এখন যে প্রশ্ন সব থেকে প্রথমে আসে তা হল, রোহিণীর কি কোনো অবলম্বন দরকার ছিল? না, তেমন তো কোনোদিন বুঝিনি। তবে সে কি কারোর অবলম্বন হওয়ার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিল? তা বলতে গেলে ঝুঁকিই ছিল সবটা কিন্তু প্রশ্নটা তো থেকেই যাচ্ছে। যখন সে তার সেই আধবুড়ো বর নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে তাদের দরজায়। আমি ছিলাম সেখানে, ওঃ, সে যে কি টাফ জব, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা এই। এই যেখানে এখন শুয়ে আছি আর দেখছি রোহিণী এসে সামনে দাঁড়িয়ে আমাকেই দেখে যাচ্ছে। যেমন সেদিন আমি দেখছিলাম তাকে। এক নির্লজ্জ বেহায়ার সাথে কেমন যেন ভাবলেশহীন। কেন? তার কোনো উত্তর নেই।
পাঁচ
কিছু কিছু রাস্তা চিরস্মরণীয় হয়ে থেকে যায় কারোর কাছে। এমন কেউকে চিনি যে সেইসব রাস্তার চিহ্ন নিজের বুকের পাঁজরে লিখেছিল। তারপর সে বুক তুলে রেখেছিল নিজেরই অন্তরালে। যেন অন্য কেউ তো দূরের, সে নিজেও তার কোনো খোঁজ বাকি জীবনে করতে না পারে। বাকি জীবন এভাবেই কেটে যায়, যেন সে সেই রাস্তা দিয়ে কোনোদিন হেঁটে যায়নি। কোনোদিন তেমন কোনো সকাল তার জীবনে আসেনি। সে করেনি কিছু। অন্তত কাউকে বলেনি, সে কিছু করেছিল। বা হয়তো একটা মিথ্যের জাল, না না ভুল বললাম। মিথ্যের জাল নয় সত্যের জাল, আর তার হাতে যে ছুরি রয়েছে সেটা মিথ্যের। সে ভেবে চলেছে, সে সেই জাল কেটে একদিন স্বাধীন হবে, অথচ! স্বাধীনতা তুমি দাঁড়িয়ে রয়েছ শ্মশানভূমির উপর। দেখছ যখন দেহখানি উঠবে চিতায় ঠিক তখনই তুমি স্বাধীন হবে।
এখন যে প্রশ্ন সব থেকে প্রথমে আসে তা হল, রোহিণীর কি কোনো অবলম্বন দরকার ছিল? না, তেমন তো কোনোদিন বুঝিনি। তবে সে কি কারোর অবলম্বন হওয়ার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিল? তা বলতে গেলে ঝুঁকিই ছিল সবটা কিন্তু প্রশ্নটা তো থেকেই যাচ্ছে। যখন সে তার সেই আধবুড়ো বর নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে তাদের দরজায়। আমি ছিলাম সেখানে, ওঃ, সে যে কি টাফ জব, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখা এই। এই যেখানে এখন শুয়ে আছি আর দেখছি রোহিণী এসে সামনে দাঁড়িয়ে আমাকেই দেখে যাচ্ছে। যেমন সেদিন আমি দেখছিলাম তাকে। এক নির্লজ্জ বেহায়ার সাথে কেমন যেন ভাবলেশহীন। কেন? তার কোনো উত্তর নেই। তবেই কি তুমি নারী? তোমাকে বোঝা দুষ্কর।
—কী হয়েছে?
—মাথাটা একটু ঘুরে গেল।
—কেন মাথা ঘুরল?
—বোঝাতে পারব না।
—কী এমন যে বোঝাতে পারবে না। কী হয়েছিল মাথা ঘোরার আগে? তোমার কেন মাথা ঘুরেছিল রোহিণী? সেটা আগে বলো।
—কী হল, কথা বলছ না কেন?
—উঠে বসিয়ে দাও?
—নিজে বসো উঠে, বুড়ো হয়ে গেলে নাকি?
—বুড়োদের তো তোমার ভালো লাগে।
কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
আমি জানি একটা রক্ত ছলকে যাবে তার চোখে। সে তাকিয়ে যেন ভস্ম করে দেবে আমাকে। যদিও সে, সে-কাজ আগেও করতে চেয়েছে। কিন্তু পারেনি। ভস্ম হয়ে যাওয়ার আগেই আমি জল ঢেলে দিয়েছি। দেখা গেছে সেই জল রোহিণী গলায় ঢেলেছে তৃষ্ণার্তের মতো।
—আমাকে বাড়ি পর্যন্ত ছেড়ে আসতে পারবে?
—বাড়িতে কেউ নেই?
—বাবা ছিল, এখন আছে কি না জানা নেই।
—আর কাউকে পাঠাই।
—তোমার ইচ্ছা।
সামনের মোড় ঘুরেই একটা বাম্পার রয়েছে। এবং ছোটো গাড়ি নিয়ে তাকে পেরোনোই একটা চ্যালেঞ্জ। সেখানে গাড়ির নীচের চেসিস সে-বাম্পারে লাগবেই। গাড়ি দাঁড়িয়ে যাবে। ড্রাইভার আবার স্টার্ট দেবে। আমি রোহিণীর দিকে আর সে আমার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করবে। সঙ্গে সঙ্গে ফোন আসবে তার। তার অন্য কোনো চাহনেওয়ালা। যদিও আমি জানি তবুও আমি জানি না। আমি না বলতে বলতেও বলে ফেলব, কত নম্বর?
আবার ওঃ, মুখ থেকে বেরিয়ে গেল। কতবার যে নিজেকে সংযত রাখতে চেয়েও পারিনি, তার কোনো ঠিক নেই। এবং কীকরে যে নিজেকে সংযত রাখতে হয় তাও প্রায় জানা নেই বলতে গেলে। কাজের সময় দেখেছি, যে-কাজ থেকে নিজেকে দূরে রাখব বলে ভেবে রেখেছি অনেকদিন, অসময়ে সে-কাজই করে বসেছি। এ এক স্ববিরোধ, না কি তেমনই কিছু, জানি না। জেনে লাভ নেই। তার চেয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকাই ভালো।
—তোমার ঘর এসে গেল।
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই,ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
মন্তব্য করুন