ডিক্লাইন অফ লাইফ। মানুষ যেন আকাশ থেকে পড়ে যাচ্ছে। মানুষ যেন তার আশা ভরসা থেকে পড়ে যাচ্ছে। বকুল পিসি পড়ে যাচ্ছে, পড়ে যাচ্ছে। তারপর একটু একটু করে সে সরে যাচ্ছে স্টেজ থেকে। সেখানে অন্য কেউ এসে তার জায়গায় বসে যাচ্ছে।
সাত
—বাবা তুমি আমার নেমে এলে কেন? সন্ধ্যা মাসি তো ছিল। তাকে নাহয় পাঠাতে।
—তুই ঘরে আয়, এতক্ষণ কোথায় ছিলি?
—কেন ক্লাবে ছিলাম তো।
—তাহলে এমন গাড়ি করে দিতে এল যে তোকে?
—ও আসলে কিছু না। মাথাটা ঘুরে গেছিল তাই। ওরা খুব ভালোবাসে তো। তাই ছাড়তে এসেছে।
—ঘরে আয়, কথা আছে।
আমি রোহিণীকে বিদায়ী করলাম। হ্যাঁ। ঠিক তা-ই, যাকে বলে বিদায়ী। কেননা তার গাড়িটা পথ জোড়া করে বসে আছে। আগে-পিছে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে পড়েছে আর দেখে যাচ্ছে গাড়িতে কে রয়েছে। আমি অবশ্যই কোনো নেতা নই, বা কোনো তারকা। হ্যাঁ লোকে যাকে বলে এলিয়েন তা হয়তো ভাবতে বসেছে। সবেরই তো একটা সীমা রয়েছে। এখন এই যে এতটা দেখানোর মনোভাব তাও আবার কাউন্সিলারের কাছের মানুষ, তাহলে এমএলএ। বা এমপি–রা কি মাঠে মারা যাবে?
রোহিণী চলে গেল। বলে গেল, তুমি পালটাওনি।
আমি জানালাম, কেন পালটাব?
কিন্তু আমি জানি, না পালটালে জীবন সেই যে, যে দেরাজ দেখে এসেছি বকুল পিসির বাড়ি, সেখানে ফটো হয়ে রয়ে যাবে। বাবা বলল ঘরে আয় তাড়াতাড়ি। লিফটে করে যখন উপরের দিকে উঠে যাচ্ছি চোখ বন্ধ করলাম কয়েক সেকেন্ড। লিফটের দেয়াল বকুল পিসির সাদা কাপড়ের মতো বিবর্ণ হয়ে গেল। কেন জানিনা মনটা উদাস হয়ে গেল আচমকা।
কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
আট
—বকুল পিসি বকুল পিসি বরফ আছে?
—কেন রে বরফ কী করবি?
যে-ছেলে বরফ আনতে গিয়েছিল সে জানাল ঘটনা। তখন আমি ক্লাস ফাইভ। সারাদিন সাইকেল চালাই। স্কুল থেকে ফেরা কি সাইকেল নিয়ে ধাঁ। হয় বাবার নয় তো কাকার সাইকেল। যেটা পাওয়া গেল। তার আগে চাকা চালাতাম। তখন ক্লাস টু। তারপর যখন একটু বড়ো হয়ে গেলাম, মানে ক্লাস টু-তেই হাফ প্যাটেল শিখে গেলাম, তখন থেকে সাইকেল চালাই। চাকা আর চালাই না। তারপর তো অনেক বড়ো হয়ে ফুল প্যাটেলই চালাচ্ছি। বাকিরা তখনও আমাকে সাইকেল চালাতে দেখে। আমি এ-স্ট্রিট থেকে ও-স্ট্রিট সাইকেল চালিয়ে বেড়াই। কাউকে আর তেমন দরকার পড়ে না।
একদিন সে কোন দিন তা আর মনে নেই কিন্তু একদিন, কেন জানি না তাদের মধ্যে থেকে একজন আমাকে খেলতে ডাকল। তারা ডাংগুলি খেলছিল। ছেলে কম পড়েছে সেদিন। তাই একজন চাই। নাহলে টিম বানিয়ে খেলা যাবে না। গুনতিতে বেজোড় সংখ্যক ছেলে এসেছে। তাহলে টিম বানালে একদিকে ছেলে বেশি। একদিকে ছেলে কম। একজন চাই। সাইকেল রেখে নেমে পড়লাম। ডাংগুলি অনেকদিন খেলিনি, বেশ খেলায় মন। সেভাবেই কিছুটা সাইকেল থেকে দূরে চলে এলাম। এখন আমি ঘর থেকে সাইকেল নিয়ে মাঠে চলে আসি। সাইকেল রেখে এখন ডাংগুলি খেলি।
খেলার মতো নেশা কি আর কিছুতে আছে। যারা যারা ডাংগুলি খেলেনি তাদের বোঝাই কী করে? টিম বানিয়ে খেলা আরও আরও মজার। যে-টিম হারবে তাদের খাটাতে নিয়ে যাবে জিতে যাওয়া টিম। ডাং দিয়ে গুলিকে মেরে মেরে নিয়ে যাবে যতদূর সম্ভব। টিমের প্রতিটি ছেলে তিন বার করে মারার সুযোগ পাবে। এইভাবে যতদূর যাওয়া যায়। এবং সেই দূরত্বটা খুব একটা কম নয়। টিমে ছেলে বেশি থাকলে দেড় দু-কিলোমিটারও হয়ে যায়। আর যেখানে তারা শেষ করল, সেখান থেকে হেরে যাওয়া টিমের ছেলেরা চুউউউ করে একদমে ছুটে আসবে, এবং রিলে করে টিমের বাকি ছেলেরা প্রত্যেকে চুউউউ করে খেলার কোর্ট পর্যন্ত ফিরে আসবে। পুরোটা না ফিরতে পারলে, সেখানে থেকে আবার খাটাবে জিতে যাওয়া টিমের ছেলেরা। কিন্তু এবার দু-বার করে ডাং দিয়ে গুলিকে মারার সুযোগ। খেলাটা শেষ করাই যাবে না।
তা এমনই একদিন আমার টিম হেরে গিয়েছে। আমরা খাটছি। ওরা আমাদের নিয়ে গিয়েছে অনেকটা। আমাদের চুউউউ করে ফিরে আসতে হবে। আমরা সেভাবেই ফিরে আসছি। রিলেতে আমিই শেষ ছেলে। আমি দৌড়চ্ছি, আর পাশে আমার টিমের একটা ছেলেই আমাকে ভেঙাচ্ছে, যাতে হেসে ফেলে দম ছেড়েদি। এই কাজটা অপনেন্ট টিমের। ওরা ডিস্টার্ব করবে, যাতে এরা দম ছেড়ে দেয়। কিন্তু সেদিন কেন জানি না সেই কাজটা করছিল আমার টিমেরই একটা ছেলে। আর খুবই দুর্ভাগ্যের আমি দম ছেড়ে হেসে ফেলেছি। তাহলে এখান থেকে আবার খাটো। মুখে হাসি কিন্তু মনে রাগ। হাতে ছিল ডাং। আমার হাতেই কেন সেদিন ডাং ছিল কে জানে? ডাং দিয়ে এক বাড়ি বসিয়ে দি ছেলেটির ঘাড়ে। সে-ছেলে আমার থেকে দু-বছরের ছোটো ছিল। আমি ক্লাস ফাইভ সে ক্লাস থ্রি। সে-ছেলে তখনই অজ্ঞান হয়ে সেখানেই পড়ে গেল।
—বকুল পিসি বরফ দাও না।
—কী করলি তোরা।
বুকুদা ছুটে এসে সে ছেলেকে কোলে করে তুলে নিয়ে এসেছে। শুইয়ে দিয়েছে তাদের বারান্দায়। তখন ফ্রিজ ক-জনের ঘরেই-বা ছিল। বকুল পিসি ফ্রিজ থেকে বরফ বার করে আমাদের দিয়েছে।
—বকুলদির বাড়িতে ফ্রিজ এসে গিয়েছে।
—তাই নাকি কবে? জানি না তো।
—কী করে জানবে। ওসব তলে তলে।
—বকুলদি ভাবাই যায় না। ফ্রিজের ঠাণ্ডা জল খাচ্ছে।
—আর আমরা কচু।
বকুলদি কয়েকদিন ঘর থেকে বেরয়নি। ঘরেই থেকেছে। হাউস অ্যারেস্ট। স্বেচ্ছায় কিন্তু, কারোর প্ররোচনায় নয়। তাই হয় যখন এভাবে একটানা অভিযোগ ঘরের দাওয়ায় এসে বসে তখন মানুষ কিছুটা থমকে যায়। বাস্তবে সে তো আর সেখানে কিছু দাবি রাখতে পারবে না। তার সে ক্ষমতা নেই। বা বলতে গেলে ইচ্ছেই নেই। আর ইচ্ছে থাকবেই-বা কেন। তাকে যখন ডেকে পাঠানো হবে অফিসে সে দেখবে তার দিকে শতসহস্র চোখ তাকিয়ে রয়েছে একটানা অভিযোগ নিয়ে। জিজ্ঞাসা করো তো কারোর কিছু বলার নেই। না জিজ্ঞাসা করো তো অনেক কিছু আছে বলার। আর সেই অনেক কিছুর মধ্যেই বকুল পিসি দেখছে একটা নতুন দল যেন তাকে ঠেলে দিতে চাইছে। তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে চাইছে। এ-দলের কেউকে সে তেমন চেনে না। না-চেনার কারণ হল এরা তেমন কিছুই করেনি এতদিন।
কিন্তু না তার বুঝতে ভুল হয়েছে, এরা এতদিন কিছু করেনি নয়, এরা অপেক্ষা করেছে। একদিন এদের সময় আসবে, একদিন। সেদিন তারা দেখিয়ে দেবে কত ধানে কত চাল। বকুলদির এই নেতাগিরি ঘুচিয়ে দেবে যাকে বলে। বকুল পিসি জিজ্ঞাসা করে, কেন ডেকে ছিলেন আমাকে?
তেমন কোনো উত্তর নেই। শুধু দেখিয়ে দেওয়া এই। এই যা কিছু এখন দেখানোর ছিল। এখন শ্রেণী সংগ্রাম পুরোনো হয়ে গিয়েছে। এখন শ্রেণী সমন্বয়। তাই তোমার সে পুরোনো চিন্তাধারা এখন আর চলে না। আমরা ওরা থেকে ফিরে এসে এখন আমরা আর আমরা।
বকুল পিসি যখন ঘরে ফিরে দেখে ছেলে খেলে এসে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তার বাবা এখনও দোকান থেকে ফিরে আসেনি। এই হয়তো ফিরবে। সে একজন কারখানার সাধারণ শ্রমিক ছিল, অনেক আগে অবসর নিয়েছে। তখন এতটাই বেতন কম ছিল যে তাকে আবার টেলারিং-এর দোকান দিতে হয়। টেলারিঙের কাজটা ভাগ্যিস সে পারত। ঘর আর কারখানা এই নিয়েই যদি কাটিয়ে দিত জীবন তাহলে এখন চলত কীভাবে?
ডিক্লাইন অফ লাইফ। মানুষ যেন আকাশ থেকে পড়ে যাচ্ছে। মানুষ যেন তার আশা ভরসা থেকে পড়ে যাচ্ছে। বকুল পিসি পড়ে যাচ্ছে, পড়ে যাচ্ছে। তারপর একটু একটু করে সে সরে যাচ্ছে স্টেজ থেকে। সেখানে অন্য কেউ এসে তার জায়গায় বসে যাচ্ছে।
আমার আবার হঠাৎ করে বকুল পিসির কথা মনে আসছে কেন কে জানে? আমি লিফটে করে উপরে উঠে যাচ্ছি তাই? না কি অন্য কিছু। না কি বাবা আমাকে টেনে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। বাবা বলছে,
—জানিস আজ কী হয়েছে?
—কেন কী হয়েছে?
—আজ আমাদের ওয়াচ-ম্যান বলেছে সে আর কাজে থাকবে না। সে নাকি এখানে অন্য কিছু গন্ধ পাচ্ছে।
—অন্য গন্ধ মানে?
—মানে কিছু একটা যা বলে বোঝানো যাবে না। অনুভব করতে হবে।
—সে আবার কি! অনুভব বলতে? কিছু একটা তো বলতেই হবে। কেন সে আর থাকতে চায় না।
—বলেছে সে নাকি এখন দিনেদুপুরে দেখে জগতটা উলটে যাচ্ছে।
আমার হাত পা কেমন যেন ঠাণ্ডা হয়ে আসতে লাগল। আমি লিফট থেকে পড়ে যাব পড়ে যাব মনে হতে লাগল। কিছু একটা ধরে কোনোভাবে যদি উপরে উঠে যাই তো রক্ষা।
—ও, তাই।
—তাই মানে। তুই কি ওকে কিছু বলেছিস?
—না বলিনি কিন্তু ও ব্যাটা দিনেদুপুরে ঘুমায়। আর বলে সে নাকি দেখছে সব কেমন উলটে যাচ্ছে।
—সে তো আমাকেও বলেছে। কিন্তু এভাবে চলে গেলে কি চলবে?
—নতুন লোক দেখো। কত বেকার চারিদিকে।
—আরে বেকার বললেই কি চলে নাকি। একটা বিশ্বাসের জায়গা থাকতে হবে না। আমার এত টাকা ইনভেস্ট। এভাবে কি ডুবে যাওয়া যায়?
আমরা এখন ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। বেল বাজল। বেল বাজল। বেল বাজতে থাকল। কিন্তু দরজা খোলার কেউ নেই। এই তো সন্ধ্যা মাসি ঘরে ছিল। এর মধ্যেই কি বেরিয়ে গেল। একটা লিফট চলছে অন্যটা আজ বন্ধ। তাহলে সে গেল কোথা দিয়ে। আমার আবার হাত পা কেমন যেন ঝিম ধরে আসতে লাগল। মনে হল তাড়াতাড়ি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ি। অথচ দরজা খোলার কেউ নেই। চোখ অন্ধকার করে এল।
—এই তাকাও তাকাও দেখো আমি কি নিয়ে এসেছি?
—কী এনেছ?
—দেখো না আমি একটা নতুন ধরনের মিষ্টি এনেছি। ঘরে বানানো। মা বানিয়েছে। আমাকে বলেছে তোমাকে দিতে।
—সে কি তোমার মা আমাকে মিষ্টি দিতে বলেছে।
—হ্যাঁ বলেছে তো। আগে তাকাও, তারপর না দেবো।
আমি তাকালাম, দেখলাম মিষ্টি আর তার মা। উপরের দিক থেকে নীচের দিকে হেঁটমুণ্ডু ঝুলে আছে। আর সেটাই যেন স্বাভাবিক। তারা আমার জন্য কিছু একটা বানিয়ে এনেছে। হেঁটেই এসেছে আমাদের ঘরে। ঘর কিন্তু এটা নয়। তখন আমরা বাবার কোয়ার্টারে থাকতাম। সেই ছোট্ট কোয়ার্টারে এসেছে। আমি দাঁড়িয়ে দেখছি তারা হাত বাড়িয়ে আমাকে খাওয়াচ্ছে। আমি মুখ খুলছি। তার মা হাতে করে খাইয়ে দিচ্ছে। আমি মিষ্টিকে বলছি দারুণ হয়েছে, তুমি একটু খাও। কিন্তু আমি মিষ্টিকে কেন তুমি করে ডাকছি জানি না। আর সেই-বা কেন আমাকে তুমি বলছে কে জানে? আমি হাতে করে আমার মুখ থেকে বাকিটা তার দিকে বাড়িয়ে দিচ্ছি সে হাঁ করছে। উলটোভাবেই সে খেয়ে নিচ্ছে। মনে হচ্ছে তার পৃথিবীটা অন্য। আমারটা অন্য। নাহলে তো তার কাপড় নীচের দিকে ঝুলে যেত। কিন্তু না তার স্কার্ট তো তার পায়ের দিকেই রয়েছে। তাহলে?—কি রে চোখ বুজে কী করছিস?
—কই চোখ বুজে? আমি তো? মিষ্টি খাচ্ছিলাম। মানে তুমি আর আমি। ও আচ্ছা, দরজা খুলল কেউ।
—না আমার কাছে চাবি ছিল। তাই দিয়ে খুলেছি। তুই ঘরে আয়।
ঘরে এলাম। বসলাম সোফায়। টিভি অন করলাম। তারপর মাথাটা হেলিয়ে দিলাম সোফায়। কী দেখলাম এতক্ষণ। কেন দেখলাম? মিষ্টির সাথে তো তেমন কিছু ছিল না। বন্ধু ছিল বরাবর। তাদের ঘরে একবার গেছিলাম। কিন্তু সে অনেক আগে। তখন একবার তার মায়ের সাথে আলাপ হয়। কিন্তু সেসব তো বছর দশ হয়ে গেল। সে তো এখন অন্য কারোর ঘর করে। জানি না ঠিক, তবে করে নিশ্চয়ই। বিয়ে না দিয়ে কি বসে আছে তার ঘরের লোকজন।
মিষ্টির অনেকদিন এভাবে আর কোনো খবর নেওয়া হয়নি। কেন জানি না মনে হয়েছে না নেওয়াই ভালো। সব খবর নিলে মানুষ বড়ো দ্বিধায় পড়ে। যে খবর নিচ্ছে তাকে না ফেলা যায় না গেলা যায় পুরোটা। তখন এক লুকোচুরি চলে প্রকাশ্যে। তেমন কিছু যত কম হয় ততই ভালো। তাই আমি আর মিষ্টি তেমন কোনো স্মৃতি রাখতে চাইনি। বন্ধুত্ব গড়িয়ে গিয়েছে শতকোটি বছর। তাও কিছু কিছু মুহূর্ত তো থেকেই যায়।
সেই যেমন একদিন, সেদিন কলেজ কেন জানি না একটা ক্লাস হয়েই বন্ধ হয়ে গেল। আমি আর মিষ্টি ছিলাম আর কেউ যায়নি। ফেরার গাড়ি দেরি আছে। তাই কখনো বসে কখনো দাঁড়িয়ে সময় পার করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। মিষ্টি তখন মাঝে মাঝে আমাকে তুমি করে ডেকে বসত। হয়তো ওর ভালো লাগত তাই। আমি বাধা দিতাম না। আমারও ভিতরে একটা সুড়সুড়ি জাগত সে-বিষয়ে দ্বিধা নেই। কিন্তু তাকে লালন করিনি, এই যা তফাত। আর ততদিনে রোহিণী যা করার তা করে বসে আছে। মিষ্টি সেটাই মনে করিয়ে ঠাট্টা করে। সেদিন আবার কথায় কথায় বলল,
—কি গো খুব তো রোহিণীকে দেখতে, এখন কী হল?
সে আগেও এমন কথা বলেছে তখন শুধু সম্বোধনটা তুই ছিল। তখন বলতো, কিরে খুব তো রোহিণীকে দেখতি, এখন?
বার বার একই কথা, কত আর ভালো লাগে আমিও কিছু একটা বলার জন্য কথা খুঁজে যাচ্ছি কিন্তু সঠিক কথা আর খুঁজে পাচ্ছি না। হঠাৎ সে আবার বলে বসল।
—কি গো খুব তো রোহিণীকে দেখতে, এখন কী হল?
আমার মাথা ঘুরে গেল, আমি ওর পাছায় আচ্ছা করে একটা চিমটি কেটে বললাম।
—তো কী হয়েছে? এখন এখানে রোহিণী নেই। আমি আর তুমি।
আমিও সেদিন অজান্তে তুমি বলে ফেলি। তাও আবার পাছায় চিমটি কেটে। মিষ্টি কিছু আর বলেনি। শুধু কিছুক্ষণ চুপ করে ছিল। আমিও কিছুটা চুপ থেকে বলেছিলাম, লেগেছে? সে মাথা নেড়েছিল, না। আর মুখে বলে ছিল বেশি লাগেনি। আমি আরও কিছু পরে তার দিকে তাকাতে সে...
নাঃ আর বলা যাবে না। বাকিটুকু না বলা থাক। লটারির টিকিত কেটে আজ পর্যন্ত মেলাতে যাইনি। টিকিটটা বালিশের নীচে রেখে ঘুমিয়েছি।
এখন চোখ বুজে এল। সঙ্গে সঙ্গে ভয়ে গুটিয়ে গেল ইয়ে। চোখ বুজলেই যদি অন্য কিছু দেখি। ভয়ে চোখ খুললাম। দেখি সেই সিঁদুর লাগা পাথরটা আমার সিলিঙে উঠে গেছে। কিন্তু সিলিঙে কীকরে গেল। ওখান থেকে তো পড়ে যাওয়ার কথা। ওখানে লেগে আছে কীভাবে? তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। তারপর মনে হল পাথরটা আমাকে ডাকছে। আমি সোফার উপর উঠে দাঁড়ালাম। তাও হাত পেলাম না। তারপর সোফায় একটা ‘টুল’ রেখে, খুব আস্তে আস্তে উঠে হাত বাড়ালাম পাথরটার দিকে। মনে হল মিষ্টি কিছুক্ষণ আগে এখানেই দাঁড়িয়ে ছিল। আমি তার পয়ের থেকে কাপড় সরাবার জন্য হাত বাড়ালাম। সে নিজেই ডাকছিল। এখন আমার হাত পৌঁছে গেল পাথরে। আমি তাকে যেন আম পাড়ার মতো করে পেড়ে নিলাম। রাখলাম সামনের টি টেবিলে।
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই,ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
মন্তব্য করুন