টানাটানি এক সময় ছিল, তা বেশ ভালোই ছিল সে-সময়ের টানাটানি। মাকে নিয়ে সে যে কী টানাটানি, সেসব এখন অতীত। মা একটা মিটিং সেরে আরেকটা মিটিঙের দিকে হেঁটে চলে যাচ্ছে। মিটিং বলতে তেমন কিছুই না, কিছু সামান্য ঘরের মহিলার সাথে কথা বলা। সেখান থেকে অন্য কোনো মহিলার বাড়ি। মায়ের পাশে মায়ের সাথি আরও দু-চার জন। মা চলে যাচ্ছে অথচ চিরমলিন একটা আঁচল যেন রয়ে যাচ্ছে এইসব আনপড় মহিলাদের মাথায়। তারা অবাক চোখে তাকিয়ে রয়েছে। তাদের বকুলদি হেঁটে যাচ্ছে, না কি তাদের রক্তের জোয়ার চলে যাচ্ছে ঢেউ দিয়ে।
চার
বুকুদা তাকিয়ে রয়েছে যেন কোনো এক জন্তু দেখছে সে চিড়িয়াখানার বাইরে থেকে। দেখেই যাচ্ছে আর দেখেই যাচ্ছে। বলেছিলাম, উনি এলে আর কিছু না শুধু সামনে সামনে ঘুরঘুর করতে। তাহলে একটু নজরে আসবে। কাজে লাগানো যাবে পরে। কিন্তু বুকুদা যে এভাবে তার দৃষ্টি বিনিময় করবে তা কেউ কীকরে জানত?
—আরে তুমি এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছ। ভিতরে যাওনি কেন?
—ভিতরে কী যাব রে এ তো ভাবাই যাচ্ছে না, এ তো আমাদের বিপ্লবদা।
—হ্যাঁ তোমাদের ছিল কোনো কালে এখন আমাদের হয়ে গিয়েছে।
—আশ্চর্য লাগছে এই ফ্যামিলির ছেলে হয়ে এখানে এসেছে।
—আরে তুমিও না, ঘর থেকে বেরও না কতদিন বলো তো?
বুকুদা একভাবে নিজের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে আর ভাবছে এখানেই কোথাও তার জন্য একটা গোলপোস্ট রয়েছে, সে কি করবে বলে।
—শোন জোরে একটা কিক করব?
—কী?
—আচ্ছা জোরে একটা কিক। বল একেবারে দু-গোল পোস্টের মাঝে ঢুকে যাবে।
—আরে আরে তুমিও না।
—দোকানটা দেখেছিস কত বড়ো হয়ে গেছে। শালা খেয়েছে প্রচুর।
—ও বাবারে তুমি কি নিজেরটা দেখতে শিখলে না, আজও।
—আচ্ছা তাহলে তুই বল কী করা যায়।
—সামনে থেকে একবার ঘুরে আসো, নিজেকে দেখাও।
—তার মানে কী? ও কি শালা হোমো নাকি বে?
—আরে ধুর। যখন তোমার কথা বলব তখন যেন চেনাতে পারি।
—কী বলবি আমার সম্বন্ধে?
—সে-কথা আমার। তুমি যা বলছি তাই করো।
নিখিল আশ্চর্য হাসতে লাগল মনে মনে। এই তাহলে নতুন নিয়ম। নিজেকে দেখান। যদিও সে জানে, যার কথা যার কাছে হবে। সে তাকে এক সময় বুকে জড়িয়ে রাখত। বা বলা ভুল হল, সে তার মাকে দেখে প্যান্টে হিসি করার উপক্রম করত। এখন সেই তাকে নিয়ে এতটা টানাটানি। টানাটানি এক সময় ছিল, তা বেশ ভালোই ছিল সে-সময়ের টানাটানি। মাকে নিয়ে সে যে কী টানাটানি, সেসব এখন অতীত। মা একটা মিটিং সেরে আরেকটা মিটিঙের দিকে হেঁটে চলে যাচ্ছে। মিটিং বলতে তেমন কিছুই না, কিছু সামান্য ঘরের মহিলার সাথে কথা বলা। সেখান থেকে অন্য কোনো মহিলার বাড়ি। মায়ের পাশে মায়ের সাথি আরও দু-চার জন। মা চলে যাচ্ছে অথচ চিরমলিন একটা আঁচল যেন রয়ে যাচ্ছে এইসব আনপড় মহিলাদের মাথায়। তারা অবাক চোখে তাকিয়ে রয়েছে। তাদের বকুলদি হেঁটে যাচ্ছে, না কি তাদের রক্তের জোয়ার চলে যাচ্ছে ঢেউ দিয়ে।
কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
নিখিলের ক্লান্ত লাগছে খুব। সে আমার দিকে তাকিয়ে বলছে, এক গ্লাস জল খাওয়াবি?
জল আনতে ভিতরে যাচ্ছি। আবার ফিরে আসছি। আনতে যেতে এবং ফিরে আসতে যেন আমার এক অনন্ত সময় লেগে যাচ্ছে। বুঝতে পারছি অথচ এতটা সময় কি করে লাগল ভেবে পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে কয়েক দশক পেরিয়ে বোধ হয় জল নিয়ে ফিরে আসছি। আর ফিরে এসেই হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছি মেঝেতে। বুকুদা ছুটে এসে তুলছে আমাকে। বুকুদা যেন উলটোভাবে ঝুলেছিল আর জলের জন্য হাত বাড়িয়ে ছিল। আমি জল এগিয়ে দিলাম। আর সঙ্গে সঙ্গে মাথা ঘুরে গেল।
—আরে পড়ে গেলি কীকরে?
আমি নিরুত্তর। চোখ এখনও স্থির হতে পারেনি। দেখছি বুকুদা যেন আমাকে ছাদের দিক থেকে টেনে নামিয়ে আনছে।
—কী রে পড়ে গেলি কীকরে?
—বুঝতে পারছি না। সব কেমন যেন উলটে যেতে দেখলাম?
—উলটে বলতে? মাথা ঘুরিয়ে গেল নাকি?
—হবে হয়তো।
বুকুদা আমাকে শুইয়ে দিল। ক্লাবের বাইরের একটা ফাঁকা চৌকিয়ে শুয়ে পড়লাম। বুকুদা বলল ঘুমিয়ে নে কিছুটা। কিন্তু ঘুমাব কীকরে? কিছুই তো আর হয়নি। এক সেকেন্ডের জন্য ভুল দেখলাম। আর কিছু না। বললাম, ঘুমাব কীকরে? এই দিনেদুপুরে কি ঘুমানো যায় নাকি? আরও কিছু ছেলে বেরিয়ে এল ভিতর থেকে। সঙ্গে সঙ্গে খবর গেল এখানে-ওখানে।
ছুটে এল রোহিণী। কে জানে কেন ছুটে এল রোহিণী। রোহিণী রোহিণী রোহিণী। ছুটে এল রোহিণী। জানি তার প্রয়োজন ছিল তবে এখনই কি? এখনই কি ফেলে আসা কান্না খুলে দেখাতে হবে এই ক্লাবের বাইরে।
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই,ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
মন্তব্য করুন