preloader
বাংলা বইয়ের e-ভুবন
Menu Categories Search Cart 0
Menu
Cart

Total 0 Items

☹ Your cart is empty

Sub Total:

$0

₹0

বিভাগ
জামিন: পর্ব ৮
ধারাবাহিক

জামিন: পর্ব ৮

22 Mar, 2025.

রুবি কি খুব কড়াকড়ি করেছিল? ওপেন স্পেস মানে কী? শুধু একটা সার্টিফিকেটে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে নিজেদের নাম লেখা থাকবে আর যে যার মত…? কিন্তু রুবি যদি একটু উদার হত, তাহলে কি ছেলে আজ এভাবে বাপকে ছাড়া মানুষ হত? ও কি মা হয়ে বাবার অভাব মেটাতে পারছে? কথাগুলো মাথায় ধাক্কা খেয়ে যায়, খেয়েই যায়…বারবার। যখন তখন, হঠাৎ হঠাৎ। উত্তর নেই ওর কাছে। তবে যে কথা ওর মাথাটাকে আজও আগুন করে দেয়… অপূর্বর ফোনের বান্ধবীরা; মেয়ে কলিগরা, স্টাফরা সেই প্রত্যন্ত সুন্দরবনে কোলনের গন্ধমাখা সব সময় ক্লিনশেভড, ব্র্যান্ডেড টি-শার্টের অপূর্বর কাছে যখন বিলিয়ে দিত নিজেদেরকে, ওদের কি একবারও মনে হত না, যে লোকটা নিজের স্ত্রীকে না জানিয়ে ওদের সাথে বিছানায় যায়, সে কখনই মেয়ে বলে কাউকেই সম্মান দেয় না। মেয়েদের মাংস কেনাই তার একমাত্র শখ! কী করে ওরা যেত? দুনিয়া জুড়ে অজস্র মেয়ে এমনভাবে যাচ্ছে, হাজার হাজার, লাখে লাখে। সর্বত্র রাস্তাঘাটে, মলে, বাজারে, স্টেশনে, টিভিতে, ফোনে শুধু তারই আয়োজন। মেয়েধরার ফাঁদ। বোকা পাখনা-গজানো উইপোকার মত মেয়েরা ঝাঁপ দিয়ে পড়ছে…এমনি এমনি ঝাঁপ দিচ্ছে? ওদেরও কি কোনো অসহায়তা নেই?

ডোর বেল বাজল। হারমোনিয়াম ছেড়ে উঠতে ইচ্ছা করছিল না রুবির। ভিক্টরকে ডাকল। দু-তিনবার ডাকার পর বাবু গেলেন দরজা খুলতে। আজ রবিবার। ছুটির দিন দুপুরে, ওর মোবাইল থেকে গেম খেলতে দেয় রুবি। ছেলের সব বন্ধুদের নিজের মোবাইল আছে। এখনও চায়নি, তবে ওর ইচ্ছে তো করে! সেটা রুবি বোঝে। আর ঘরে না হয় রুবি দেবে না কিন্তু যা বারণ হয়, তার দিকেই তো মন ছুটে যায়! তখন যার কাছ থেকে পাবে, যেখানে পাবে… তখন কি আর শুধু ভার্চুয়াল গেম খেলবে? একটা আইকনে ক্লিক করলেই তো নিষিদ্ধ জগতে! আচ্ছা, এত এই যে হিসাব আসে রুবির মাথায়, তাতেই কি অপূর্ব…? রুবি কি খুব কড়াকড়ি করেছিল? ওপেন স্পেস মানে কী? শুধু একটা সার্টিফিকেটে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে নিজেদের নাম লেখা থাকবে আর যে যার মত…? কিন্তু রুবি যদি একটু উদার হত, তাহলে কি ছেলে আজ এভাবে বাপকে ছাড়া মানুষ হত? ও কি মা হয়ে বাবার অভাব মেটাতে পারছে? কথাগুলো মাথায় ধাক্কা খেয়ে যায়, খেয়েই যায়…বারবার। যখন তখন, হঠাৎ হঠাৎ। উত্তর নেই ওর কাছে। তবে যে কথা ওর মাথাটাকে আজও আগুন করে দেয়… অপূর্বর ফোনের বান্ধবীরা; মেয়ে কলিগরা, স্টাফরা সেই প্রত্যন্ত সুন্দরবনে কোলনের গন্ধমাখা সব সময় ক্লিনশেভড, ব্র্যান্ডেড টি-শার্টের অপূর্বর কাছে যখন বিলিয়ে দিত নিজেদেরকে, ওদের কি একবারও মনে হত না, যে লোকটা নিজের স্ত্রীকে না জানিয়ে ওদের সাথে বিছানায় যায়, সে কখনই মেয়ে বলে কাউকেই সম্মান দেয় না। মেয়েদের মাংস কেনাই তার একমাত্র শখ! কী করে ওরা যেত? দুনিয়া জুড়ে অজস্র মেয়ে এমনভাবে যাচ্ছে, হাজার হাজার, লাখে লাখে। সর্বত্র রাস্তাঘাটে, মলে, বাজারে, স্টেশনে, টিভিতে, ফোনে শুধু তারই আয়োজন। মেয়েধরার ফাঁদ। বোকা পাখনা-গজানো উইপোকার মত মেয়েরা ঝাঁপ দিয়ে পড়ছে…এমনি এমনি ঝাঁপ দিচ্ছে? ওদেরও কি কোনো অসহায়তা নেই?

‘দিদি, রুবিদি…’

‘মা, ও মা, রাশিদিদি এসেছে। মা…’

জীবনে একটিবারই অপূর্বকে মারা থাপ্পড়ের আওয়াজ মিলিয়ে যাচ্ছে মাথার ভেতর… রাশি, এসেছে? এই দুপুরবেলায়, কেন?

‘কী রে রাশি? কী খবর? আবার কী হল? আয়, আমার কাছে এসে বস…’

‘মা…’

‘বুড়ো ছেলে, এতবড় হয়েও হিংসা! দিদিকে শুধু পাশেই বসাব না। আদরও করব। আয় তো মেয়ে, আমার কাছে আয়!’

রাশি পাশে এসে বসে ওকে জড়িয়ে ধরে রুবি।

‘আয় ভিক্টর, এবার তুই আমার কাছে আয়!’

‘মা, ধুস! আমি কিন্তু বড় হয়ে গেছি’। আমি যাচ্ছি পাশের ঘরে। একটা কথা বলছিলাম, তুমি তো শুনলে না!’

‘কী?’

‘বিকেলে শুভ্রনীলদের বাড়ি যাব?’

‘কেন?’

‘ওহ! তুমি জান না? ওর টেবিল টেনিস আছে। সুজয়, রন্টি সবাই আসবে, খেলব।’

‘না! বিকেলে তুমি আমার সঙ্গে যাবে। মনোজ-কলোনিতে মিটিং আছে। আমার সাথে গলা মেলাবে। দেখছ না, নতুন গানটা তুলছি!’

ভিক্টর আর কোনো কথা না বলে চলে গেল। ওর চোখদুটো কি নিভে গেল? কিন্তু এই যে এতবড় ঢেউ উঠেছে, একে না দেখলে, না বুঝলে, নিজের আসল সময়টাকে চিনবে কী করে ছেলেটা? বড়লোক বাবার ছেলে যেসব বন্ধুরা ওর আছে তাদের মত একচোখো পুরুষ হয়ে তো থাকলে চলবে না! নাহ! একটু কড়া হতেই হবে ওকে।

কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’

‘রুবিদি, যেত না হয় একটু খেলতে। ও তো ছোট।’

‘ছোট কী রে! ক্লাস নাইন। অ্যাডলেসেন্ট। বড় হচ্ছে। আফ্রিকার কত দেশে, এর একটু পরেই ভোটার হয়ে যায়।’

‘কিন্তু আমাদের কাছে তো ছোটই।’

‘ছোট, ছোট করেই তো মায়ের সর্বনাশ করে দিচ্ছে। বড় বড় ছেলেদের দোষ, ছোট বলে মায়েরা ঢাকে না! তুই ভাব, আজ যদি সব মায়েরা একসঙ্গে রান্নাবান্না বন্ধ করে, বলে যতক্ষণ না, কল্যাণী-মা-এর খুনিদের ধরে আনছ, তার বিচার হচ্ছে, শাস্তি হচ্ছে, এই… এই যে মেয়েজাত তাদের সম্মানের চোখে দেখা হচ্ছে, ততক্ষণ আমরা কেউ আর রান্না করব না! তাহলে? কী হবে ভাবতে পারিস?’

‘তা হয়ত হচ্ছে না। কিন্তু কমই বা হচ্ছে কোথায়? এই যে তুমি, তুমি যা করছ? তা দেখেই তো আমরা সাহস পাচ্ছি!’

‘ধুর পাগলি! আমি কী করলাম। করছিস তো তুই। মার খেলি, পুলিসের ভয়!’

‘না দিদি! আমি কে? একটা দিদি, তার বাচ্চা কোলে এসেছিল। তার বাচ্চাটাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের চাকার নিচে শুইয়ে দিয়েছিল। বাচ্চাটার মাথায় চোট লেগেছে। স্ক্যান করেছে, হাসপাতালে ভর্তি। ওই দিদিটাকেও ডেকেছে গো! বারবার ফোন করছে। যেখানে যাচ্ছে পেছনে পেছনে কাউন্সিলারের ছেলেরা! দিদিটার বর। বাইক-ট্যাক্সি চালায়। ওকে লাইনে খাটতে দিচ্ছে না। বরটা বলছে, এভাবে চললে বাচ্চাটাকে রেখে, দিদিকে ছেড়ে দেবে!’

‘কী বলছিস?’

‘আরও আছে। থাক!’

‘থাকবে কেন? তুই সবার একটা করে ছোট্ট ভিডিও করে দে। সবকটা গ্রুপে দিয়ে দেব। তারপর টিভিতেও কথা বলব… এভাবে চলতে পারে?’

‘না, দিদি। ওরা পারবে না! ওদের বাঁচতে হবে। সংসার, রোজগার বাঁচাতে হবে। জেলে গেলে চলবে না। ওরা হয়ত মনে মনে চাইছে, আরও আরও অনেক অনেক লোক কল্যাণী-মার জন্য রাস্তায় বেরোক। কিন্তু আর নিজেরা যাবে না গো! আমাদের অভিজিৎদা চুপ করে গেছে। ওকে তো একগাদা কেস দিয়ে রেখেছে! ও কিন্তু কোনো পলিটিক্স করে না…’

‘এ কী রে! তোর কি শরীর খারাপ লাগছে! চোখ-মুখ কুঁচকে দুহাতে পেট চেপে ধরলি কেন?’

‘তারপর থেকেই হচ্ছে, জান! হঠাৎ হঠাৎ প্রচণ্ড বমি উঠে আসতে চায়। দুহাতে পেট চেপে ধরে আটকাই!’

‘দাঁড়া, দাঁড়া তোকে একটু জল দি।’

‘না, উঠতে হবে না, অভ্যেস হয়ে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে কথা বলতে থাকলে ঠিক হয়ে যায়। তুমি বল কী গান গাইছিলে?’

‘একটা নতুন গান বেঁধেছি রে! সেইটাই ভাল করে তুলে নিচ্ছিলাম। কিন্তু তুই হঠাৎ করে এই ভরদুপুরে?’

রাশি একটু দম নিয়ে নিল। তারপর থেমে থেমে বলতে শুরু করল,

‘দুপুরে না এসে উপায় নেই যে! পাড়া থেকে বেরোতে দিচ্ছে না!’

‘তার মানে?’

‘জামাত বসে ছিল পাড়ায়। আমার বেরোনো বারণ। ঘরের মেয়েরা ঘরে থাকবে। মিটিং, মিছিলে যাবে কেন? নাহলে…থাক সেসব কথা! আম্মা, তো সব সময় গুনাহ গুনাহ করে ভয় পাচ্ছে!’

‘তাহলে যে তুই বললি, মুশকিল আসান এসেছিল, তোদের বাড়িতে?’

‘সে তো রাতের বেলায়! তারপর লোডশেডিং হল আর রকেট বাজির মত হুস করে মিলিয়ে গেল। পাড়ার কেউ জানেই না। আর সেও তো আমায় বলেনি, তোমাদের সাথে মিশে যেতে! তুমি তো বলেছিলে, আব্বা-আম্মাকে দুঃখ না দিতে। রাগের মাথায় কোনো ভুল না করতে। করছি না। নাহলে যারা ফতোয়া দিতে বাড়িতে এসেছিল, তাদের আমি ছাড়তাম না!’

‘তাহলে? তোকে যে ডাকছে, সে নিয়ে তোর পাড়ার লোকেরা কী বলছে?’

‘গুনাহ্‌ করলে তো ফল পেতেই হবে দিদি!’

‘এখন তবে কী করা যায়!’

রুবি থেমে যায়, তারপর আবার বলে ওঠে,

‘কিন্তু এলি কেন?’

‘হ্যাঁ সেটাই বলি। বেশিক্ষণ বসতে পারব না। আমায় চলে যেতে হবে। পিয়ার মা কাকিমা পাঠাল তোমার কাছে। ওদের উকিল অনেক টাকা চাইছে। তুমি কম পয়সায় অন্য উকিল দেখ, টাকা কাকিমা দেবে।’

‘যা লাগবে দেবে?’

‘দেবে তো মনে হয়! পিয়াকেও তো ডেকেছে! আচ্ছা আমি যাই!’

‘এইটুকু কথা বলতে এতদূর এলি? ফোন করতে পারতিস!’

‘কী করব? আম্মা ফোন নিয়ে নিয়েছে। দুপুরে যেই ঘুমিয়ে পড়েছে। চুপিচুপি বেড়িয়েছি। ছোট বোনটা জেগেছিল, বলেছি প্যাড কিনতে যাচ্ছি। আর দেরি করলে, মুশকিল হয়ে যাবে দিদি। আমি যাই!’

‘যা, যা কিন্তু দরকার পড়লে তোর সঙ্গে যোগাযোগ করব কী করে?’

‘সে আমি তোমায় ফোন করে নেব। একটু মাকে ম্যানেজ করেনি! কাকিমার ফোনটাও কিছুতেই ধরতে দিচ্ছিল না। অনেক বুঝিয়েছি, জেল হয়ে গেলে তো চাকরিটা হবে না। আর কে আমার বেল করাবে? আব্বুর দিকে তাকানো যাচ্ছে না দিদি! ভাতের থালায় ভাত পরে থাকছে… ও আচ্ছা! কাকিমার নাম্বারটাও তোমায় মেসেজ করে দেব। যাই…’

রাশি বেরিয়ে যায়। উঠে দরজাটা বন্ধ করতে যায় রুবি। নজর পরে ভিক্টরের ঘরের দিকে। ওর ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে ভিক্টর। তার মানে এতক্ষণ সবকথাই শুনেছে। ভিক্টরের চোখের দিকে তাকায় রুবি। অনেক প্রশ্ন নিয়ে ছেলেটা তাকিয়ে আছে। নাহ! এ অপূর্বর চোখ না, হতেই পারে না!

আর হারমোনিয়ামের বেলো টানতে ইচ্ছে করে না রুবির। অনেকগুলো প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল মেয়েটা। কল্যাণী-মায়ের সঙ্গে সঙ্গে রাশিকে, রাশিদের নিয়েও যদি একটা আন্দোলন নিদেনপক্ষে একটা মঞ্চও যদি করা যেত! তাহলে এইভাবে যাদের কষ্টের কথা কেউ জানছে না, তাদের কথা বলা যেত। তবে এখন কী করা যেতে পারে? উকিল? সে তো দেখেছে রুবি? তবুও দেখতে হবে। কিন্তু তার আগে… ফোনবুক খোলে ও। স্কুলের বন্ধু দীপশিখার নাম্বার বের করে। দীপশিখা, একটা মাঝারি চ্যানেলের নিউজ রিডার। আজকাল অবশ্য আর রিডার বলে না। এখন সবাই নিউজ-অ্যাঙ্কর। ওকে অবশ্য প্রাইমটাইমে দেওয়া হয় না। দুপুরে, সকালে আর বেশি রাতের দিকেই ওকে দেখেছে রুবি। চ্যানলের ছবির কোয়ালিটিও ভাল না। কেমন যেন ম্যাড়মেড়ে। শুধু দীপশিখাকে দেখার জন্যই মাঝমাঝে ঐ চ্যানেলটা খোলে। রিং হয়ে যাচ্ছে, দীপশিখা ধরছে না। রুবি রেখে দেয় ফোনটা। নাহ্‌… ভাল লাগছে না! ফোন করবে না। একটু শুয়ে নেবে। শুতেও তো ইচ্ছে করছে না! তাহলে কি হারমোনিয়াম নিয়ে বসবে? নাহ… গান গাইতেই ইচ্ছে করছে না! জানালা ভেজিয়ে দিয়ে, ভেতরের দিকের দরজাটা বন্ধ করে দেয়। ভিক্টরকেও দেখার দরকার নেই, যা ইচ্ছে করে করুক ছেলেটা।

অন্ধকার ঘরে যতটুকু দিনের আলো এসেছে তাতে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় নিজের মুখের আকারটুকুই শুধু ভাল করে দেখতে পায় রুবি। কিন্তু চোখগুলো বেশ শুকনো না? তাহলে কি আবার মুড ঘুরে যাচ্ছে? তাই তো! ও যে ঠিক করে নিয়েছিল, এই নতুন গানটা কেমন রেসপন্স দেয় বুঝবে। তারপর সুযোগ বুঝে রণজয়কে ধরে রেকর্ড করে নিয়ে টিউব-চ্যানেলে দিতে পারলে…কত গান এইভাবে হিট করলে, এই কমাসে! না, না, কন্ট্রোল করতে হবে। ভিক্টর একদিন বড় হয়ে যাবে, চামড়া কুঁচকে গেলে অভিনয়ে কেউ ডাকবে না! কিন্তু গান…গানই থাকবে রুবির জীবনে। ও গান নিয়েই তো বাঁচতে চায়। মুখের ভেতরে চেনা বিদ্ঘুটে স্বাদটা চলে এসেছে। তবুও রুবি উঠে এসে সুইচবোর্ডে হাত ছুঁইয়ে আলো জ্বালে। সেই সময়েই ফোনটা বেজে ওঠে। দীপশিখা ফোন করেছে,

‘রুবি তোকে আজই ফোন করতাম। ভালই হয়েছে রে, তুই করেছিলিস। টয়লেটে ছিলাম, তখন ধরতে পারিনি। শোন, এরা এবার প্রাইমটাইম দিচ্ছে আমায়। নতুন শো…আজকের হালৎ। পুরো দেড় ঘণ্টা…’

রুবির রেসপন্স শোনার কোনো ধৈর্য নেই মেয়েটার। বলেই চলছে। রুবির ইচ্ছে করছে না শুনতে। তবুও রুবিকে শুনতেই হবে, ও হারবে না। এইভাবে আর কিছুক্ষণ চললে ভয়ঙ্কর মাথার যন্ত্রণা শুরু হবে। হোক!

‘ভাবছি, কয়েকদিনের মধ্যেই তোকে ডাকব। প্রোডিউসারকে বলে দিয়েছি। তুই বলতে পারবি না? পারবি, পারবি, আমি জানি! এত জায়গায় যাচ্ছিস, বাইট দিচ্ছিস, দেখছি তো! এই প্রোগ্রামটা না! এই মুভমেন্টটাকে আরও লার্জার করার জন্য প্রেজেন্ট করা হচ্ছে। চ্যানেল চাইছে  নোন ফেসগুলো না দেখিয়ে একেবারে গ্রাউন্ডে যারা আছে, তাদের নিয়ে একেবারে দেড় ঘণ্টা! কী! এক্সাইটিং না? তোকে আসতে হবে, বুঝলি, গাড়ি পাঠাব আমরা। আর হ্যাঁ, কোনো পেমেন্ট নেই কিন্তু! তবে তোর যা মাইলেজ বাড়বে না!’

‘দীপা, একটা অন্য কথা ছিল।’

‘বল, বল…তবে কুইক! রিসার্চ রুমে যেতে হবে তো!’

মাথা যন্ত্রণায় রুবির অবসন্ন লাগে। তবুও বলে,

‘আমার পরিচিত কিছু মেয়েকে, কয়েকদিন আগে রাত-মিছিলের সময় খুব মেরেছে রে! তারপর উলটে এখন ওদেরই থানায় ডাকছে জেরার জন্য। খুব বিচ্ছিরি ধারায় কেস দেওয়া হয়েছে রে…’

‘দাঁড়া, দাঁড়া জানি তো! ফোনে ভিডিও দেখেছি। না রে, ভেরি সরি! আমাদের অথরিটি ডেমোক্রেটিক ভ্যালুকে নারচার করে, মারামারি করে মুভমেন্ট জেতা যায় না।’

‘কিন্তু ওরা তো মার খেয়েছে! ওরা কি মারামারি করার মত মানুষ?’

‘ওদের পেছনে তো কোনো পার্টি নেই! এন জি ও নেই। এসব নিয়ে খবর করতে গেলে বহুৎ প্রবলেম রে। আমাদের এখানে আগেই আলোচনা হয়েছে, এইসব স্ক্যাটার্ড লোকজন। যে যখন পারছে যেখানে ভোরবেলা, রাতদুপুরে একটা মিছিল করে ফেলছে, এগুলোকে সাপোর্ট করা যাবে না। আরে! অ্যাডমিনিস্ট্রেশান না চললে, তোর, আমার কাজকম্ম চলবে? ল-লেসনেস, ডেমোক্রেসিকে স্ম্যাশ করে দেবে বেবি! রাখব রে এইবার। তুই কিন্তু নিজেকে রেডি কর।’

‘আরে এক মিনিট। যেজন্য তোকে ফোন করছিলাম, তোর চেনাজানা ভাল ক্রিমিনাল ল-ইয়ার আছে? তোরা তো মিডিয়ায় আছিস? ঐ মেয়েগুলোর মধ্যে দুজনের জন্য। পয়সা বেশি দিতে পারবে না। আছে কেউ সিম্প্যাথেটিক…’

‘হুঁ… সিম্প্যাথেটিক? ভেরি টাফ! দেখি, জানাব। আর শোন, তুই কিন্তু বেশ কালারফুল শাড়ি, মানে তুই তো শাড়িই পরিস। বাকি… এখানে আমি নিজে একটা সেক্সি লুকের মেকাপ করিয়ে নেব। প্রোডিউসার না হলে কিছুতেই রাজি হবে না, রে…’

‘নন্দন রাহা, তোর প্রোডিউসার না?’

‘হ্যাঁ’

‘সেই উওম্যানাইজার…’

‘তাতে তোর কী? তোর কত ফলোয়ার বাড়িয়ে দেব দেখিস! এবার রাখলাম!’

রুবির মনে পড়ে, মাস ছয়েক নাকি বছরখানেক… প্রীতিকণা বলেছিল, দীপশিখার সেপারেশান কেস চলছে। ফেমাস নন্দন রাহা ঢুকে পড়েছে মাঝখানে।


কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন


এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।

মন্তব্য করুন

লেখক

জন্ম কলকাতায়, ১৯৭১ সালে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলায় এম. এ। খবরের কাগজ বিক্রি থেকে মার্কেট-রিসার্চ ইত্যাদি নানারকম পেশা পেরিয়ে স্কুলশিক্ষকতায় স্থিতু। শিক্ষকতার প্রথম ষোলো বছর ইছামতীর তীরে বসিরহাটে বসবাস। সেই অভিজ্ঞতাই গল্প লেখার প্ররোচক। কবিতা, প্রবন্ধ দিয়ে লেখালেখির সূত্রপাত হলেও গল্পকারই প্রধান পরিচিতি। প্রকাশিত বই: উন্মেষ গল্পগ্রন্থমালা-২ (কলকাতা), চুপিকথা (ঢাকা)।

অন্যান্য লেখা

দেখতে পারেন