাহলে কী দেখেছে? সে সোজা দেখেছে নাকি উলটো দেখেছে? অবশ্য সে-কথা একমাত্র সেই জানে বাকিরা যা জানে তার মানে উলটো যে হবে না তার কী গ্যারান্টি রয়েছে। যাইহোক ওয়াচ-ম্যানকে বিদায় করলাম, বললাম, দুপুরে কি ঝিমুচ্ছিলেন? সে জানাল, তা কিছুটা যে চোখ লেগে আসেনি তা আর কী করে বলি।

কিছুই বলার নেই বরং চিন্তা করার আছে। তাই কার্তিককে ডেকে পাঠালাম। সে আসুক দেখি, সে সোজা আসে নাকি উলটে আসে। কিন্তু হঠাৎ এখন মনে এল ওয়াচ-ম্যানের আগে যারা এসেছিল, এবং বেল বাজাচ্ছিল তারা গেল কোথায়? কারা ছিল তাই তো দেখা হয়নি। অবশ্য দেখবই-বা কীকরে? আমি যে তাদের পা দেখেছি। মুখ তো দেখিনি। এখন প্রতীক্ষা, দেখি কার্তিক আসে নাকি।

যদিও আবার বেল বাজল, তবুও আমি নিশ্চিত হতে পারছি না, বেল কি বেজেছে? না কি আমার মনের ভুল, যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কেমন যেন ভয় ভয়, আবার সেইসব অর্ধসত্য দেখে ফিরে আসব না তো? অবশ্য ফেরার কথা যখন হচ্ছে তখন বলি এমন অনেক জায়গা থেকেই কার্তিক আর আমি ফিরে এসেছি। তখন অবশ্য হাত খালি থাকত। এখন তেমন হয় না। এখন কেন এমন হয় না? তার উত্তর অনেক গভীর। পরে ডিসকাস করা যাবে। যখন কার্তিক আসবে। কিন্তু এখন কে এল?
অমিয় স্যার নয় তো?
আরে হঠাৎ করে এই নামটাই কেন মাথায় এল? আগে তো কখনও এমন হয়নি। আগে তো নিজেকে বেশ বৈষয়িক বলেই সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছি। কিন্তু আজ হঠাৎ ফের অমিয় স্যার? সে তো সেই তখনের কথা। যখন বকুল পিসি বেঁচেছিল। আরে রে রে কী যা তা বলছি, বকুল পিসি এখনও বেঁচে আছে। আসলে এই বেঁচে থাকা সেই বেঁচে থাকা নয় আর কি।

নাঃ অন্য একটা কাহিনি মাথায় এল। কোনো একটা নৌকায় আমি আর কার্তিক বসে রয়েছি। নৌকাটা দুলে যাচ্ছে কিন্তু কোনো দিকেই এগোচ্ছে না। তাহলে কি সে স্থির, তাও বলা যাবে না। কারণ জল এখানে বহমান। নৌকোটা জলের সাথে স্থির। তা যাইহোক আমি আর কার্তিক আর সেই নৌকো, যার জন্য এই কাহিনি ফের শুরু হল। আমরা যেতে চেয়েছিলাম অমিয় স্যারের বাড়ি, আমরা তখন তার কাছে পড়তাম। কিন্তু সেদিন যেন পৌঁছতেই পারছিলাম না। একটা খবর আমাদের একেবারে মুষড়ে দিয়েছিল। অমিয় স্যারের বড়ো মেয়ে বিয়ে করে ফেলেছে। তাও আবার তার নিজের প্রফেসরকে। অমিয় স্যারের মেয়ে আমাদের থেকে বছর দুয়েকের বড়ো ছিল।

সে ছিল তার কেমিস্ট্রির স্যার। আমরা অমিয় স্যারের কাছে বাংলা পড়তাম। তখন স্যারের মেয়ে একদিন সবাইকে হতবাক করে, হাত ধরে ফেলে সেই তার কেমিস্ট্রির স্যারের। তারপর দিন দুয়েকের পরে ফিরে আসে বুড়ো বর নিয়ে। সেই কেমিস্ট্রির স্যার তখন কিছু না হলেও পঞ্চান্ন। সে তখন তার কলেজে রিডার পোস্টে ছিল। তো যাইহোক, সে ছিল অমিয় স্যারের মেয়ে, খুব একটা কিছু মনে হয়নি। শুধু স্যারের দিকে তাকিয়ে মনে হয়ে ছিল, মানুষটার বয়স এই দু-দিনে অন্তত দশ বছর বেড়ে গেছে। কারণ তিনি আর তার নব জামাই সমবয়সি ছিলেন। বরং ভুল বললাম কেমিস্ট্রি বাবু দু-বছরের বড়ো ছিলেন অমিয় স্যারের থেকে। একই স্কুল থেকে যে পাশ করে ছিলেন তাই এতটা চেনা।
কিন্তু এখন দরজায় কে?
দরজা খুললাম
সামনে লাল সিঁদুরে রাঙানো একটা পাথর। পাশে কিছু ফুল একটা প্লাস্টিকে করে রাখা আছে। আরে এসব কী। শালা আমার ঘরে তুকতাক। কে এসেছিল? কে এসেছিল?


কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই,ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন


এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।

মন্তব্য করুন

লেখক

দেবনাথ সুকান্ত একজন লৌহ ইস্পাত কারখানার শ্রমিক এবং সেই শ্রমিকের চোখ দিয়েই দেখতে চান তাঁর কাঙ্ক্ষিত পৃথিবী, যা উঠে আসে তাঁর যাপিত জীবনের কবিতা এবং গল্প উপন্যাসে। গল্প-উপন্যাসের চরিত্রেরা তাঁর গহন মনের ভিতর রেখে যায় ইস্পাতের মতো দৃঢ় চেতনার সমন্বয়। তার কিছুটা তিনি লেখেন, কিছুটা জমিয়ে রাখেন কালের প্রবাহের জন্য। এর আগে লিখেছেন, ‘ছেদবিন্দু', ‘টানেলের মুখে কিছু হায়ারোগ্লিফ’, ‘এক অপরিহার্য রক্তরেখায়’, ‘অন্ধকারে এক জলস্রোত’-এর মত কাব্যগ্রন্থ, ‘রক্তাক্ত স্পর্শের আলো’-এর মত উপন্যাস। যা আসলে তার অতীতকে খুঁজে নিজেরই মুখ বার করার এক প্রয়াস। তার বেড়ে ওঠা দুর্গাপুরে। চাকরি সূত্রে ঘুরেছেন, হাজারিবাগ, বোকারো, ধানবাদ, রাঁচি আর বার্নপুর। ভালোবাসেন বই পড়তে আর বাঁশি বাজাতে।

অন্যান্য লেখা

দেখতে পারেন