preloader
বাংলা বইয়ের e-ভুবন
Menu Categories Search Cart 0
Menu
Cart

Total 0 Items

☹ Your cart is empty

Sub Total:

$0

₹0

বিভাগ
চৈতন্যে বধিবে কে!: পর্ব ২২
ধারাবাহিক

চৈতন্যে বধিবে কে!: পর্ব ২২

এইবার একটু যাওয়া যাক নবদ্বীপ। স্বপ্ননীলের পৈত্রিক বাড়িতে। দেখে নেওয়া যাক, বিশ্বামিত্র হত্যা রহস্যের সাথে চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মভিটার কোনও যোগাযোগ আছে কিনা?

উনষাট

নবদ্বীপ। স্বপ্ননীলের আদিবাড়ি।

এইবার একটু যাওয়া যাক নবদ্বীপ। স্বপ্ননীলের পৈত্রিক বাড়িতে। দেখে নেওয়া যাক, বিশ্বামিত্র হত্যা রহস্যের সাথে চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মভিটার কোনও যোগাযোগ আছে কিনা?

আজকাল মাঝে মাঝেই পূর্বপুরুষের স্মৃতি বিজড়িত কক্ষে সময় কাটান স্বপ্ননীলের পিতামহ রত্নাকর মিশ্র। এই ঘরেই, সিন্দুকে রাখা ছিল সেই চিরুনি যা রত্নাকর তুলে দিয়েছিলেন বিশ্বামিত্রের হাতে, তাঁর বিশেষ গবেষণা কার্যের জন্য।
আগেও এই ঘরে আসতেন রত্নাকর। তবে এত ঘনঘন নয়। কয়েকদিনের জন্য বাইরে গিয়েছিলেন। সবে ফিরেছেন। এখনও পথের ক্লান্তি দূর হয় নি কিন্তু তাও আজ চলে এসেছেন।
আসুর কাছে একটা চাবি থাকে আর রত্নাকরের কাছে আর একটা। তা সত্ত্বেও বেশিরভাগ সময় আসুকেই ডাকেন, ঘর খুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু আজ নিজস্ব চাবিকাঠি নিয়ে এসেছিলেন। তালাটা খুলে কাঠের ভারি পাল্লা ঠেলে ঢোকেন ভিতরে। পুবের ঘুলঘুলি দিয়ে সূর্যকিরণ এসে পড়ছে চৈতন্য মহাপ্রভুর তৈলচিত্রখানির উপর।
কড়ি বরগা নির্মিত এই প্রকোষ্ঠগুলির আয়তন লক্ষ্য করার মত। সাধারণ ঘরের প্রায় চারগুণ। এতখানি প্রশস্ত বলেই, বন্ধ থাকা স্বত্বেও ঘরের মধ্যে কোনও দুর্গন্ধ হয় না। আগে চুন সুরকির মেঝে ছিল। পরবর্তীকালে মোজাইক করান রত্নাকর।
পাদুকা যুগলের নীচে কিচকিচ শব্দ হচ্ছে একটু। ধুলো জমেছে, মেঝেটা পরিষ্কার করা দরকার। আসুকে ডেকে পাঠান,
“আজ্ঞে আমায় ডাকছেন?”
“হ্যাঁ।”
চোখের ইশারায় যা বোঝানোর বুঝিয়ে দেন। কালবিলম্ব না করে চলে যায় আসু। ফিরে আসে কয়েক মুহূর্তের মধ্যে। তার এক হাতে ঝাঁটা আর এক হাতে জলভরা বালতি। কাঁধে এক ফালি কাপড়, “আজ্ঞে জানলাগুলো সব খুলে দেই?”
আসু মণ্ডল এটা এতদিনে বুঝে গেছে, এই ঘরে, মালিককে জিজ্ঞাসা না করে কুটোটি নাড়ার উপায় নেই, “হ্যাঁ খুলে দে।”

উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় গবাক্ষ পথ। বসন্ত সমাগত। ভাগীরথীর বাতাস বড় মনোরম। তবে এই সময়টা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব বিপজ্জনক। রত্নাকরের গায়ে একটা পাতলা শাল। জড়িয়ে নেন ভালো করে। ধীরে ধীরে এসে দাঁড়ান মহাপ্রভু এবং বিশ্বরূপের ছবির সামনে। খানিক স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন।

ওয়েল পেইন্টিং দুটোতে কাউকে হাত দিতে দেন দেন না রত্নাকর। পরিষ্কার করেন নিজের হাতে। মেঝেতে দাঁড়িয়ে পুরোটা নাগাল পাওয়া যায় না। সেইজন্য, এক ধারে রাখা আছে একটি দু’পায়া মই। সেগুন কাঠের। দেয়ালের গায়ে সাঁটা রূপোর আংটা। তাতে নতুন তোয়ালে ঝোলে সবসময়। অনেকগুলো তোয়ালে একসাথে কেনা থাকে। কোনোটাই দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা হয় না। কাজ হয়ে গেলে, আর একটা নতুন তোয়ালে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় আংটায়। পরবর্তী দিনের জন্য।

ঘর মোছা শেষ হলে আসু এগিয়ে আসে। সেগুন কাঠের মইটা টেনে আনতে চায় ছবির সামনে। রত্নাকরের জলদগম্ভীর কণ্ঠস্বর কানে আসে, “উহু না।”
থতমত খেয়ে সরে যায় আসু মণ্ডল। ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকে মনিবের দিকে। এমনি সময় মালিক তাকে ‘তুই’ বলেন। কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলার সময় ‘তুই’ হয়ে যায় ‘তুমি’।
“আমি অনেকদিন বলেছি, মহাপ্রভুর ছবিতে তোমার হাত দেওয়ার দরকার নেই। ওটা আমার দায়িত্ব।”
কুঁকড়ে সরে যায় আসু। মোছা হয়ে গেলে যে তোয়ালেটা মিশ্রসাহেব ছুঁড়ে ফেলে দেন, সেটা ডাস্টবিনে ফেলা দেওয়া ছাড়া এই বিষয়ে আর কোনও কাজ নেই তার। এখন কয়েকটা থতমত শব্দ কেবল উচ্চারণ করে উঠতে পারে সে, “না না... আমি ছবিতে হাত দিতাম না। মইটা এনে দিচ্ছিলাম খালি...”
“না দরকার নেই। আমি নিয়ে নিচ্ছি।”

আসলে মইটাতে অন্য কেউ হাত দেয়, এটাও অভিপ্রায় নয় রত্নাকরের। নিজেই বন্দোবস্ত করে মুছতে শুরু করেন। বিশ্বরূপ মিশ্রের ছবিটা মোছেন অনেকক্ষণ ধরে তারপরে হাত দেন প্রভুর তৈলচিত্রে। এটা বরাবর করেন উনি। বিশ্বরূপ মিশ্র, রত্নাকরের সরাসরি পূর্বপুরুষ বলেই কী তাঁর অগ্রাধিকার! যাই হোক, আজও কাজ শেষে ছুঁড়ে ফেলে দেন তোয়ালেটা। দীপ্ত পদচারণায় বেরিয়ে যান ঘর থেকে। যেতে যেতে বলেন, “ঘরটা বন্ধ করে দে। এখনই...”

সহসা নৈঃশব্দ্য। ঝড় বয়ে যাবার পর শান্ত পৃথিবী। হাঁ করে দাঁড়িয়ে থাকে আসু। কোলাপুরির আওয়াজ মিলিয়ে যায় একসময়। যে বস্তু যত নিষিদ্ধ তার প্রতি তত বেশি কৌতূহল মনুষ্য জাতির। আসুও মণ্ডলও ব্যতিক্রম নয়। চুপ করে খানিক তাকিয়ে থাকার পর, পায়ে পায়ে এগিয়ে যায় সে।

হাত বোলায় বিশ্বরূপ মিশ্রের ছবিতে। দরজা খোলা। আবার যদি ফিরে আসেন রত্নাকর, তাহলে কী হতে পারে সেই হুঁশ থাকে না তার। এরপর, এগিয়ে যায় মহাপ্রভুর ছবির দিকে। এই ছবিতে দু-একটি স্পর্শে যেন সাধ মেটে না। সে তাকিয়েই থাকে প্রভুর চোখের পানে। সীমাহীন ওই চক্ষুজোড়াকে কার সাধ্য বেঁধে রাখে এই ঘরে! হঠাৎ নিজের দু-চোখ ঝাপসা ঠেকে স্বপ্ননীলের আসুদার, “জানি না প্রভু কী অপরাধ? এত কাছে থেকেও কেন তোমার চরণ ছোঁয়ার অধিকার আমার নেই! ছোটো জাত বলে…!”

নিরাকার প্রভু ক্রমশ সাকার হয়ে ওঠেন যেন আসুর কাছে। নিজেকে ধরে রাখতে পারে না আসু মণ্ডল। আলিঙ্গন করতে চায় যুগাবতারের পাদপদ্ম। কিন্তু, দেয়ালে সাঁটানো ওয়েল পেইন্টিং জড়িয়ে ধরতে গিয়ে হাতের চেটো কঠিন দেয়ালে ঘষটায়। অন্য কিছু যেন একটা অনুভব করে আসু।

এরপর, ফ্রেমটা ঈষৎ তুলে যা দেখতে পায় তাতে চক্ষু ছানাবড়া হয়ে যায় তার।

কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’

ষাট

ফুলওড়ারিতোড়। ঝাড়খণ্ড।

সকালে বৈগাপাড়ায় জোর একচোট হাঙ্গামা হয়ে গিয়েছে। আবদুল নামে ছেলেটা একাই এসে চোখ রাঙিয়ে গিয়েছে সবাইকে। স্রেফ একটা বন্দুক ছিল বলে তাকে কিছু করা যায়নি। নইলে তাকে আর অনাদিকে মেরে লটকে দিতে বেশি সময় লাগত না বাপি হাঁসদাদের।

হিঁদু পাড়ায় ঢুকে হিঁদুদের মান সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে ওই ছোকরা। ব্যাপার এমনিতেই খুব গুরুতর, আর সেই ব্যাপারকে আরও গুরুতর করেছে সরস্বতী বলে ছেমড়িটা।

ধানমাঠে দেখা হয়েছিল আবদুল আর সরস্বতীর। মন্দিরের দিক থেকে একটা গোলমালের আওয়াজ পেয়ে তাকিয়েছিল আবদুল। বুঝতে পেরেছিল অনাদি গোসাঁইয়ের সাথে কিছু একটা হয়েছে বৈগাপাড়া মন্দির কমিটির। ছুটে গিয়েছিল। কিন্তু সে শুধু একাই যায়নি। সরস্বতীও গিয়েছিল পিছন পিছন। আবদুলের কার্তুজ মন্দিরের ঘণ্টায় আছড়ে পড়ার পর সদাশিব মোহান্তি আবদুলকে বলেছিল, “কাজটা কি ঠিক করলি মুসল্লির ছাওয়াল? হিঁদুর মন্দিরে আঘাত করলি!”

এরপর, আবদুল কিছু বলার আগেই সরস্বতী এই কথার উত্তরে বলে ওঠে, “আপনি কোন মন্দিরের কথা বলছেন মোহান্তি ঠাকুর? যে মন্দিরে হাঁসুয়া রেখে দেওয়া হয় মানুষ খুন করার জন্য!”

আবদুল বন্দুক বার করাতেও এতখানি অবাক হয়নি মোহান্তি, যতটা অবাক হয়েছিল সরস্বতী বৈগার কথায়। অবশ্য কেউ কেউ মনে মনে তারিফও করেছিল হাড় বজ্জাত সদাশিবের মুখের উপর কথাটা বলার জন্য, তবে বেশির ভাগই ভয় পেয়েছিল। ভেবেছিল, দু-একদিনের মধ্যেই মুখিয়াকে বলে পঞ্চায়েত বসাবে সদাশিব।

বৈগাপাড়ার মন্দিরের সামনে যে প্রশস্ত চত্বরটা, মার্বেল বাঁধানো হয়েছে মাসখানেক আগে। সীমানায় বট অশ্বত্থ আর পিপল গাছ। সামান্য একটু বেলা হলেই বটের ছায়া গভীর হয়ে পড়ে মন্দিরের শানে।

যারা ভেবেছিল দু-একদিনের মধ্যে পঞ্চায়েত বসবে তারা ভুল ভেবেছিল। অত ধৈর্য সদাশিবের নেই। সে গাঁয়ের মুখিয়া রকেট মুর্মুকে বলে দুপুর গড়ানোর আগেই পঞ্চায়েত বসিয়েছে, অশ্বত্থ গাছের তলায়।
ছায়ার মধ্যে একখানা দড়ির চারপাই পাতা হয়েছে। সেখানে বসে আছে রকেট মুর্মু। গাঁয়ে মোড়ল যেই হোক না কেন তাতে খুব কিছু যায় আসে না, কারণ, পিছন থেকে কলকাঠিটা নাড়ে সদাশিবই। সেই সদাশিব বসে আছে একটা হাতলওয়ালা চেয়ারে। অন্যরা সব দাঁড়িয়ে।
চারপাইয়ের সামনে ভিড় করেছে বৈগাপাড়ার যে জনা পঁচিশ, তাদের মধ্যে সরস্বতী আর রতনও আছে। দু’খানা জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য তড়িঘড়ি পঞ্চায়েত তলব করা হয়েছে। এক, আবদুল নামে যে মুসল্লি আজ মন্দির ‘স্পর্শ’ করার স্পর্ধা দেখিয়েছে তার বিষয়ে চরম সিদ্ধান্ত নেওয়া। দুই, সরস্বতী বৈগাপাড়ার মেয়ে হয়েও সালিশি করেছে ঐ মুসল্লি ছাওয়ালের জন্য। সরস্বতী এবং তার দাদার উপযুক্ত ‘শিক্ষা’র বন্দোবস্ত করা।
যারা মন্দিরে উপস্থিত হয়েছিল তাদের মধ্যে একটা চাপা গুঞ্জন শুরু হয়েছিল খানিক আগে থেকেই। সদাশিব হাতে তিনবার তালি মারে। সবাই চুপ করে যায়। এই তালির শব্দ পঞ্চায়েতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার সংকেত। সদাশিব প্রধান সেবাইত হবার পর থেকে এই প্রথা চালু করেছে সে।
সবাই শান্ত হলে রকেট তার কথা শুরু করে, “আজ আবদুল যা করেছে আমরা সবাই জানি। মন্দিরে হামলা চালিয়েছে। এমন শাস্তি দিতে হবে তাকে, যাতে গোটা চাঁদপুরার মুসল্লি মহল্লা মনে রাখে।”
রোজকার প্রসাদে একটু খেজুর আমসত্ত্ব অথবা কিসমিস জুটলেই যারা খুশি, তারা সদাশিব যে রায় দেবে তার বিরুদ্ধে যাবে, এমন ভাবাটা অযৌক্তিক। এই পঞ্চায়েত বসানো আসলে একটা নাটক। এইসব করে সদাশিব এটাই দেখাতে চায় যে, বৈগাপাড়ায় আসলে একটা গণতন্ত্র কায়েম আছে। পড়শি মুসলমান গাঁয়ে সাল্লুর হুকুমনামা জারি থাকলেও, হিন্দমুলুকে কিন্তু ভাই, জনগণের শাসন।
যাই হোক, রকেটের কথায় এখন কেউ কোনও উত্তর না করে চুপ করে থাকে। চুপ করে থাকার একটা বড় কারণ হল, বৈগাপাড়ার মানুষ এইটা জানে যে সরস্বতীর সাথে আবদুলের একটা সম্পর্ক আছে। দুই গাঁয়ের মধ্যে চিরটাকাল তো আর এইরকম মারদাঙ্গা ছিল না। এইসব তো হালে, মানে হনুমানজয়ন্তীর দিন থেকে আরম্ভ হয়েছে। ওদের প্রেম পিরিতি তো তার আগে থেকেই।
রকেট আরও দু-এক মুহূর্ত অপেক্ষা করে তাকায় সদাশিব মোহান্তির দিকে, “আপনি কী বলেন ঠাকুর মশাই?” সদাশিব কী বলবে সেটা ঘটনা ঘটার প্রায় সাথে সাথেই ঠিক হয়ে গেছে। হাতলওয়ালা চেয়ারখানায় জুৎ করে ঠেকনা দিতে দিতে সদাশিব বলে, “আমার তো মনে হয় মুসল্লির ছাওয়াল যা করেছে, এরপর তাকে যমের দক্ষিণদুয়ার দেখানো ছাড়া আর গতি নাই। মন্দির ‘নষ্ট’ করেছে হারামজাদা!”
ভিড়ের একদম সামনের সারিতে দাঁড়িয়েছিল সরস্বতী আর রতন। কথাটা বলে দু’জনার দিকে আড়চোখে একবার তাকিয়ে নেয় ঘাড়ে রোয়া ওঠা শকুন। তারপর বাকি সবার দিকে তাকিয়ে নিজের কথার সম্মতি চায়। অন্যরা যথারীতি হুক্কাহুয়া করে।
হনুমান মন্দিরের দাঙ্গাখানা বাঁধানোর আগে যেটা করেছিল মোহান্তিরা, তা হল, বিদ্বেষটাকে বৈগাপাড়ার ঘরে ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া। এইটা ঠিকমত করা গেলে হিংসা খুব সহজ হয়ে যায়। আর হিংসায় বুঁদ হওয়া জনতা একজোটে যদি কিছু করে বসে, তাহলে পুলিশের পক্ষে অত সহজ নয় কাউকে দোষী প্রমাণ করা। আর হিংসাকে একবার ‘যুক্তিসঙ্গত’ প্রমাণ করে দিতে পারলে তো কথাই নেই।
আবদুলকে যদি শুধু মারতেই হত তবে এই রকম সভা ডেকে সেই খুনের উদ্যোগকে ঢাক পিটিয়ে ঘোষণা করার কিছু ছিল না। পাহাড়ের কোণা খামচিতে ওৎ পেতে থেকে কোনও একসময় ঝাঁপিয়ে পড়লেই হত। কিন্তু না, সেটা করলে হিংসার দামামা আরও একবার বাজিয়ে নেওয়ার সুযোগটা হাতছাড়া হবে।
জনা পঞ্চাশ মিলে যদি হাইওয়ে অথবা অন্য কোথাও, আবদুলকে টায়ার আর কেরোসিন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া যায়, তবে আবদুলও নিকেশ হল এবং সাথে সাথে নতুন দাঙ্গার আগুনটাও লাগিয়ে দেওয়া গেল। কাজেই মোহান্তি যে শুধু আবেগ এবং রাগের বশবর্তী হয়ে তড়িঘড়ি পঞ্চায়েত বসিয়েছে এরকমটা নয়, শকুন বড় দূরদর্শী। ভাগাড় দেখতে পায় দূর থেকেই।
রতন বৈগার বুকের পাটা যেরকম চওড়া ঘাড় সেরকম মোটা। সবাই সায় দিলেও সে খানিক ত্যাড়া কথা বলে, “আপনার বাঁধন তাহলে ঠিক হয় নাই ঠাকুর মশাই।”
সদাশিব বড় করে তাকায়, “কী বলতে চাইছিস?”
নির্বিকার রতন বলে, “মন্দির নষ্ট! এইটা আপনি কী বললেন ঠাকুর মশাই! আপনার মত একজন পুরোহিত থাকতে একজন মুসল্লি মন্দির ‘নষ্ট’ করে দিল! তাও অত দূর থেকে! আপনি মন্দিরে বাঁধন দেন নাই! ঐ যে ‘মন্দির বন্ধন’ না কি যেন বলে... হা হা হা...”
সদাশিব কিছু না বলে চুপ করে তাকিয়ে থাকে রতনের দিকে। বাপি হাঁসদা বসেছিল মন্দিরের সিঁড়িতে। তিড়িং করে একটা লাফ দিয়ে উঠে আসে, “হেই রতন কী ব্যাপার রে! খ্যাঁ খ্যাঁ করে হাসছিস যে বড়!”
হাসে রতন, “আরে এখন তো শুধু আমি হাসছি। দু’দিন পরে দেখবি সবাই হাসছে... হা হা হা...। দেখছিস না ঠাকুরমশাইয়ের সামনেই বাইরের একটা লোক এসে মন্দির ‘নষ্ট’ করে দিছে!”
“কথা বড় ব্যাঁকাত্যাড়া বলছিস যে রতন! ঐ মুসল্লি ব্যাটা তোকেও কি বন্ধুক টন্দুক দিয়েছে নাকি! যার জন্য গরম হয়ে আছিস...”
এই কথাগুলি যখন হচ্ছে তখন পাশে দাঁড়ানো সরস্বতীর শরীরটা কেমন যেন গুলোচ্ছে। নেহাত আধপেটা খাওয়া, ভরা পেট থাকলে ভাত এতক্ষণে উঠে আসত। যে গা বমি বমি ভাবটা ও খেয়াল করছিল কিছুদিন থেকেই সেটা বেশ বেড়েছে। না হলে সেও দাদার সুরে সুর মেলাত। তবে রতন একাই আজ যথেষ্ট। গাঁয়ে পঞ্চায়েত বসানোর নাটক দেখছে বহুদিন হল। আজ যেন সে ঠিক করেই এসেছে বাপি হাঁসদা, রকেট, সদাশিব এদের কথার জবাব না দিয়ে ছাড়বে না। তাতে যা হওয়ার হবে। রতন বাপির শেষ কথায় আরও গায়ে জ্বালা ধরানো উত্তর দেয়, “গরমের এখনও কী দেখলি রে বাপি?”
বাপির থেকে সদাশিব অনেক ধূর্ত। সে জানে এইরকম ভাবে তর্ক বাড়তে দিলে তার সম্মান বাড়বে না। সে রতনকে গুরুত্ব না দেওয়ার ভান করে। চোখ ঘুরিয়ে তাকায় বাকি সবার দিকে, “বাজে কথায় নষ্ট করার মত সময় আমাদের নাই। তা... ভাই সকল... আবদুলের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল তা ঠিক আছে তো?”
দ্বিতীয়বার যখন সদাশিব একই প্রস্তাব গায়ের মানুষের কাছে পেশ করে তখন সবাই ঘাড় নেড়ে সায় দেয়। সরস্বতীর গাটা গুলোচ্ছিল বেশ কিছুক্ষণ ধরেই এইবার মাথাটাও কেমন যেন চক্কর মারে। রতন ধরে না ফেললে সে হয়ত পড়েই যেত। দু’এক মুহূর্তের ব্যাপার। কেউ সে ভাবে খেয়াল না করলেও বাপির কিন্তু চোখ এড়ায় না। ব্যাঁকা হাসি খেলে যায় ঠোঁটের কোণায়, “হে সরস্বতী তোর শরীর খারাপ লাগছে বুঝি? অবশ্য লাগবারই কথা হে হে...।”
রতন আজ ছাড়বে না এদের। চড়া বাচনভঙ্গি অব্যাহত তার, “কী বলতে চাইছিস তুই!”
“সব কী বলা যায় রে। বুঝে নিতে হয়। দুগ্ধার জঙ্গলে দিনের পর দিন ঘুরে বেড়ালে শরীরের আর দোষ কী?”
রতনের যা চেহারা তাতে আবদুলকে চেপে ধরলে দই করে দিতে সময় লাগার কথা নয়। হুংকার দিয়ে ওঠে রতন, “হেই কী বলতে চাইছিস স্পষ্ট করে বল।”
সদাশিব মিটি মিটি হাসছিল। কপট রাগ দেখায় বাপির উপর, “এই বাপি তুই আজকাল বড় ফাজিল হয়েছিস...”
সদাশিবের এই ‘ধ্যাষ্টামো’ দেখে রতনের মাথা আরও গরম হয়ে যায়। সে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ ঘরের মেয়ে বউ নিয়ে ওকে ফাজলামো করতে বারণ করুন। নয়ত ওর হাঁসুয়া দিয়ে ওর গলাটাই নামিয়ে দেব।”
মন্দিরে যারা উপস্থিত ছিল তাদের এই কথায় বেশ খানিক কৌতুক বোধ হয়। পরমেশ্বরের বেটা রতন আজ যা করছে তা এক কথায় অভিনব। মন্দিরে দাঁড়িয়ে কেউ, সদাশিবের শাগরেদের গলা নামিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে, এ তাদের চিন্তার অতীত। সকালে আবদুল বলে ছেলেটা গুলি চালিয়ে যাবার পর থেকেই সব কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। একটা চাপা হাসির আওয়াজ পাওয়া যায়। সেই শব্দ এবং রতনের কথা বাপি হাঁসদার বুকে বিঁধে যায়। সে রতনের দিকে এগোনোর চেষ্টা করে না, কিন্তু এক জায়গায় দাঁড়িয়ে তিড়িং তিড়িং করে খান তিনেক লাফ দেয়। রকেট উঠে এসে তাকে সামালোনোর চেষ্টা করে। ওইদিকে রতন বলে, “ক্ষমতা থাকে তো সামনে আয়। ঐখানে দাঁড়িয়ে ফাল পারছিস কেন?”
বাপি হাঁসদা আর যাই হোক বোকা নয়। সে খুব ভালো করে জানে একবার রতন যদি তাকে নাগালের ভিতর পেয়ে যায় তবে কী হতে পারে। আবদুল আর রতন, দুটোরই যেমন বাঘের মত চেহারা তেমনি তিরিক্ষি মেজাজ। একবার যদি কারও ঘেটি চেপে ধরে তবে তার ছাড় পাওয়া মুশকিল। বাপি রকেটের পিছনে দাঁড়িয়েই তর্জন গর্জন চালিয়ে যায়। ওইদিকে সরস্বতী তার দাদার হাত ধরে টেনে তাকে মন্দির চত্বরের বাইরে নিয়ে আসে।
আজ পঞ্চায়েতের দ্বিতীয় আলোচ্য বিষয় ছিল, সরস্বতী বৈগা সকালে আবদুলের পক্ষ নিয়েছে কী নেয়নি এবং যদি নিয়ে থাকে তবে তাদের ‘একঘরে’ করা হবে কী হবে না? সরস্বতী এবং রতন, ‘গণ-আদালত’ ছেড়ে চলে যাওয়ায় দ্বিতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনার আর কোনও প্রয়োজনই রইল না। বিবাদী পক্ষের অনুপস্থিতে তাদের ‘একঘরে’ করার সিদ্ধান্ত হয়ে গেল, এক নিমেষে।

একষট্টি

ফুলওয়ারিতোড়। ঝাড়খণ্ড।

দুই চৈতন্য কথা। আদি ও অনাদি।

স্বপ্ননীলের গতিবিধির উপর চব্বিশ ঘণ্টা নজর রাখছে বি.এইচ.এম.ডি-র গোয়েন্দা বিভাগ। তারা তাকে অনুসরণ করছে বাড়ির গেট থেকে বেরোনোর পর থেকেই। আচ্ছা রত্নাকরের উপরও কি নজর রাখা হচ্ছে? ‘রেফারেন্স’ শুধু যে স্বপ্ননীল নয়, রত্নাকরও বটে। কাজেই রাখা তো উচিত।
সেই রত্নাকরের ব্যাপারে অরবিন্দ জিজ্ঞাসাও করেছিলেন উমানাথ সিন্ধিয়াকে। জানতে চেয়েছিলেন কেন তাকে খতম করে দেওয়া হচ্ছে না কিংবা তার ক্ষেত্রে নজরদারি অত কড়া নয় কেন? উমানাথ বলেছেন, রত্নাকরের জন্য অত কড়া নজরদারির দরকার নেই। কারণ, বৃদ্ধ রত্নাকরের যাতায়াত সীমিত জায়গায়। নবদ্বীপ এবং কলকাতা ছাড়া উনি খুব একটা কোথাও যান না। বুড়ো পাখির ডানায় মেদ জমেছে। কাজেই তাকে মুঠোর মধ্যে রাখার জন্য সর্বক্ষণ বাজপাখির মত তাকিয়ে থাকার দরকার নেই।
আর, স্বপ্ননীলকে চাইলেও এই মুহূর্তে খতম করে দেওয়া সম্ভব নয়, শুধুমাত্র নজরবন্দি করে রাখা ছাড়া খুব কিছু করার নেই তার ক্ষেত্রে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাকে শেষ করে দিলে, নিজের কর্মকাণ্ডের কথা ঠিক কতটা ছড়িয়েছেন বিশ্বামিত্র, সেটা জানার আর কোনও উপায়ই থাকবে না। কে বলতে পারে, হয়ত গবেষণা ইতোমধ্যেই শেষ করেছেন তিনি, এবং স্বপ্ননীল ছাড়াও একাধিক জনকে দিয়ে রেখেছেন নথিপত্র। সবাই হয়ত উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করছে ফলাফল প্রকাশ্যে নিয়ে আসার জন্য। ওইসব অদৃশ্য শত্রুর কথা একমাত্র জানতে পারে স্বপ্ননীলই। ওকে এখনই নিকেশ করে দিলে, রক্তবীজের ঝাড় চিহ্নিতকরণ অসম্ভব হয়ে পড়বে।
কিন্তু, রত্নাকরের বেলায় তো সে ভয় নেই। কাজেই, তাকে উড়িয়ে দেওয়া যেতেই পারে। যতই বলা হোক বৃদ্ধের যাতায়াত সীমিত জায়গায়, তাও শুধু শুধু ঐটুকু ঝামেলা রেখে দেওয়ারই বা মানে কী! বুঝতে পারেন না অরবিন্দ।
এইখানে মনে রাখা প্রয়োজন যে উমানাথ সিন্ধিয়া, আর্থিক প্রতিপত্তি সম্পন্ন একজন প্রভাবশালী নেতা, কিন্তু ‘ডিসিশন মেকার’ নন। অরবিন্দদের সব প্রশ্নের উত্তর, যে ঠিকঠাক দিতে পারবেন, এমনটা নয়।
সোনা মসজিদের পিছনে একটা ঘর অরবিন্দ এবং অনন্তর জন্য বরাদ্দ। ঐ ঘরে বসে অনন্ত হাত বোলাচ্ছিল ঠাণ্ডা যন্তরটায়। গ্লক। জাত কেউটের বাচ্চা। এই পিস্তল খান-চারেক পাঠানো হয়েছিল ফুলওয়ারিতোড়ের সনাতন গাজীর বটতলায়। একটা দেওয়া হয়েছে সালাউদ্দিন মোল্লাকে আর একটা আবদুলকে। আর বাকি দুটো জমা থাকে সাল্লুর কাছে। এইখানে এলে ওইদুটো নিজেদের জিম্মায় নিয়ে নেয় অরবিন্দরা। বলা বাহুল্য এই অস্ত্র ওড়িশা থেকেই পাঠানো হয়েছিল, চোরাই পথে।
রিভলভারটা বেশ খানিক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে পকেটে ভরতে ভরতে অনন্ত বলে, “আশা করি এটা ঠিকঠাক কাজে লাগবে।”
অরবিন্দ মুচকি হাসেন। সে গভীর জলের মাছ। বাইরে থেকে বোঝা মুশকিল। তিনি মুখে ওই হাসিখানা ঝুলিয়ে রাখতে রাখতেই বলেন, “আশা তো করছি। তবে বিশ্বামিত্রের কেসটা ওইরকম পালটি হয়ে যাবার পর নিশ্চিত করে কিছু বলা মুশকিল... হা হা হা...।”
অরবিন্দর মৃদু হাসি ক্রমে অট্টহাসিতে পরিণত হলেও অনন্তর মাথায় কিন্তু নতুন করে পাক খায় চিন্তাটা। সত্যিই তো যাকে মারার কথা ছিল আবদুলের, তাকে আগে থেকেই ওইরকম সাল্টে দিল কে! যাই হোক, এখন অনাদির কেসটায় যেন কোনও ত্রুটি না হয় সেটাই দেখার।

সমুদ্রে তীরে মিলিত হইয়াছেন তিনজন। জগন্নাথ দাস, মহাকাল প্রতিহারি এবং চৈতন্য-অনুচর রায় রামানন্দ। রামানন্দের নিকটে, বাকি দুইজন যে প্রসঙ্গ উত্থাপন করিয়াছেন অর্থ্যাৎ মহাপ্রভুর প্রাণ সংশয়ের সম্ভাবনার বিষয়ে যে কথার অবতারণা হইয়াছে, তাহা একেবারেই আকস্মিক নহে। কাজেই, তিনি চমকিত না হইয়া স্থির কণ্ঠে প্রতিহারিদের প্রশ্ন করিয়াছিলেন, “আপনাদিগের এইরূপ বোধ করিবার কারণ?”

কালবিলম্ব না করিয়া এই প্রশ্নের উত্তর করিয়াছিলেন জগন্নাথদাস, “নেপথ্যে থাকিয়া কোনও এক শক্তি প্রভুর প্রাণ নাশ করিতে চাহিতেছে বলিয়া বোধ হইতেছে। কিছুকাল পূর্বে গম্ভীরায় যে ঘটনা ঘটিয়াছে, তাহা সম্পর্কে আমরা সম্যক অবগত আছি।”

ইহার পর জগন্নাথদাস এবং মহাকাল প্রতিহারী যাহা বলিয়াছিলেন, তাহার সারমর্ম হইল, যে তাহাদিগের প্রভুর দেহরক্ষী কাশীশ্বর এবং ভৃত্য গোবিন্দকে যারপরনাই সন্দেহ হইতেছে। তাহাদের বিশ্বাস ইহারাই প্রভুর খাদ্যে বিষ মিশাইয়াছে এবং শুধু তাহাই নহে, প্রভু অচেতন হইয়া পড়িলে কাশীশ্বর এবং গোবিন্দই প্রভুকে বাহিরে আনিয়া, পুনরায় একজন অন্দরে গিয়া অন্দর হইতে গম্ভীরার কবাট বন্ধ করিয়াছে। যাহাতে ভক্তদের কাছে ইহাও প্রভুর এক লীলা বলিয়া প্রচার করিতে পারে। যাহাতে ইহা বলিতে তাহারা সক্ষম হয় যে প্রভু দ্বার রুদ্ধ থাকা স্বত্বেও আপন লীলার উপর ভর করিয়ে বাহির হইয়া গিয়াছেন।

প্রাক-সন্ধ্যায় সাগরতটে বাতাস বেশ তীব্র হইয়া উঠিয়াছে। উড়ন্ত বালুকারাশি রামানন্দের উত্তরীয় মলিন করিতে যেন উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছে। রামানন্দ সেইদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করিয়া একই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করিলেন, “গোবিন্দ এবং কাশীশ্বরকে আপনাদিগের সন্দেহের হেতু?”

রায় রামানন্দের এই প্রশ্নের উত্তর করিলেন, পাণ্ডাশ্রেষ্ঠ মহাকাল, “আমরা জানিতে পারিয়াছি ইহারা গোবিন্দ বিদ্যাধরের অনুচর। আর আমরা ইহাও জানিতে পারিয়াছি যে, বিদ্যাধর মহাপ্রভুকে এই নীলাচল হইতে যে কোনও মূল্যেই হউক উৎখাত করিতে চাহেন।”

“তাঁহার এইরূপ চাহিবার কারণ?”

“কারণ তিনি মনে করেন যে চৈতন্য মহাপ্রভু থাকিতে রাজা প্রতাপরুদ্রকে সিংহাসনচ্যুত করা অসম্ভব। আর তাঁহাকে সিংহাসনচ্যুত না করিয়া গোবিন্দ কেমনে সিংহাসনে বসিবেন ! হা হা হা...। সে যাহাই হউক, আমাদের সময় সীমিত ভদ্র। কাজেই, ইহা লইয়া এক্ষণে তর্ক করিবার অবসর আছে বলিয়া মনে হয় না।”

পূর্বেই ইহা উল্লেখ করা হইয়াছে যে, রামানন্দ দীর্ঘদিন ধরিয়া মহারাজা প্রতাপরুদ্রের দরবারে সাফল্য এবং সুনামের সহিত অতীব গুরুত্বপূর্ণ দায়ভার সম্পাদন করিয়াছেন। রাজকর্মচারী রূপে তাঁহার দক্ষতা ছিল তর্কাতীত। সুতরাং এই কথা ভাবা সমীচীন হইবে না যে, তিনি কূটনীতি কাহারও অপেক্ষা কম বুঝেন।

তাঁহার সম্মুখে যে দুইজন রহিয়াছেন তাঁহারাও যে গোবিন্দ বিদ্যাধরের অনুচর তাহা তিনি বিশেষভাবে জ্ঞাত আছেন। তাহা সত্ত্বেও তাঁহারা গোবিন্দ বিদ্যাধর সম্পর্কে বিরূপ ভাষণ দিতেছেন। ইহার একমাত্র উদ্দেশ্য হইল, রামানন্দের ধ্যান-ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করা এবং প্রভুর অত্যন্ত হিতৈষী বলিয়া নিজেদের প্রমাণ করা। ইহা রামানন্দ বুঝিতে পারিয়াই উক্ত প্রশ্নগুলি করিয়াছেন। প্রকৃতপক্ষে সম্মুখে উপস্থিত দুইজনের শঠতা এবং চালাকি, আরও একবার পরখ করিয়া লওয়াই উদ্দেশ্য ছিল তাঁহার।

তবে প্রভুকে বিষপ্রয়োগের যে তত্ত্ব তাঁহারা খাঁড়া করিয়াছেন তাহা সত্যি বলিয়া মনে করেন স্বয়ং রামানন্দও।


কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন


এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।

মন্তব্য করুন

লেখক

জন্ম-৮ সেপ্টেম্বর, কলকাতা। ছাত্রাবস্থায় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে লেখালেখির শুরু। এই উপন্যাস ছাড়াও লেখকের প্রকাশিত অন্য উপন্যাসগুলি হল— ‘আসলে ভালবাসার গল্প’, ‘রোধবতীর নীল রং’, ‘একে রহস্য দুইয়ে লক্ষ্যভেদ’। দেশ, আনন্দমেলা, কৃত্তিবাস, কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান, কথা-সাহিত্য, বহুরূপী এবং আনন্দবাজার পত্রিকায় ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু লেখা। এছাড়াও বাংলার শ্রেষ্ঠ নাট্যকারের সম্মান ‘সুন্দরম পুরস্কার’ পান ২০১৪ সালে।

অন্যান্য লেখা

দেখতে পারেন