preloader
বাংলা বইয়ের e-ভুবন
Menu Categories Search Cart 0
Menu
Cart

Total 0 Items

☹ Your cart is empty

Sub Total:

$0

₹0

বিভাগ
জামিন: পর্ব ৭
ধারাবাহিক

জামিন: পর্ব ৭

16 Mar, 2025.

এর আগে কি কোনোদিন মেয়েদের ওপর অত্যাচার হয়নি? ছমাস, তিনমাসের বাচ্চাদেরকেও কুকুর-শিয়ালগুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়েছে। তাহলে কী এমন হল এবার? পিয়ার মত আদরে ঘরে থাকা মেয়ে, যে জানে কলেজ শেষ হয়ে গেলেই ভাল ব্যববসায়ী ছেলে দেখে ওকে বিয়ে দেওয়া হবে, সেই মেয়ে, রাশির মত চাকরির প্যানেলে থাকা মেয়ে যে জানে পুলিস ভেরিফিকেশনে ভুল রিপোর্ট হলে চাকরিটা হবে না, আর চাকরিটা পেলে ওদের মত গরিবরা বেঁচে যাবে!... এইসব মেয়েরা, আরও কত কত বৌ, বুড়ি, নৌকরিওয়ালা, বিনা নৌকরিকা…সবাই মিলে রাস্তায় নেমে গেল দিনে হোক, রাতে হোক, ... বিচার চাইতে। আইনে আছে এমন অত্যাচার হলে নাম জানানো যাবে না তার, তাই তো বুড়িটার একটা নামই দিয়ে দিল টিভির বড় চ্যানেলে…কল্যাণী-মা। অন্য চ্যানেলগুলো দু-একটা নাম দিয়েছিল। তবে কল্যাণী-মা নামটাই বারবার টিভিতে বলা, আর লোকে দেখার জন্য আজ মুখেমুখে। সেই কল্যাণী-মার জন্য এই মেয়েগুলো, শুধু মেয়েরাই বা কেন, জোয়ান-মদ্দ, বুড়ো, ব্যাটাছেলেরাও তো রাস্তায় নামছে। ওরা ছেলে-মেয়ে সবাই মিছিল করছে, মশাল জ্বালাচ্ছে, গান গাইছে, কবিতা বলছে, অনশন করছে…আবার পিয়াদের মত, মহুয়াদের মত, রাশিদের মত মার খাচ্ছে, জেলে যাচ্ছে…

দেবিকাদের দোকানের সামনে জিপগাড়ির মত সাদারঙের একটা বড় ঢাউস গাড়ি এসে দাঁড়াল। দু-চারজন খদ্দের ছিল, তারা দোকানের মেঝে থেকে লাফ দিয়ে নামল রাস্তায়। আরও কিছু লোক, বাইক, গাড়ি জমে গেল দোকানের সামনে। গাড়ির দরজা খুলে একটা মোটা মহিলা আর জনা তিনেক গাট্টাগোট্টা ছেলের সাথে নেমে এল কাউন্সিলর গোপালিদি। কারো দিকে না তাকিয়ে পাশের ছোট গ্রিলের গেটটা খুলে উঠোন পেরিয়ে সিনেমার নেতাদের মত জোর পায়ে দোতলার দিকে দলবল নিয়ে চলে গেল গোপালিদি। মোটা, কালোমত মহিলাকে খুব চেনা লাগছিল দেবিকার। কী করবে দেবিকা? দোকান বন্ধ করে উপরে চলে যাবে? খদ্দেরগুলো দোকানের সামনের রাস্তায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে। কাউন্সিলারের গাড়ির পাশ দিয়ে সাইকেল, বাইকগুলো যাওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু ট্যাক্সি অটো কিছুই যেতেই পারছে না। ভিড়টা বাড়ছে। বহুত তাজ্জব! কেউ কিছুই বলছে না। পনেরো ফুটের রাস্তা দুদিকের কাঁচা ড্রেন খেয়ে, কোথাও দশ, কোথাও বারো ফুট। কোনো গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়লে, পেছনের জমাট থেকে শুরু হয়ে যায় গালাগাল, কখনও কখনও হাতাহাতি। অথচ আজ যেন মড়ার বাড়ির লোকজন জুটেছে এখানে। কারও মুখে আওয়াজ নেই। দেবিকা খদ্দেরদের ডাক দেয়। দুজনের মাল গোছানো হয়ে গেছে, এখনও টাকা দেয়নি। কী গোলমাল!

পিয়ার বাপ, ফোন করেছে দেবিকাকে। যেতে হবে… যেতে তো হবেই! কিন্তু কাউন্সিলারকে দেখেই দেবিকার কপালের দুপাশে বিচ্ছিরি সরদর্দ হচ্ছে। ইতনা সাহস? সব কো পাতা হ্যায়… কৌন কৌন লোগোঁ নে পিয়াকে, রাশিকে, মহুয়াদের মেরেছে। ফির পুলিস কি প্রেসার! আর এখন একেবারে ওদের বাড়িতে? বো অওরাত হো কর ক্যায়সে ইয়ে সব?… একটা বুড়িকে দিনদাহারে, এক ট্রেনভর্তি লোকের সামনে ঐভাবে?… নিহত্তা মেয়েগুলোকে কিতনা বেরেহমি সে পিট দিয়ে… ভাগোয়ান, কেউ মেয়ে হয়ে প্যায়দা হয়ে কী করে মেয়েদের কষ্ট ভুলতে পারে? দেবিকা যাচ্ছে উপরে। যা ভেবে আসুক ওরা, এসেছে যখন একবার তো… জরুর পুছেঙ্গে দেবিকা… আপলোগ ক্যায়সে কর সাকতে হ্যায় ইয়ে সব… ফির, যা হবে দেখা যাবে! ক্যাশব্যাক্সে তালা দিয়ে চাবিটা আঁচলে বেঁধে নেয় দেবিকা।থাকুক দুকান খোলা। সামনে এত লোক, কেউ কিছু করার সাহস পাবে না। এক নজরে দেখে নিতে যায় সামনেটা… বাঁদিকের কোনায় কাউন্সিলারের গাড়ির ড্রাইভার, সিটে বসে আছে, কাচের পেছনে তার চোখের পাতা পড়ছে না। দেবিকা বাঁদিকের বুকের কাপড় ঠিক করে নেয়। কত লোকের ওপর সে রাগ করবে?

শাশুড়ির ঘর মানে সিঁড়ি দিয়ে উঠে বড় খোলা ঘরটা যেটাকে পিয়া বলে হল সেটাতেই শাশুড়ির বিছানার পাশে, তার দিকে মুখ করে গোপালিদি বসে আছে। চেয়ারটা নিশ্চই, পিয়ার ঘর থেকে ওর বাবা এনে দিয়েছে। কাউন্সিলারের সাঙ্গোপাঙ্গরা তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। পিয়ার বাপও বসেনি, কাউন্সিলারের ডানদিকে দাঁড়িয়ে আছে, একটু ঝুঁকে। দরকার পড়লেই হাতজোড় করে প্রণাম করতে পারবে, বুকের কাছে হাতদুটো এমনভাবে জড়ো করে রাখা। ধাপ ভেঙে উঠতে উঠতে দেবিকা শুনতে পেল, শাশুড়ি বলছে,

‘মেরি পিয়া একেবারে নাদান আছে বেটা, ওর কোনো দোষ নেই। ওর ডাইন দোস্তগুলো ডেকে নিয়ে যায়। আমরা খুব বকে দিয়েছি। এইসা জুলুম না চলবে ঘর মেঁ! যাকে যা ইচ্ছা কর, আমাদের লেড়কিকে কুছ মাত কহনা!’

‘দিদি, আমি কথা দিচ্ছি। আমাদের কেউ এসবে আর কোনদিন থাকবে না। আর আপনি, কষ্ট করে আসতে গেলেন কেন? একটা ফুন করলেই, আমি চলে যেতাম!’

পিয়ার বাবা কি কেঁদে ফেলবে? দেবিকা দেখে পিয়ার বাপের চোখদুটো লাল। রাস্তার কলে ভর্তি বালতির জল… উভার যায়েঙ্গে ক্যা? পিয়ার বাপ কাঁদতে পারে? কী আশ্চর্য!

‘এসব বলে লাভ নেই। খবর আছে! অভিজিৎ-এর মালগুলো ফোনে ফোনে ভিডিও ছড়িয়েছে। মিডিয়া-উকিল-তারপরে নাকি হাইকোর্ট! কিন্তু আমাদের এলাকায়, ওয়ার্ডে, গোপালিদি থাকতে এইসব মিথ্যে অপপ্রচার চলবে না। সব সাইজ করে…’

মেরুন টি-শার্ট, গাট্টাগোট্টা হাতে চওড়া সোনার চেন-ব্রেসলেট, কপালের উপরের চুলে একটুখানি চকচকে রুপোলি রঙ থেমে নিল তারপর দেবিকার দিকে ঘুরল, ডানদিকের মোটা ভুরুটা কপালে তুলে বলল,

‘সাইজ হয়ে যাবে।’

ঘরের সবাই যেন এবার বুঝতে পারল, দেবিকা এসেছে।

‘দিদি… ম্যাডাম, ইনি আমার ইস্তিরি… পিয়ার মাম্মি!’

পিয়ার বাপ ওকে দেখানোর আগেই দেবিকা চলে এসেছিল, কাউন্সিলারের বাঁদিকে। পিয়ার বাপ বলার পরে হাতজোড় করে নমস্কার করল। কাউন্সিলার কিছুই বলল না। কিন্তু শাশুড়ি বলে উঠল,

‘আমরা সবাই আপনাকেই ভোট দি দিদি… আমার পোতিকে ছেড়ে দিন! অই মাঁঝলি বহু, যাও… চা লিয়ে এস! আরে বুরবাক তু কিঁউ এখনও দাঁড়িয়ে আছিস। যা, মিস্টি লিয়ে আয়। আর ঘর মেঁ ঘি হ্যায় না, আপনি গাই কা, যাবার সময় দিদির গাড়িতে তুলে দিবি।’

চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল গোপালিদি। বড় শান্ত, মিষ্টি গলার আওয়াজ। পাড়ার মিটিং-এর মত না। কিন্তু পুরো ঘরটা কেঁপে উঠল, ‘আপনাদের ঘি-শক্কর, আপনারা রেখে দিন। বিক্রি করে যা পাবেন, কাজে লাগবে। সময় নেই। উঠব। তবে মেয়েসন্তান যাদের থাকে, তাদের এত বাড়াবাড়ি ভাল না। পাড়ায় ছেলেরা আছে সবসময় আপনাদের পাশে!’

দেবিকার দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে সেই একইভাবে গটগট করে গোপালিদি তার ছেলেদের নিয়ে নেমে যাচ্ছিল। পিয়ার বাপ, মাথা চুলকাতে চুলকাতে… একটু চা খেলেন না, একটু মিস্টি খেলেন না…বলতে বলতে ওদের সঙ্গে নামতে লাগল।

‘দিদি…আমার পোতিকে ছাড়িয়ে দিবেন…’

শাশুড়ি সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে ডুকরে উঠল। দেবিকা ডানদিকের খোলা জানালার দিকে এগিয়ে গেল। উঠোন পেরিয়ে যাচ্ছে কাউন্সিলার। গোয়ালে গরুটা ডেকে উঠল। মুখ তুলল গোপালিদি। গ্রিলের দরজা খুলে দাঁড়াল। তারপর দুইহাত তুলে নমস্কারের ভঙ্গিমায় তুলে ধরল। সামনের ভিড় আর জ্যাম পুরো চুপ।

কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’

‘আমি থাকতে এপাড়ায়, এই ওয়ার্ডে মেয়েদের ওপর কোনো টর্চার চলবে না। আপনারা লক্ষ রাখুন, আমরা সজাগ আছি, ছেলেরা সজাগ আছে।’

গাড়িতে উঠে পড়ল কাউন্সিলার। এতক্ষণ যে মরা শুঁয়োপোকার মত লম্বা ভিড়টা নড়ছিল না, সেটা নড়চড়ে উঠল। দেবিকার বুকের ভেতর থেকে লম্বা একটা শ্বাস বেরিয়ে এল। দুঃখের না, স্বস্তির! পিয়ার মর্নিং কলেজ। বাড়িতে থাকলে, নিশ্চই শান্তশিষ্ট মেয়েটা আজ আর চুপ থাকত না। তারপরেই দেবিকার মাথার মধ্যে থেঁতলে যাওয়া, দুচোখে কালশিটে পড়া একটা বুড়িমুখের ছবি ভেসে উঠল। না, এমন কোন ছবিই সে দেখেনি, টিভিতে, কোত্থাও… কিন্তু সেই মুখটা? হয়ত এমনই হয়ে গিয়েছিল! জানালার বাইরে রাস্তায় ঐ যে আগুপিছু করে যেতে চাইছে বাইক, রিক্সা, অটোর পুরুষগুলো, ওদের মাথায় কি এমন ছবি ভেসে উঠছে? ওঠে না? তাই কি? তাহলে ওদের সবার মুখটা কেন জ্যান্ত মানুষের মত লাগছে না? আজ সকালেই কাসেম এসেছিল, মার্কেটে বেরোনোর মুখে। কয়েক মিনিট দাঁড়াল। বাবা খবর দিয়েছে। সেই উকিলও টাকা চাইছে। সাইকেলের প্যাডেলের চাপ দিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছিল কাসেম।

‘দুনিয়াটা এমন অচেনা, তিতকুটে লাগছে কেন দেবী? এর আগে কতকিছু হয়েছে। এমন তো লাগেনি? জানোয়ারগুলো ধরা পড়বে? পড়বে তো? মনে হয়… মেয়েগুলোকে নিয়ে কোথাও চলে যাই।’

দেবিকা চুপ করেছিল। তার একটু পরে রাশির ফোন এসেছিল,

‘কাকিমা, জান! রুবিদি…’

বিয়ের আগে বাবাদের চটকলে কিছু পলিটিক্স দেখেছে দেবিকা। পলিটিক্সে মারামারি, গুন্ডামি, বেইমানি থাকবেই সে জানে। কিন্তু বিয়ের পর, এই দোকান আর সংসার সামলাতে সামলাতে সেই ব্যারাকের জীবনটা যেন মনে হয়, আগের জন্মের। বেশ চলছিল সবকিছু… শাশুড়ির তিখা তিখা গালাগাল, পিয়ার বাপের কিপ্টেমি, গা-জ্বালানো কথাবার্তা এইসব ছাড়া বাকিটা ভালই। হঠাৎ করে কী যে হল! ঐ যে, বুজুর্গ ভদ্রমহিলা ট্রেনে উঠলেন আর তাকে জানোয়ারগুলো… সেই খবরটা কদিন পরে বাইরে এল। আর তারপর থেকেই কাসেমদের মত দেবিকারও যেন জিভ সমেত গোটা মুখটা জুড়ে একটা কড়ওয়া স্বাদ। আর তারপরেই তো… পিয়া, রাশিরা বেরিয়ে পড়ল…

এর আগে কি কোনোদিন মেয়েদের ওপর অত্যাচার হয়নি? ছমাস, তিনমাসের বাচ্চাদেরকেও কুকুর-শিয়ালগুলো ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়েছে। তাহলে কী এমন হল এবার? পিয়ার মত আদরে ঘরে থাকা মেয়ে, যে জানে কলেজ শেষ হয়ে গেলেই ভাল ব্যববসায়ী ছেলে দেখে ওকে বিয়ে দেওয়া হবে, সেই মেয়ে, রাশির মত চাকরির প্যানেলে থাকা মেয়ে যে জানে পুলিস ভেরিফিকেশনে ভুল রিপোর্ট হলে চাকরিটা হবে না, আর চাকরিটা পেলে ওদের মত গরিবরা বেঁচে যাবে!... এইসব মেয়েরা, আরও কত কত বৌ, বুড়ি, নৌকরিওয়ালা, বিনা নৌকরিকা…সবাই মিলে রাস্তায় নেমে গেল দিনে হোক, রাতে হোক, ... বিচার চাইতে। আইনে আছে এমন অত্যাচার হলে নাম জানানো যাবে না তার, তাই তো বুড়িটার একটা নামই দিয়ে দিল টিভির বড় চ্যানেলে…কল্যাণী-মা। অন্য চ্যানেলগুলো দু-একটা নাম দিয়েছিল। তবে কল্যাণী-মা নামটাই বারবার টিভিতে বলা, আর লোকে দেখার জন্য আজ মুখেমুখে। সেই কল্যাণী-মার জন্য এই মেয়েগুলো, শুধু মেয়েরাই বা কেন, জোয়ান-মদ্দ, বুড়ো, ব্যাটাছেলেরাও তো রাস্তায় নামছে। ওরা ছেলে-মেয়ে সবাই মিছিল করছে, মশাল জ্বালাচ্ছে, গান গাইছে, কবিতা বলছে, অনশন করছে…আবার পিয়াদের মত, মহুয়াদের মত, রাশিদের মত মার খাচ্ছে, জেলে যাচ্ছে…

জেলে? এ বাবা কী অমঙ্গলের কথা বলছে, ভাবছে দেবিকা? না, না…কাউন্সিলারের ছেলেরা তো বলেছে, থানা থেকে পিয়াকে আর ডাকবেই না! কিন্তু রাশি? ওর কী হবে…ওহ ফের রাশির নাম? একটু আগে ভাত খেয়ে হাত ধুতে ধুতে, বেসিনের গোড়ায় দাঁড়িয়ে পিয়ার বাপ খুল্লমখুল্লা বলে দিল,

‘আগে ভি বোলে তুমকো। দেখো বো কাসেম কো লেকে য্যায়সে ফিল্মি কাহিনি তুমহারে মন মে হ্যায় , উসকো রাখ ঔর না রাক্ষো, তুমহারি ইচ্ছা। লেকিন… রাশিকো তুম ছোড় হি দো। ওহ লোগ বোলা, এক-দো মুরগি লাগেগি উনকো!’

‘মুরগি?’

‘নেহি তো ক্যা? উনহে পরশাসন চালানা হ্যায় না। সব রাস্তে পর উতার যাও তো দেশ ক্যায়সে চলেগি? অ্যায়সে তো, বোহ্‌ লোগ যো সিমাহ পার সে, বিলকুল খাড়া হ্যায় কব ইয়ে দেশ কো দখল কর লেঙ্গে, ঔর তুমহারা কাসেম যায়সা যো অন্দর মে তিশ-চল্লিশ কোরোড় হ্যায় ওহ সব ভি জুড় যায়েঙ্গে… আব তো এক বুঢঢি আওরাত কে লিয়ে সব মগরমাছ কি আসুঁ বাহা রাহি হো। তব না! ঘর মে ঘুসকে বাচ্চি, বুঢ়ি আওরাত সব কো খা লেঙ্গে…সব কা ধরম নাশ কর দেঙ্গে!’

‘আরে কাহাঁ সে কাহাঁ চলে যাতে হো তুম?’

‘নেহি, ম্যায় সহি জায়গা পে হুঁ। আগার জিন্দা রহনা হ্যায়, সহি-সালামত রহনা হ্যায়, তো রাশি কো ভুল যাও…বোহ্‌ লোগ, রাশি কো পাকড়েঙ্গে। তিশ হাজার মে বাত পাক্কি হুয়ি, পিয়া কো নেহি পাকড়েঙ্গে!’

‘ক্যা, কহে রহে হো তুম? তুম তো ইনলোগোঁ কো ভোট ভি নেহি দেতে হো! এরা নাকি আমাদের রাজ্যে কাসেমদের বাঁচায়, রাশিদের বাঁচায়! তাহলে ওরা পিয়াকে ছেড়ে রাশিকে বাঁচাবে?’

‘হাঁ, বাঁচাবে। ইয়ে সব সেন্ট্রাল-স্টেট পলিটিক্স কা খেল। তোমাদের চটকলের ক্যাজুয়াল লেবার আর বস্তাচুরির রাজনীতি না। তুম নেহি সমঝোগি। ওরা রাশিকে ধরবে, অভিজিৎকে ধরবে, মহুয়াকেও ধরতে পারে। লেকিন আপনে লেড়কি কে লিয়ে, মেরা লেড়কি, আমার নিজের মেয়ে…তাকে বাঁচাব না?’

‘তা বলে ঘুষ?’

‘একে ঘুষ বলে না, ইয়ে হামারা বিনিয়োগ…আরে পিয়া কে লিয়ে হি মেরা সবকুছ হ্যায় না? তুম ঔর রাশি রাশি মাত করো…ওকে জেলে যেতেই হবে।’

সেই জেল! ঘরের দেয়াল, ছাদ, মশারি সবকিছু মিলিয়ে অন্ধকার পিষে মারতে এগিয়ে আসছে দেবিকাকে। পিয়ার একটা যমজ বোন ছিল। তিনদিন পরে মারা গেল। দেবিকার এক্লমেসিয়া হয়েছিল। সেই বোনটাই কি রাশির মধ্যে ঘুমিয়ে আছে? তাই কি ছোটবেলা থেকে রাশির জন্য দেবিকার এত মায়া? সেইজন্যই কি দেবিকার মনের মধ্যে পিয়ার আগে রাশির জামিনের কথা ঘুরেফিরে বারবার আসছে? হতে পারে… পিয়ার বাপের নাকডাকার আওয়াজ বাড়ছে। অন্যদিন ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে দেবিকা। আজ পারছে না… এসির হাওয়াতেও ঘাম হচ্ছে ওর… শুধু রাশি কেন, এত এত মেয়েরা রাস্তায় নেমে এসেছে তারা কি ওর মেয়ে না? ও কি তাদের মা… না? একটা অচেনা বুড়ি তাকে সবাই মিলে মা বলছে, আর দেবিকা কেন এই মেয়েদের নিজের মেয়ে ভাবতে পারে না? তাই কি রাশি ওর মেয়ে না? কিন্তু কোথায় টাকা পাবে রাশির জন্য… ও যে রাশিকে বলল,

‘ভাবিস না, যা শুনেছি তোর কাছে, রুবিদি কারুর ধমকি তে ভয় পাওয়ার মেয়ে না। আমরাও পাব না… পিয়ার যা হবে, তোরও তাই হবে! তোরা তো কোনো পাপ করিস নি? ভগবান আছে দেখিস…’

কী হবে? পিয়াকে তো বাঁচিয়ে নেবে ওর বাপ? তবে পিয়া যখন জানবে, টাকা দিয়ে,... তখন? তবে সেসব তো পরের কথা, তার আগেই না রাশির…আর পারে না দেবিকা, ওর খুব হাই উঠতে থাকে।

দেবিকার বুকের ওপর অন্ধকার সরে যায়।লালচে-হলুদ আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যায়। সিংহের ওপর বসে আছে, আটহাতের দেবী… মা সন্তোষী। গলা আটকে যায় দেবিকার। দম যেন বন্ধ হয়ে আসছে। ও কি প্রণাম করবে? কিন্তু ওর দুই হাতে কোনো জোর নেই। মা-সন্তোষী সিংহাসনের দিকে ডানহাত তোলে। সিংহাসনের পেছনে রাখা টিনের বাক্সটার উঁচু মাথায়, সেই লালচে-হ্লুদ আলো ঝলসে ওঠে। আরে! ওখানে তো উদযাপনের জন্য…দেবিকা টাকা রাখে। কত জমেছে এই বছর আটেকে? হর শুক্রবার ১০০ টাকা…


কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন


এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।

মন্তব্য করুন

লেখক

জন্ম কলকাতায়, ১৯৭১ সালে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলায় এম. এ। খবরের কাগজ বিক্রি থেকে মার্কেট-রিসার্চ ইত্যাদি নানারকম পেশা পেরিয়ে স্কুলশিক্ষকতায় স্থিতু। শিক্ষকতার প্রথম ষোলো বছর ইছামতীর তীরে বসিরহাটে বসবাস। সেই অভিজ্ঞতাই গল্প লেখার প্ররোচক। কবিতা, প্রবন্ধ দিয়ে লেখালেখির সূত্রপাত হলেও গল্পকারই প্রধান পরিচিতি। প্রকাশিত বই: উন্মেষ গল্পগ্রন্থমালা-২ (কলকাতা), চুপিকথা (ঢাকা)।

অন্যান্য লেখা

দেখতে পারেন