শঙ্কর কাকু পেটে গুলি খেয়েছিল সেই একাত্তর সালে। মা তখন আঁচল দিয়ে আগলে রেখেছিল তার প্রাণ। বাবা নিজের জামা দিয়ে ছিল যাতে পালিয়ে যেতে পারে। ওঃ, সেসব কী দিন ছিল আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে! আমার অবশ্য শোনা কথা, তখন আমি জন্মাইনি। তাও এতটাই শুনেছি যেন মনে হয়েছে এই তো দেখছি সচক্ষে। যেন আমার পূর্বজন্মের দিন এবং রাত।
তিন
এখন আমি যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছি সেখানে থেকে একেবারে অন্যরকম দেখায় সিনারিও। অবশ্য দাঁড়ানোর জায়গাটা পালটে দিলেই ভিউ পালটে যাবে। হয়তো কিছুটা ভুল দেখাবে আমাকে আমারই চোখ। যাকে বলে পার্পেন্ডিকুলার এরর। মানে উলম্বভাবে না দেখে যদি কিছুটা পাশ থেকে দেখি তো ঘড়ির মিনিটের কাঁটা কয়েক সেকেন্ড পিছিয়ে বা এগিয়ে যায়, সেভাবে আর কি। আমি দেখছি আর ভাবছি অবিশ্বাস্য বলে এ-পৃথিবীতে কিছু নেই। বরং মানুষের মনের ভিতর এক লুকোনো অধ্যায় রয়েছে যা তাকে চালনা করে অথচ সে নিজেও বুঝতে পারে না।
কার্তিকের পাশে বিপ্লবদা তার পাশে আরও কয়েকটা পরিচিত মুখ। তার পাশে বাউন্সার দু-জন। অথচ বাউন্সারের পাশে কিছুটা ফাঁকা জায়গা। সেখানে কেউ কেন নেই? জানি না। এইসব ফাঁকা জায়গা দেখলেই মনে হয় ঠিক যেন আমাকে মানিয়ে যেত। কিন্তু কিন্তু কি যেন একটা কারণে হয়ে ওঠেনি। ভাবছি বুকুদা, নাঃ বেশি ভাবাই হয়তো একটা রোগ। তার চেয়ে না ভাবাই ভালো। কেননা সাকসেস সব জায়গাতেই রয়েছে। যে ট্রেডিং করে তার কাছে মানি হল সাকসেস। যে বই পড়ে তার কাছে নলেজ, আর যে খেলছে তার কাছে স্কোর। সেভাবে ফেলিওরিটিও রয়েছে সব জায়গায়। সব থেকে ঘৃণা যেখানে সেখানেই যদি মানিয়ে নিতে হয় তবে অবশ্যই তুমি ফেলিওর। কি আর বলি লাল পাথরখানি দেখা যাচ্ছে বাউন্সারের হাতের পাশ দিয়ে উঁকি মারছে। হাসছে নাকি বিদ্রুপ। কে জানে কী আছে কপালে।
বসে আছি, অনেকক্ষণ বসে আছি। আমার ঘরের সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছি। ভাবছি, কে দুর্বল, আমি না কি এই পাথরখানি। আমি তাকে দেখছি। না সে নজর রাখছে আমার উপর? যেভাবে রোহিণী আমাকে দেখে যাচ্ছে। বিপ্লবদা রোহিণীকে নিয়ে এসেছে। দেখেই চিনেছি রোহিণী সেই অমিয় স্যারের মেয়ে।
কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
তবে এখন। এখন আমি না দেখার ভান করব। না বোঝার ভান করব। বা দেখে বলব আবার দেখাও। রোহিণী একটা একটা করে কাপড় খুলবে আর নাচ করবে। নাচ করবে আর কাপড় খুলবে। তার কোমরের উপরে চর্বিতে একটা দাগ পড়বে। নাভির কাছে এসে সে-দাগ মিলিয়ে যাবে। মিলিয়ে যাওয়া দাগে জল পড়বে ফোঁটা ফোঁটা। সে দুলে উঠবে। দুলে উঠবে তার বুক। আর ঠিক এভাবেই খুলতে খুলতে এক সময় দু-টি মাত্র ত্যানা গায়ে আমার কোলে এসে বসে পড়বে।
ওঃ বাবারে কীসব কথা মাথায় আসে। পাশে যে দু-জন বাউন্সার রয়েছে তারা কি আঁটি চুষবে? আর বিল্পবদা। ভাবা যায় শঙ্কর কাকুর ছেলে। শঙ্কর কাকু পেটে গুলি খেয়েছিল সেই একাত্তর সালে। মা তখন আঁচল দিয়ে আগলে রেখেছিল তার প্রাণ। বাবা নিজের জামা দিয়ে ছিল যাতে পালিয়ে যেতে পারে। ওঃ, সেসব কী দিন ছিল আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে! আমার অবশ্য শোনা কথা, তখন আমি জন্মাইনি। তাও এতটাই শুনেছি যেন মনে হয়েছে এই তো দেখছি সচক্ষে। যেন আমার পূর্বজন্মের দিন এবং রাত।
কিন্তু রোহিণী। আমি কিছুটা রেগে গিয়ে যখন দরজা আবার বন্ধ করতে যাচ্ছি দেখি সত্যি। অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে, আমি যেন চিনি চিনি অথচ চিনতে পারছি না। একদল লোকের সাথে করে কেউ আমার ঘরে ঢুকে যাচ্ছে। এবং তারা সোজা পায়েই হেঁটে আসছে। উলটোভাবে নয়। আমার বাস্তব যেন তার স্বপ্নের মাঝ থেকে বেরিয়ে আসছে সামনে। আমি পাশে সরে জায়গা করে দিচ্ছি। উঠিয়ে নিচ্ছি পাথর। তারা ঘরে ঢুকে যাচ্ছে। ঘরে ঢোকার সময় রোহিণী দেখে নিচ্ছে আমাকে। আমি পাশ থেকে তার গায়ের গন্ধ পাচ্ছি।
—কিরে তোর খবর কি? কাউকে পেলি?
—পেয়েছি তবে,
—তবে আবার কি?
—তবে বলতে এখন সে কিছুটা নিমরাজি।
—কেন?
—কেন আবার কী? লিডারের ছেলে ছিল, এখন কি আর দলে থাকতে পারে?
—পেট খালি না ভরতি?
—পেট খালিই বলতে গেলে?
—ভরিয়ে দে আপনা থেকে চলে আসবে।
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই,ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
মন্তব্য করুন