preloader
বাংলা বইয়ের e-ভুবন
Menu Categories Search Cart 0
Menu
Cart

Total 0 Items

☹ Your cart is empty

Sub Total:

$0

₹0

বিভাগ
ব্যবচ্ছেদ: পর্ব ১২
ধারাবাহিক

ব্যবচ্ছেদ: পর্ব ১২

এখন দেখছি আমার সামনের হেঁটমুণ্ড পৃথিবীতে কিছু মহিলা এসেছে। এদের আমি চিনি। কোনো কালে বকুল পিসির সাথে থাকত। এসেই সাধকের দিকে তাকিয়ে বলেছে, আপনি এখানে? সাধক বলেছে, এমনি এসেছি, কোনো কারণ নেই। মহিলারা আমার নাম ধরে ডেকেছে, বলেছে, রোহিণী চায় আমি এখনই দেখা করি। জিজ্ঞাসা করেছি, এখনই? কিন্তু কেন? তারা জানিয়েছে রোহিণীর এক অভিশপ্ত দেবী। এখন সে বসে আছে পরিমিত পাপের জন্য।

বারো

অভিশপ্ত জীবন ততক্ষণই বেঁচে থাকে যতক্ষণ তার গায়ে গা না ঘষে অন্য কোনো পাপ। অবশ্য দেখতে গেলে কে যে কার গায়ে গা ঘষছে তা অন্য কেউ কীকরে জানবে? জানালা খুললে দেখা যাবে বাবা আবার হেঁটে চলে যাচ্ছে। যাওয়ার সময় বলেও গেল না। তবে একবার জিজ্ঞাসা করেছিল, তোর মা কোথায়? বলেছিলাম, জানি না। আর কথা হয়নি। আর কথা ছিল না তাই কথা হয়নি। এখন দেখছি আমার সামনের হেঁটমুণ্ড পৃথিবীতে কিছু মহিলা এসেছে। এদের আমি চিনি। কোনো কালে বকুল পিসির সাথে থাকত। এসেই সাধকের দিকে তাকিয়ে বলেছে, আপনি এখানে? সাধক বলেছে, এমনি এসেছি, কোনো কারণ নেই। মহিলারা আমার নাম ধরে ডেকেছে, বলেছে, রোহিণী চায় আমি এখনই দেখা করি। জিজ্ঞাসা করেছি, এখনই? কিন্তু কেন? তারা জানিয়েছে রোহিণীর এক অভিশপ্ত দেবী। এখন সে বসে আছে পরিমিত পাপের জন্য।

—সে কি, এখনও তার সহবাসে চরম সুখ পাওয়া হয়নি? সেই ক্ষরণের মুহূর্ত কি কেউ পারেনি দিতে?
—না পারাই স্বাভাবিক, কারণ তোমরা তো...
—আমরা কী? কী করেছি? মাস্টারকে সেদিন খুন তো করিনি, সামান্য লাথি মেরেছিলাম।
—তারপর সে নপুংসক হয়ে যায়।

কথাটা এখানে আটকে গেল। যেমন কথা গলায় আটকে যায়। মাছের কাঁটা আটকে যাওয়ার মতো। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা এ-প্রবাদ শুনে আসছি সেই কোন যুগ থেকে কিন্তু কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে কী পরিমাণ গলায় রক্তক্ষরণ হয়েছে তার কোনো খোঁজ রাখিনি। তাকিয়ে দেখলাম লিভিং রুমে যেখানে বিপ্লবদা বসেছিল নিখিলের সাথে সেখানে এখন এক শূন্যতা রয়েছে। একা কার্তিক বসে আছে আর মোবাইল দেখছে। যেন কিছুই হয়নি। যা সব হচ্ছে বা ঘটছে সব জলভাতের মতো তরল। হেঁকে ডাকলাম, কিরে বাকিসব গেল কোথায়? কার্তিক বলল, ওরা বেরিয়েছে। বুঝলাম নিখিল এই পা বাড়াচ্ছে বিপ্লবদার সাথে সাথে। একজন প্রাক্তন প্লেয়ার, ভালো মার্কেটিং হবে। যাইহোক আর কিছু না হলেও এরা সব আমাদের জগতেই তো রয়েছে, উলটে যায়নি। সেটাই মন্দের ভালো।

এক নিখিল যাচ্ছে প্রথম রাজনৈতিক সফরে। আরেক নিখিল বসে আছে ঘরে। তার কি বেশি কিছু দাবি নাকি? আর রোহিণী? বাবা হয়তো বাসনা মাসিকে খুঁজতে গেল। তারও কিছু দাবি বাকি আছে।

আবার ডাক পেলাম, তোমাকে রোহিণী ডাকছে। কিন্তু কেন? আর ডাকছে কোথায়? কোথায় যেতে হবে আমাকে? তার ঘর। তার অফিস। তার সংসার। ওঃ, ভুল বললাম তার সংসার তো ভেঙে দিয়ে এসেছি। তাহলে যাব কোথায়? সে অবশ্য আমার ঘর চেনে। দরকার থাকলে আসতে পারে। এভাবে ডেকে নিয়ে যাওয়ার দরকার কী? এ তো সেই রাতের অন্ধকারে বাড়া ভাতের থালা থেকে মানুষকে ডেকে নিয়ে যাওয়া। সে আর কোনোদিন ফিরবে না।

কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’

অথচ একটা খবর ফিরবে, বা একটা খবর ঘুরে ঘুরে নিজের কথা বলে বেড়াবে সব্বাইকে। আজকাল যাকে ভাইরাল বলে, আগে বলতো রটনা। উঠে পড়লাম। সেই সাধকের দিকে তাকিয়ে বললাম, তাহলে তো আমাকে এখন বেরোতে হয়। সে বলল, ফিরে এসে কী দেখলে আমাকে লিখে জানিও।

দরজা খোলা রেখে বেরিয়ে গেলাম। এখানে যেন আর কিছু নেই। ও ফ্ল্যাট এখন আর আমার ঘর নয়, মনে হচ্ছে ঘর অনেকদিন আগেই কোথাও হারিয়ে এসেছি। সেই যে যেখানে আগে থাকতাম যখন বাবা চাকরি করত। সেই আমাদের টাউনশিপ, সেই ছোটো ছোটো কোয়ার্টার সেটাই ঘর ছিল। দেশের বাড়ি বলতে লোকে যা বোঝে। ছেলেবেলায় যে-মাঠে খেলেছি। সাইকেল চালিয়েছি যেসব স্ট্রিট রোড দিয়ে, ডাকছে। আমাকে যেতে হবে। বাইরে দেখি সেই গাড়িটা দাঁড়িয়ে আছে যে আমাকে ছাড়তে এসেছিল। উঠে পড়লাম সেই গাড়িতে। গাড়ি চলতে শুরু করল। খোলা জানালা দিয়ে ভেসে এল রোহিণীর গায়ের গন্ধ।

বেল বাজালাম দরজা খুলে সামনে দাঁড়ালো সে। শাড়ি পরেছে। বহুদিন পরে দেখলাম কোনো নারী শাড়ি পরেছে। হয়তো এখন মিষ্টিও শাড়ি পরে। কিন্তু তাকে আর দেখা যাবে না। সে কালের কোন প্রবাহে যে রয়েছে কে জানে? কিন্তু কাল যে আমাকে এখন রোহিণীর সামনে দাঁড় করাবে কে জানত? অথচ সে শাড়ি পরেছে। আটপৌরেভাবে জড়িয়ে রেখেছে গায়ের সাথে। যেমন আমার মা পরে এসেছে আজীবন। বাঁ-হাতের আঁচল কাঁধের উপর, ছেড়ে রাখেনি। জানি পাশ দিয়ে তার বাঁ-দিকের পরিপুষ্ট বুক দেখা যাবে। কিন্তু চোখ যেন তার মুখের কাছেই আটকে রয়েছে। কিছুতেই নামতে পারছে না। আমিও আমার চরিত্রকে আর নামতে পারছি না। বলল, ভিতরে এসো।

ঘরের ভিতর ঘর, তার ভিতর আরও কত না জানি ঘর রয়েছে এখানে। আমি এঘর-ওঘর করে তার পিছে পিছে অন্য এক ঘরে বসলাম। সে বলল, এখন শরীর ভালো লাগছে? বললাম, হ্যাঁ, শরীর তো তেমন খারাপ হয়নি। সে বলল, তবে যে সকালে ক্লাবের বাইরে শুয়েছিলে। বললাম, সে তুমি বুঝবে না। সে হাসল, তারপর জিজ্ঞাসা করল নিখিলদার কথা। তারপর বিপ্লবদার কথা। তারপর দরকারি কথা, অদরকারি কথা। কথা চলতে থাকল আর রোহিণী আমার সামনে হেঁটে বেড়াতে থাকল। আমি বসে আছি খাটের পাশে একটা চেয়ারে। সে যেন আমার চারিদিকে ঘুরে ঘুরে কথা বলে যাচ্ছে। কথা শেষ আর হচ্ছে না। বেড়ে যাচ্ছে কথার পিঠে কথা। বলতে বলতে হঠাৎ বলে বসলাম, তোমার বর কেমন আছে? দাঁড়িয়ে পড়ল সে, একভাবে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। বললাম, বেঁচে আছে তো? কোনো উত্তর দিল না। যেন উত্তর আমার জানা। সোজা সামনে এগিয়ে এল। যেন অনেক দিনের ইচ্ছে আমার সামনে এগিয়ে আসা। যদিও আমি জানি তবুও জানি না।

রোহিণীও জানে আমি কী কী না জানার ভান করতে পারি। সে তাই আঁচল ফেলে দিল বুক থেকে। একমুহূর্তে ভিতরটা কেঁপে উঠল আমার। তার বর হয়তো আমার জন্যই... আমি এখন না বলি কীকরে। তাই কাল আমাদের সামনে এনেছে। সে খুলে ফেলছে একটু একটু করে তার গা থেকে সব। শাড়ি তারপর সায়া তারপর ব্লাউজ। কিন্তু যতক্ষণ সে কাপড় পরে ছিল, আমার ডাইমেনশনে ছিল। যেই সে একটা একটা করে খুলতে শুরু করল, চলে যেতে থাকল মুখোমুখি অন্য ডাইমেনশনে। সব খুলে যখন সে নিউড ততক্ষণে হেঁটমুণ্ড হয়ে গিয়েছে। গোটা জীবনের চাহিদা, বুক দু-খানি, স্ফীত কোমর, যোনিমুখ, তার ঠোঁট, তার হাত শুধু একবার ধরব ভেবেছিলাম। অথচ সে হেঁটমুণ্ড, তার জগতটা উলটে গিয়েছে। চাইলেও কিছু করতে পারব না।

—সমাপ্ত—


কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই,ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন


এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।

Image Description

Agniswar Chakraborty

12 ঘন্টা আগে

খুব ভালো লাগল।


মন্তব্য করুন

লেখক

দেবনাথ সুকান্ত একজন লৌহ ইস্পাত কারখানার শ্রমিক এবং সেই শ্রমিকের চোখ দিয়েই দেখতে চান তাঁর কাঙ্ক্ষিত পৃথিবী, যা উঠে আসে তাঁর যাপিত জীবনের কবিতা এবং গল্প উপন্যাসে। গল্প-উপন্যাসের চরিত্রেরা তাঁর গহন মনের ভিতর রেখে যায় ইস্পাতের মতো দৃঢ় চেতনার সমন্বয়। তার কিছুটা তিনি লেখেন, কিছুটা জমিয়ে রাখেন কালের প্রবাহের জন্য। এর আগে লিখেছেন, ‘ছেদবিন্দু', ‘টানেলের মুখে কিছু হায়ারোগ্লিফ’, ‘এক অপরিহার্য রক্তরেখায়’, ‘অন্ধকারে এক জলস্রোত’-এর মত কাব্যগ্রন্থ, ‘রক্তাক্ত স্পর্শের আলো’-এর মত উপন্যাস। যা আসলে তার অতীতকে খুঁজে নিজেরই মুখ বার করার এক প্রয়াস। তার বেড়ে ওঠা দুর্গাপুরে। চাকরি সূত্রে ঘুরেছেন, হাজারিবাগ, বোকারো, ধানবাদ, রাঁচি আর বার্নপুর। ভালোবাসেন বই পড়তে আর বাঁশি বাজাতে।

অন্যান্য লেখা

দেখতে পারেন