রুবিদি ভয় পাওয়ার মেয়ে না। সুন্দরবনের জঙ্গলে ওকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল পাঁচ খুনে। ক্যারাটের প্যাঁচ-পঁয়জার নাকি ছেলে ভিক্টরের টান, সেকথা আজও রুবিদি বুঝতে পারে না। কিন্তু লাফ দিয়ে নদীতে পড়েছিল শহরের মেয়ে রুবিদি। খাঁড়ি নদী সাঁতরে ফিরে এসেছিল। জেলা থেকে রাজ্য, সাঁতারে একসময় নামডাক ছিল রুবিদির। তারপর পুলিস দিয়ে ছেলেকে নিয়ে আসে নিজের কাছে। রুবিদির এফ আই আর, রাষ্ট্রের পুলিস… জলদপ্তরের বড়বাবু রুবিদিরই ভালবাসার বর; পল-সায়েন্সের পি এইচ ডি, মুক্ত রাষ্ট্রের চিন্তা করা একসময়ের স্বপ্নালু দুটোচোখকে… কিছুই করতে পারেনি। নতুন একটি কচিবউ নিয়ে সে এখন, পরের রাজ্যভোটের টিকিট পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর। আর রুবিদি, শুধু অঙ্কের প্রাইভেট টিউশানি…
ট্রেনে ফিরছিল ক্লান্ত রুবিদি। ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিছুক্ষণ পরে মনে হল, কে যেন ডাকছে। রুবিদি চোখ খুলল, পেছনে ট্রেনের সাদাটে আলোর ব্যাকগ্রাউন্ড আর তার মাঝখানে একটা গোল অন্ধকার ওর মুখের সামনে ভাসছে, ওর নাম ধরে ডাকছে।
রুবিদি ভয় পাওয়ার মেয়ে না। সুন্দরবনের জঙ্গলে ওকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল পাঁচ খুনে। ক্যারাটের প্যাঁচ-পঁয়জার নাকি ছেলে ভিক্টরের টান, সেকথা আজও রুবিদি বুঝতে পারে না। কিন্তু লাফ দিয়ে নদীতে পড়েছিল শহরের মেয়ে রুবিদি। খাঁড়ি নদী সাঁতরে ফিরে এসেছিল। জেলা থেকে রাজ্য, সাঁতারে একসময় নামডাক ছিল রুবিদির। তারপর পুলিস দিয়ে ছেলেকে নিয়ে আসে নিজের কাছে। রুবিদির এফ আই আর, রাষ্ট্রের পুলিস… জলদপ্তরের বড়বাবু রুবিদিরই ভালবাসার বর; পল-সায়েন্সের পি এইচ ডি, মুক্ত রাষ্ট্রের চিন্তা করা একসময়ের স্বপ্নালু দুটোচোখকে… কিছুই করতে পারেনি। নতুন একটি কচিবউ নিয়ে সে এখন, পরের রাজ্যভোটের টিকিট পাওয়ার স্বপ্নে বিভোর। আর রুবিদি, শুধু অঙ্কের প্রাইভেট টিউশানি…
একটু একটু করে ধাতস্থ হচ্ছিল রুবিদি। কামরার ঐ ফ্যাকাশে সাদাটে আলো পিছলে এসে ভরাট করে দিচ্ছিল অন্ধকারের গোলক। পোড়া-তামাটে বলিরেখায় কাটাকুটি, বিশাল ঝাঁকড়া জটা, লাল শাড়ি, দু-তিন প্যাঁচ মোটা রুদ্রাক্ষের মালা…একজন মাঝবয়েসি মহিলামুখ। রুবিদির সাথেই নেমে পড়ল প্ল্যাটফর্মে। বলল,
‘ওরে রুবি একটু চা খাওয়া।’
‘আমাকে চেনেন? নাম ধরে ডাকছেন যে?’
‘ভাল করে আয়নার দিকে তাকাবি, নিজের চোখদুটো দেখবি… মহামায়া বসে তোর ভেতরে। এবার দ্যাখ… আমার চোখদুটো ভাল করে দ্যাখ…’
দুটো বিস্ফারিত বাদামি চোখ। রুবিদির মনে পড়ে যাচ্ছিল, গণবিজ্ঞানের ওয়ার্কশপে হিপনোটিজমের কারিকুরি। সারাদিনের ক্লান্তিতে রুবিদি সেই ঝামেলা থেকে বেরোতে চাইছিল। তার তখনও একটা টিউশানি বাকি। স্টল থেকে একটা চা নিয়ে এসে, মহিলাকে দিয়ে বিদায় নিতে চাইল ও।
‘দাঁড়া, দাঁড়া…মহামায়া, কারুর কাছে এমনি এমনি আসে না! শোন, এই নে এই শিকড়টা রাখ। সামনে তোর প্রিয়জনের মস্ত বড় বিপদ আসছে। এটা লালসুতো দিয়ে বাঁধাবি। মঙ্গলবার মাঝরাতে পুকুরে একডুবে এটা বাঁধতে পারলে, তাকে কেউ ছুঁতে পারবে না!...যাঃ, এবার যাঃ।’
অন্যসময় হলে শিকড়টাকে ছুড়ে ফেলে, হয়ত ঐ মাঝবয়েসি মহিলাকে একটা চড় কষিয়ে দিত রুবিদি। কিন্তু রুবিদি একটু সময় নিল,
‘এত এত মেয়েদের রোজ যে বিপদ, তাদের জন্য মহামায়া, শেকড় পাঠায় না কেন? আর যে বুড়িটাকে নিয়ে দেশটা তোলপাড়, পাগলাকুকুরে যদি তাকে খেয়ে ফেলত, তাতেও মনে হয় সে শান্তিতে মরত! সেই বুড়িটাকে যখন খুবলে খুবলে খাচ্ছিল, তোমার মহামায়ার সেরা সন্তানেরা, তখন কি মহামায়ার এতটুকুও দয়া হয়নি গো? হল কিনা আমার প্রিয়জনের জন্য? কেমন দেবী গো তোমার?’
মাথায় জটা, পানের রসে ঠোঁট লাল, ডানকব্জিতে তামার চ্যাপ্টা তাগা দুলল, দুটো চোখ নেচে উঠল মহিটলার। পুরো স্টেশনটা তখন ফ্রিজ,
‘মহামায়া যাকে যে রোল দিয়েছে তাকে তো সেই পার্টটাই করতে হবে…খুকি!’
তারপর রুবিদির থুতনি ধরে একটু নাড়িয়ে দিয়েছিল সে। চারপাশে স্টেশন-প্ল্যাটফর্ম সব নিভে গেল। শুধু অনেকটা নীচে নেমে আসা কালো কুচকুচে আকাশে চকচকে সাদাটে-রুপোলি আলোরকুচি তারারা ওদের দুজনকেই দেখছিল,
‘কেউ কেউ তো নিজের বাপ-মাকে মানে না, নিজেই নিজেকে স্বয়ম্ভূ বলে… তাকে? তার জন্য? তার জন্যেও তো ঐ… ঐ যে মহাকাশ, সেখানেই বাঁচা-মরার খেলা চলছে!’
আর তখনই কে যেন, কোন আড়ালে বসে একটা অদ্ভূত রিমোট টিপল আর একগাদা তারা আকাশ থেকে খসে পড়তে শুরু করল মাটির দিকে। রুবিদি চোখ বুজে ফেলেছিল।
আবার স্টেশন-প্ল্যাটফর্ম, আপ-ডাউন লোকাল, ডেলি-প্যাসেঞ্জারদের বাড়ি ফেরার স্রোত। কিন্তু সেই জটাধারিনী কী করে যেন এক লহমায় রুবিদির চোখের আড়ালে চলে গেল। রাশিকে ফোন করেছিল তারপরেই রুবিদি। এই জটাধারিনী আর শেকড়ের পাশাপাশি বিকেলের বই-স্ট্রিটের সেই লম্বা লিকলিকে লোকটার কথা কিছুই বাদ রাখেনি।
কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
‘আমরা সবাই কাগজের নৌকার মধ্যে গুঁজে দেওয়া এক একটা রঙচটা লিলিপুট! মনখারাপের কালো মেঘ গলে গলে চোখের জল হয়ে পড়ছে। আমরা ভাবছি, আমাদের নৌকাদের ঠিক নিয়ে যাব আলো ঝলমলে ডাঙায় যেখানে আর কোন মেয়ের, কোনোদিন মনখারাপ হবে না। কিন্তু বৃষ্টির জমা জলের টান, আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার ড্রেনপাইপের দিকে… কে জানে রে, আমরা এইভাবেই হয়ত…’
‘রুবিদি… তুমি বলছ এইকথা? তোমাকে দেখে আমি…’
‘কী করি বলত মনা? ফিরলাম যে রিক্সাতে সে বলছে… দিদি কিছু আর ভাল লাগছে না গো! এত বিরক্তি লাগছে না! কিছু তো করতে পারছি না! কিন্তু কিছু একটা না করতে পারলে মনে হচ্ছে… মনে হচ্ছে, মরে যাব! ঐ যে ঘেয়ো কুকুরগুলো রাস্তার ধুলো মাখামাখি হয়ে শুয়ে আছে, একদিন নাহয় ওদের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেব। এভাবে গুমরে গুমরে থাকা যায় গো? চিরটাকাল আমরা আইবুড়ো, অবেউতা বোন, মেয়েদের নিয়ে চিন্তা করেছি। এখন কিনা, ঘরের মা দিদিমারা? তাদেরও বাঁচাতে পারব না!...তুমিও আর রাত করে বাড়ি ফির না।… আচ্ছা! বল তো রাশি! কে ওদের হয়ে থ্রেট করছে? ঐ রোগা-লম্বা লোকটা, এই রিক্সাওলাটা, নাকি ঐ জটাধারী মহিলা, ডাইনির মত হাওয়ায় মিলিয়ে গেল… কে… কে করছে? বল তো?’
‘আমি কী বলি… কী বলব? আমার তো মনে হচ্ছে, এই এসবে কিছু হবে না। ওরা আমায় ধরে নিয়ে যাবে, যাবেই। ওসব, বেল-জামিন, আমাদের কপালে নেই। চাকরিটাও গেল। তবে দিদি… এখন কী মনে হচ্ছে জান? ধরতে আসলে… একটাকে নিয়ে আমি মাটিতে পেড়ে ফেলবই। আমার গায়েও জোর আছে দিদি। সেদিন রাতে, আচমকা রডের বাড়ি মারতে শুরু করেছিল, পড়ে গিয়েছিলাম… এবার… একবার… ঐভাবে ট্রেনের ভেতরে যেভাবে বৃদ্ধা মা-কল্যাণীকে ছিঁড়ে ফেলেছিল। আমার সাথে যদি লাগতে আসে!…’
‘আরে শোন! এ কোন হঠকারিতার কথা বলছিস? খবরদার ওসব করবি না, তাহলে তোকে চিরকালের মত জেলখানায় ঢুকিয়ে দেবে মা। আমরা আর তোকে বের করতে পারব না। আবার সেই একই কথা বলব … নিরীহ বাবা-মা, বোনেদের কথা একবার ভেবে দেখ!’
‘তাহলে এক কাজ কর। ঐ শেকড়টাকে দাও। নিয়ম করে বাঁধি হাতে। তারপর…।’
‘দূর পাগলি! ওতে কিছু হয়? সে আমি ফেলে দিয়েছি না! আমি একজন বিজ্ঞানকর্মী। বাদ দে! এত কথা বললাম। তার একটাই কারণ… কে, কীভাবে, কোথায়… আরও বিপদে ফেলবে ঠিক নেই। তাই মাথা ঠান্ডা রাখতেই হবে। শোন আজ হাইকোর্টের উকিলের কাছে গিয়েছিলাম… কী রে? আওয়াজ নেই কেন?’
জবাব দিতে ইচ্ছে করে না রাশির। তাও বলে,
‘বল, তারপর…।’
‘খুব একটা লাভ হল না রে! কোর্টে দাঁড়াতে অনেক, অনেক টাকা চাইছে। তাই আর সাহস করে বলতেও পারলাম না, জেরার সময় তো থানায় যেতে হবে? কী খাঁই… এই উকিলদের!’
‘তা কেন দিদি, টিভিতে দেখাচ্ছে, কত উকিল, তারা কল্যাণী-মায়ের কেস একসাথে, হাইকোর্টে, নীচের কোর্টে, সুপ্রিমকোর্টে লড়ছে বিনা পয়সায়। আরও কত বড় বড় সেলিব্রিটি, যারা প্রতিবাদ করছে তাদেরও তো মিথ্যে কেসে নাজেহাল করা হচ্ছে… সেইসব কেসও তো টিভিতে যে উকিলবাবুরা রোজ সন্ধেবেলায় তর্ক করছে, ঝগড়া করছে, তারাই এক পয়সা না নিয়ে লড়ছে… এ তো সবাই জানে!’
‘তুই বড্ড বাচ্চা রে! অনেক কিছুই বুঝবি না। শান্ত থাক। উকিল জোগাড় করব, ঠিক খুঁজে আনব, ভাল উকিল। টাকা নেই তো কী? কালেকশান করব।’
‘টাকা তুলবে? আমার জন্য? না, না…আমার জন্য অত নীচু হওয়ার দরকার নেই। শোনো, তোমায় একটা কথা বলা হয়নি। আমার বন্ধু পিয়ার-মা; কাকিমা, উকিল দেখেছে, আমাদের দুজনের জন্যই। পিয়াও তো আমার সাথে ছিল। সেও খুব মার খেয়েছে।’
‘বাহ!... এ তো মেঘভাঙা রোদ রে! কী করেন ভদ্রমহিলা? কিন্তু যেমনই উকিল হোক, টাকা কম নেবে না!’
‘কিছু করে না গো। পিয়ার বাবার মুদিখানা দোকান আছে। ওরা নন-বেঙ্গলি।’
‘তাহলে? ভদ্রমহিলা কোথায় পাবে টাকা?’
‘তা তো জানি না!’
‘বেশ! ছাড়… জানতে হবে না। তিনি যখন ভেবেছেন, রাস্তাও তাঁর নিশ্চই জানা আছে। যদি লাগে আমায় জানাস। আমি রাখলাম রে! এবার শুয়ে পড়তে হবে। সকাল থেকেই তো টিউশানি জানিস।’
গলিরাস্তাতে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল রাশি। আব্বা, সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়ে। বেশি রাত জাগতে পারে না এখন। ছোট বোনটা মায়ের সাথে, গলির মুখের কলতলায় গেছে এঁটো বাসনকোসন ধুতে। এতদিন রাশি ধুত, কিন্তু এই কদিন মা তাকে যেতে দিচ্ছে না। মেজ বোনটা ঘরের ভেতর। ভাঙা টিভিটা চালিয়ে দিয়ে এসেছে রাশি। বলেছে একদম আওয়াজ না দিয়ে দেখতে।টিভিতে দেখে সিনেমার নাচ হুবুহু নকল করে মেয়েটা। ইচ্ছে, রিয়েলিটি শো-এ যাবে। আম্মা একদিন মেরে ফাটা খুন্তিটা দুটুকরো করে দিয়েছে। তবু মেয়েটার কী জেদ! ওদের ঘর থেকে না আসলেও সারা পাড়ার খোলা জানালা থেকেই হিন্দি-বাংলা গানের টুকরো আর, বুকের ভেতর ধাক্কা মারছে এমন উদ্দাম বাজনা ভেসে আসছে। প্রত্যেকটাই আলাদা। সবকটা জট পাকিয়ে, মাথার ভেতরটা যেন সিমেন্ট দিয়ে জমিয়ে দেবে। কী কষ্ট করে যে এতক্ষণ ও রুবিদির সাথে কথা বলল। মাথাটা হালকা করার জন্য আকাশের দিকে তাকায় ও। অনেক অনেক উঁচুতে আকাশ। সাদাটে-ফ্যাকাশে আলো। সেই আকাশকে ঢেকে রেখেছে। চাঁদ নেই। অনেক খুঁজে একটা তারাকেও রাশি দেখতে পায় না। মনের ভেতরটা কেন যেন আকুলিবিকুলি করে ওঠে।
‘মুশকিল আসান…’
এ কী! মুশকিল আসান? রাতে… এত রাতে?
ওর ঠিক সামনে কালো আলখাল্লায় নীল-লাল-সবুজ সুতো আর চুমকির কাজ, মাথাতেও একই কাপড়ের ও নক্সার স্কার্ফ। সরু সরু চোখে সুরমা। হাতের চামড় নড়ছে।
‘মুশকিল আসান…’
চড়া আতরের গন্ধ ভুরভুর করছে। ডানহাতে চামর দুলছে।
‘কী রে বেটি? দুয়া লিবি না?’
রাশি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।
‘কেন নেবে না? কেন নেবে না? পীরবাবা, আমাদের বড্ড বিপদ, কাঁটেওয়ালা মুসিব্বতে ফেসে গেছে আমার লেড়কি! ওকে দুয়া কর। কিন্তু বাইরে কেন। রাস্তায় কেন? ঘরে… ঘরে চল। আর তুমি একা কেন? আরবারও তো চার-পাঁচজন এসেছিলে?’
আম্মা এসে গেছে। কাঁকালে বাসনের গাদা নিয়েও দিব্ব্যি কদমবুশি করে ফেলল। রাশিকে চোখ দিয়ে ইশারা করে, ওকেও বলল কদমবুশি করতে। রাশি চুপ করে সেই দাঁড়িয়েই আছে। আম্মা নিয়ে গেল লোকটাকে ঘরের মধ্যে।
আব্বা ঘুম থেকে উঠে বসে দুচোখ কচলাচ্ছে। টিভি বন্ধ। বোনদুটোর চোখে বিস্ময় আর বিরক্তি একসাথে। আম্মা, এই গরমে গায়ের ওপর চাদরটা ফেলে, মাথার কাপড় বেশ গুছিয়ে নিয়েছে,
‘আমরা দরবেশ, মালিকের ডাক এলে দিনরাত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয়। ওরা সব এক একদিকে গেল। আমি এদিকে এলাম। প্যাহেলা দফা, তুমাদের কথা মনে পড়ল। তোমার বড় মেয়েটার জন্য মাটি পড়ে দিয়ে গিয়েছিলাম। অনেক ফাঁড়া ছিল। মনে আছে?’
আব্বা-আম্মা দুজনেই মাথা নাড়ায়। বোনগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে, এইবার ম্যাজিক শুরু হবে।
‘মুসিব্বত… কী মুসিব্বত বাবা?’
আব্বার দিকে তাকিয়েছে লোকটা। আব্বা তার দিকে তাকিয়েই কেঁদে ফেলল।
‘থাক, থাক…র্যাহম কোরো। আঁসু পোছো। হাম জানতে হ্যায়!’
হায় আল্লা! এ তো… আরেকজন! এ কী করে জানল? রাশি ছটফট করে ওঠে। ও কি জানতে চাইবে? কিন্তু এই পীরবাবা তো ওদের বাড়ি, এর আগেও বহুবার এসেছে। ওর কাছে চামড়ের ছোঁয়া পাওয়ার জন্য, মেজ বোনের সঙ্গে মারামারিও করেছে রাশি। সেই মানুষটা?
‘দেখ, সব মালিকের কেরামতি… আয় তো বেটি, এদিকে আয়…’
লোকটার সরু চোখের মায়াডাকে বারবার এগিয়ে যায় রাশি, আজও গেল। মাথা হয়ে সারা শরীরে চামড়ের স্পর্শে এক অদ্ভূত মমতা! প্রতিবারের মত আধবোজা দুচোখে বিড়বিড় করে অচেনা, সম্ভবত আরবিতে কী যেন বলে যায় সে! তারপর বলে,
‘যা ঝেড়ে দিলাম। কেউ আর তোকে কিছু করতে পারবে না…’
রাশির দুচোখ স্থির। মনে পড়ল একটু আগে রুবিদির বলা স্টেশনের কথাগুলো। কান্নার এক গমক উঠে এসে গলায় আটকে গেল,
‘ঐ বুড়ি কল্যাণী-মাকে কেউ একটু দোয়া করে দিতে পারনি গো…’
‘বেটি … বো বেহেশত মে হ্যায়… হাঁ! বিলকুল… হাম দেখেঁ হ্যায়। হামলোগ দেখ সাকতে হ্যায়!’
‘তাকে বেহেশতে রাখতে এই দুনিয়াটাকে আর কতদিন জাহান্নাম বানিয়ে রাখবে গো?’
রাশি চায় না। তাও, ওর গলা আর দুচোখের বাঁধ ভেঙে যায়। আম্মা-আব্বা-বোনেরা, মুশকিল-আসান সেই মায়াবী মানুষ, সবাই তাকিয়ে থাকে…’
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
মন্তব্য করুন