preloader
বাংলা বইয়ের e-ভুবন
Menu Categories Search Cart 0
Menu
Cart

Total 0 Items

☹ Your cart is empty

Sub Total:

$0

₹0

বিভাগ
চৈতন্যে বধিবে কে!: পর্ব ৫
ধারাবাহিক

চৈতন্যে বধিবে কে!: পর্ব ৫

চূড়ঙ্গগড় থেকে যে হাড়গোড় বিশ্বামিত্র পেয়েছিলেন তা যে মহাপ্রভুরই, সেটা প্রমাণ করার জন্য আরও একটা ইতিহাস লাগবে। সেই সময়কার পুরীর এবং জগন্নাথ মন্দিরের একটা সামগ্রিক ইতিহাস। সেই ইতিহাস এবং এই বংশের ইতিহাস, একটা জায়গায় মিলে গেলেই তো, একের পর এক প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।

চোদ্দো

ফুলওয়ারিতোড়। ঝাড়খণ্ড। আবদুল ও চন্দ্রপুরার চৈতন্য।

“ঠোঁটটা এই ভাবে ফাটল কী করে? সবে দাঙ্গা হয়ে গেল একটা। শত্রুর অভাব নেই চারদিকে। আর...”

“আর...?”

“আর শুনেছিস নিশ্চয়ই, আজ ভোররাতে এই মন্দিরে বিশ্বামিত্র সেন খুন হয়েছেন। আমি কাল সন্ধ্যায় বেরিয়েছিলাম নগর কীর্তনে। আজ সকালে ফিরে...” আর বলতে পারেন না গোঁসাইজি। গলাটা কেমন যেন ধরে আসে। আবদুল বলে, “হ্যাঁ শুনেছি। তা বডি ওরা নিয়ে গেল কখন।”

“আমি ফেরার আগেই।”

“তা ‘স্পটে’ কোনও পাহারা দেখছি না তো?”

“ওই টুকু থানা। বাড়তি লোক কোথায়! তা ছাড়া পুলিশ তদন্তের স্বার্থে যেটুকু দেখার দেখে গেছে। পরে আবার এসেছিল আমার সাথে কথা বলার জন্য। ...অবস্থা চারদিকের খুব একটা ভালো নয়। তাই বলছিলাম যে একটু সাবধানে থাকিস !” এতখানি বলে আবার আগের প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করেন, “ঠোঁটটা ওই ভাবে ফাটল কী করে?”

দানবের মত শরীর আবদুলের। পাথর কেটে কেটে যেন তৈরি করেছেন স্বয়ং আল্লাহ। এক মাথা ঝাঁকড়া চুলে হাত বোলায় আবদুল, আর দশাসই শরীর কাঁপিয়ে হাসতে হাসতে বলে, “আপনার কী মনে হয়, আমার এই ফোলা ঠোঁট কোনো মানুষের কাজ? কার এত বড় হিম্মত!”

অহমিকা পছন্দ নয় অনাদির। কিছু না বলে চেয়ে থাকেন অপলক। আবদুলের মনে হয় কিঞ্চিৎ বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। প্রলেপ লাগাতে সচেষ্ট হয়, “আপনাকে আমি কতদিন বলেছি যে ওই দাঙ্গায় আমি পটকা ফাটানো ছাড়া কিছুই করিনি… আমাকে কেউ কেন মারতে যাবে!”

“নাম বিনা কলিকালে আর নাহি ধর্ম। সর্ব মন্ত্র সার নাম-এই শাস্ত্র মর্ম।” বাক্যটা উচ্চারণ করার পর একটা মৃদু হাসি অনাদির মুখে ফুটে উঠলেও আবদুলের খুব কিছু ভাবান্তর লক্ষ্য করা যায় না। গোসাঁই স্মিত হাসিখানা মুখে ঝুলিয়ে রেখেই বলে চলেন, “মহাপ্রভু বলতেন, আল্লাহ বল আর ভগবানই বল, সবই এক। কেন যে মিছি মিছি জাতের নামে তোরা মারদাঙ্গা করে বেড়াস বুঝতে পারি না...!”

আবদুলের কাছে এইসব নতুন নয়, বহুদিন ধরে বহু শ্লোক গোসাঁইয়ের মুখ থেকে সে শুনে আসছে। মানে খুব একটা না বুঝলেও, কী বলতে চাওয়া হচ্ছে সেটা মোটামুটি ধরতে পারে। গোসাঁইয়ের বাক্য শেষ হবার আগেই বলে, “আপনার কথা বহুদিন ধরে শুনছি গোসাঁইজি। কিন্তু এই সবের কোনও দাম নেই আজকাল। বৈগা পাড়ার কেউ শোনে না, আবার আমাদের ওখানেও কেউ শোনে না। উপরে উপরে লোকে আপনাকে ডাকে ‘চন্দ্রপুরার চৈতন্য’ কিন্তু ভিতরে ভিতরে আপনাকে নিয়ে হাসাহাসি করে।”

এইবার মৃদু নয়, বেশ বড় করে হাসেন গোসাঁই। বলেন, “আমাকে নিয়ে কেউ হাসাহাসি করলে আমার তাতে কোনও ক্ষতিবৃদ্ধি নেই। তুই তোর কথা ভাব। তুই যে সালাউদ্দিনের সাগরেদ, সেটাই বড় কথা। শত্রুপক্ষের লক্ষ হতেই পারিস।” দু-এক মুহূর্ত থেমে আবার বলেন, “বিশ্বাসের সুতোগুলো ছিঁড়েখুঁড়ে দেওয়াই ওদের কাজ...। দাঙ্গা লাগাতে পারলেই ওদের ফায়দা।”

“কাদের?”

জল খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। পাথরের পানপাত্র গোসাঁইয়ের হাতে ফিরিয়ে দিতে দিতে প্রশ্নটা করে আবদুল।

“কাদের আবার ! ঐদিকের সালাউদ্দিন, এইদিকে বলরাম কিস্কু, এদের।”

মন্দির কমিটির প্রেসিডেন্ট বলরাম তো এখন আবার শান্তি কমিটিরও প্রেসিডেন্ট!”

আবদুল বলে, “গোসাঁইজি আপনি একদিন সাল্লুভাই, বলরাম এদের সবাইকে ডেকে চৈতন্য, লালন ফকির... এঁদের গল্প একটু বলুন না...। দেখি কেমন শোনে? ওরা আপনার কথা শুনলেই তো ঝামেলা মিটে যায়।”

পুরোহিতজির আদিবাড়ি, কৃষ্ণনগর। সে মহাপ্রভুর জন্মভিটে থেকে কতটুকুই বা দূর? মহাপ্রভুর কথা ওঁর মুখে মুখে ঘুরবে সেটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে এই দাঙ্গার সময়ে। আবদুলের কটাক্ষ এতটুকু বিচলিত করতে পারে না গোসাঁইকে। নিজের কথা বলে যান, এক সমাহিত ভঙ্গিমায়, “সালাউদ্দিন, বলরাম এদের এই সব কথা বলা অর্থহীন। যারা জেগে জেগে ঘুমায় তাদের জাগানো যায় না রে আবদুল।”

“সাল্লুভাই আমাদের সবার জন্য লড়াই করছে...”

“উহুহু না। সবার জন্য নয়। নিজের জন্য। নেতা হতে চায় সাল্লাউদ্দিন, হিন্দু আর মুসলিমদের মধ্যে একটা বড়সড় গোলমাল একবার পাকিয়ে দিতে পারলে, নিজের বদ খেয়ালগুলো মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেওয়া অনেক সহজ হবে।”

অশ্বত্থ গাছের একটা পাতা ঝরে পড়ে শান বাঁধানো চত্বরে। এখন নিস্তব্ধতা এতটাই যে সেই পাতা খসে পড়ার আওয়াজও টের পাওয়া যাচ্ছে। একটা পা ঝুলিয়ে বসেছিল আবদুল, বেদীর উপর তুলে গুটিসুটি মেরে বসতে বসতে বলে, “একটু বুঝিয়ে বললে ভালো হয় গোসাঁইজি। আমার বুদ্ধিশুদ্ধি কম। অত ঘোরপ্যাঁচের কথা বুঝতে পারি না...।”

“না, বুদ্ধিশুদ্ধি কম নয় মোটেই। বুঝতে পারছিস না দেখেই অবাক হচ্ছি। তুই যাই বলিস না কেন, আমি জানি, হনুমান জয়ন্তীর দিন মন্দিরের সামনে দিয়ে মহরমের মিছিলটা নিয়ে যাবার কথা, ঐ হারামজাদার মাথা থেকেই বেরিয়েছে। অবশ্য ওর সাথে আরও কেউ থাকতে পারে...।”

“আরও কেউ মানে? আপনি কি আমার কথা বলছেন !”

সরাসরি জানতে চায় আবদুল।

“না। তোর কথা বলছি না। এইদিকের কেউ, এমন কেউ যে শান্তি কমিটিতেও আছে। বলরাম হতে পারে কিংবা... আরও বড় কোনও মাথা...”

‘আরও বড় কোনও মাথা’ বলতে, গোসাঁইজি কি তবে অরবিন্দ প্রতিহারী অথবা অনন্ত মহাষুরের কথা বলছেন? ওদের কথাও কী গোসাঁইজি জেনে গেছেন!

এই দু’জন সম্পর্কে আবদুলের নিজের ভিতরেও অনেক ধোঁয়াশা আছে। গত প্রায় একবছর ধরে ওরা আসছে গাঁয়ে। মসজিদের পিছনে যে গেস্টরুম, ওইখানে থাকে। কথাবার্তা যা বলার বলে ঐ সালাউদ্দিনের সাথেই।

সাল্লু ভাইয়ের কাছে এই দুজন সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল সে। সেই ভাবে কিছু খোলসা করেনি। বলেছে, ওরা নাকি কোনও এক ‘এনজিও’-র সাথে যুক্ত। ‘রুরাল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ নিয়ে কাজ করার জন্য এইখানে আসে। তা, উন্নয়নের কাজ করতে গিয়ে এত ঢাক গুড়গুড় কেন হে?

নানারকম এলোমেলো ভাবনার মধ্যেই আবদুলের ফের কানে আসে অনাদির গলা, “যাক, বাদ দে ঐসব কথা। বলছি চোটটা পেলি কী করে?”

“পড়ে গিয়েছিলাম হোঁচট খেয়ে।”

“দাঁড়া আমি আসছি। উঠে চলে যাস না কিন্তু...”

আবদুলকে বসিয়ে রেখে কিছু একটা আনার জন্য নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ান অনাদি। কোনো জড়িবুটি অথবা টোটকা।

“ঐ পাত্তরটা দিয়ে আবার কাকে জল খাওয়াবেন গোসাঁই?”

চমকে ওঠে আবদুল এবং অনাদি দুজনেই।

কাঁঠাল গাছটার আড়ালে বৈগা পাড়ার পুরোহিত সদাশিব মোহান্তি আর তার ছায়া সঙ্গী বাপি হাঁসদা।

কেতাব-ই'র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন manuscript.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’

পনেরো

হোটেল পদ্মনাভ। পুরী।

হোটেল পদ্মনাভ। পুরী। গোপন মিটিং এখনও চলছে। উমানাথ দুখানি তালিকা নিয়ে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে উদ্ধার করা নামের তালিকা দুটিতে নামগুলো খানিক এদিক ওদিক করে দেওয়া।

উমানাথ বলেন, “যে দুটো লিস্ট আমরা দেখলাম সেগুলোর একটার সাথে একটার মিল নেই। এবং তাই শুধু নয়, ওগুলোর একটার সাথেও কিন্তু চৈতন্য মহাপ্রভুর সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। ওই মানুষটির থেকে ফ্যামিলি-ট্রি শুরুই হয়নি অথবা ফ্যামিলি-ট্রির কোথাও মানুষটির কোনও উল্লেখ নেই। অন্তত সরাসরি। কাজেই, ডিএনএ টেস্টের রেজাল্ট যাই আসুক না কেন সেটা দিয়ে খুব কিছু প্রুভ করা ডিফিকাল্ট।”

“তাহলে তো ঠিকই আছে।”

উমানাথ এইবার বলেন, “না ঠিক নেই। আমার মনে হয় না, যিনি কাজটা করছিলেন তিনি এতটা বোকা যে, তার মাথাতে এই বিষয়টা আসেনি।”

“ঠিক বুঝলাম না...।”

অরবিন্দর কথার উত্তর দেওয়ার আগে বড় করে একটা শ্বাস নেন উমানাথ। বলেন, “একবার দেখলেই একটা বিষয় খেয়াল করা যাচ্ছে যে, ফ্যামিলি-ট্রি যার থেকে শুরু হচ্ছে তিনি চৈতন্য নন।”

এইবার অরবিন্দ বলেন, “হ্যাঁ সেইটাই তো বলছি...। সেখানেই তো আমার প্রশ্ন, তাহলে এই তালিকাগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তার কী আছে!”

মৃদু হাসি উমানাথের মুখে। বেশ খানিক সময় নিয়ে একটা নয়, একাধিক প্রশ্ন বাতাসে ভাসান, “মি. প্রতিহারী, আপনার কি মনে হয় শত্রুকে দুর্বল ভাবা উচিত? আরও অন্য কোনও তালিকা যে নেই, সেটাই বা আমরা ধরে নিতে পারি কেমন করে? হয়ত সেই তালিকা আমাদের হাতে আদৌ আসেইনি...।” কেউ কোনও উত্তর করে না। ভেসে আসে পরের প্রশ্ন। তবে, এবার শুধু প্রতিহারী নয় সবার উদ্দেশ্যে, “আচ্ছা শত্রুর কি শেষ রাখা উচিত?”

এবারেও কেউ কোনও উত্তর দেয় না। অবশ্য খুব যে কিছু উত্তর দেওয়ার আছে তাও নয়। কারণ সবাই জানে এইগুলি উমানাথের প্রশ্ন নয়। হাই কম্যান্ডের সিদ্ধান্ত। উমানাথ বাহক মাত্র।

উমানাথ পাঁজরে খানিক হাওয়া ভরে নিজের পরের বাক্যগুলো বলেন,

“প্রথমত, এটা ভেবে নেওয়া ঠিক হবে না, আজকের অপারেশনের পর এমন কেউ আর অবশিষ্ট নেই, যে ওই কর্মযজ্ঞকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। বস্তুত... আমরা এটা খুব ভালো করে জানি, কে এই প্রসেসকে এখনও কন্টিনিউ করতে পারে। রাইট? আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ফ্যামিলি-ট্রি যার থেকে শুরু হয়েছে, তার সাথে মহাপ্রভুর কোনো না কোনো যোগসূত্র, সে ঠিক খুঁজে বার করবে। আবার এমনও হতে পারে, ইতিমধ্যেই বিশ্বামিত্র বাবু তা খুঁজে পেয়েছেন। শুধু প্রকাশ করতেই যা বাকি। এইবার বাকি কাজটা করবে তাঁর উত্তরসূরি।”

একটু সময় নিয়ে আবার বলেন, “আরও একটা কথা... যদি বিশ্বামিত্রের দাবি সত্যি হয়, বংশ তালিকা যাঁর থেকে শুরু হয়েছে, তিনি যদি সত্যি সত্যি চৈতন্য মহাপ্রভুর মায়ের পেটের ভাই হয়ে থাকেন, তবে চিন্তার ব্যাপার পুরোটাই। তাই নয় কি?”

সবাই ঘাড় নেড়ে সায় দেয়। অলকানন্দাও। আবার একটু সময় নিয়ে যা বলেন উমানাথ, সেটা এখনও অব্দি বলা কথাগুলোর মধ্যে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ,

“আমার মনে হয়, বিশ্বামিত্রের ল্যাবে যদি খুব ভালো করে খোঁজা হয় তাহলে সেই জিনিস উদ্ধার করা যাবে, যার সাহায্যে, এখানে ‘বংশ লতিকা’ যেখান থেকে শুরু হয়েছে... আই মিন বিশ্বরূপ মিশ্রের সাথে, চৈতন্য মহাপ্রভুর লিঙ্ক করা যাবে।”

কথাটা বলে সবার দিকে একবার তাকান উমানাথ। বোঝা যায় যে তাঁর কথার খুব কিছু মর্মোদ্ধার কেউ করতে পারেননি। তিনি আবার বলেন, “ধরুন সেইখানে বিশ্বরূপের ব্যবহার করা এইরকম কোনও জিনিস পাওয়া গেল, যার থেকে বিশ্বরূপ মিশ্রের ডিএনএ স্যাম্পেল উদ্ধার করা হয়েছে। এইবার সেই কালেক্টেড ডিএনএ-র সাথে, চৈতন্যর ডিএনএ, এবং অন্যদিকে, যে বা যারা ‘লিভিং রেফারেন্স’, তার বা তাঁদের ডিএনএ ম্যাচ করে গেল, তখন!”

একটু থেমে আবার বলেন, “আর শুধু তাই নয়, এরপর, যে বংশতালিকা আমরা পেয়েছি, তার একটা বিশ্বাসযোগ্য ইতিহাসও খাঁড়া করা হল, এবং সেই ইতিহাস এটা মান্যতা দিল যে, এই বংশের বংশপিতা স্বয়ং চৈতন্যের মায়ের পেটের ভাই, তাহলেই তো হয়ে গেল। তাই না? তখনই তো অনেক অস্বস্তিকর প্রশ্ন ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়ে গেল। তাই নয় কি?”

অলকানন্দা এইবার বলে ওঠে, “সে না হয় হল। কিন্তু তাতে এটা আজকে দাঁড়িয়ে কী করে প্রমাণ করা যাবে যে, চূড়ঙ্গগড় থেকে যে হাড়গোড় বিশ্বামিত্র পেয়েছিলেন তা মহাপ্রভুরই? এবং মহাপ্রভুকে সেই দুর্গে জোর করে আটকে রাখা হয়েছিল?”

“চূড়ঙ্গগড় থেকে যে হাড়গোড় বিশ্বামিত্র পেয়েছিলেন তা যে মহাপ্রভুরই, সেটা প্রমাণ করার জন্য আরও একটা ইতিহাস লাগবে। সেই সময়কার পুরীর এবং জগন্নাথ মন্দিরের একটা সামগ্রিক ইতিহাস। সেই ইতিহাস এবং এই বংশের ইতিহাস, একটা জায়গায় মিলে গেলেই তো, একের পর এক প্রশ্ন মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। সেটার কথাই তো বললাম।”

একটু থেমে আবার বলতে থাকেন উমানাথ, “যদিও... মহাপ্রভুকে যে জোর করে সেই দুর্গে আটকে রাখা হয়েছিল, সেটা কখনই সরাসরি প্রমাণ করা যাবে না। কিন্তু ‘মিসিং পারসনস স্যাম্পেল’ যে চূড়ঙ্গগড় দুর্গের পাশেই সিদ্ধেশ্বর মন্দিরে পাওয়া গিয়েছে সেটা তো প্রমাণ করা যাবে। এবং সবার প্রথমে যে প্রশ্নটা তুলে দেওয়া যাবে যে, বলপূর্বক গুম না করা হলে, পাহাড় জঙ্গল নদী ঘেরা ঐ অতি দুর্গম অরণ্যে মহাপ্রভু স্বেচ্ছায় কেন আশ্রয় নিতে যাবেন! জগন্নাথকে ছেড়ে! সমস্ত ভক্তদের ছেড়ে!... আরও একটা কথা যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ...”

“কী ?”

“এই ‘গুম’ করাটাকে কিন্তু মোটেই ‘খুন’-এর থেকে হালকা ভাবে নেবে না দেশের মানুষ। আর তাঁদের সন্দেহের তীরটা প্রথমেই ধেয়ে আসবে সেই সময়কার পাণ্ডাকুলের দিকে, যারা ধর্ম-বিশ্বাসের জায়গা থেকে আমাদেরই পূর্বসূরি। এতে আমাদের আই মিইইন... বি. এইচ. এম. ডি.-র ‘সনাতনী’ ভাবমূর্তির আখেরে ক্ষতি হবে যথেষ্টই।”

এবার কথা বলে অরবিন্দ। সরাসরি কাজের কথায় আসে সে, “আমার সাথে সালাউদ্দিনের কথা হয়েছে এক দিন আগেই। আবদুল বলে ছেলেটি এরই মধ্যে হানা দিয়েছিল মি. সেনের ল্যাবরেটরিতে।”

গদিওয়ালা চেয়ারে নিজেকে একবার ভালো করে সেঁটে নিতে নিতে উমানাথ বলেন, “আই সি... তা কী কী পাওয়া গেছে?”

“দু-জোড়া গ্লাভস, গোটা তিনেক কাচের বিকার, পাঁচটা টেস্ট টিউব এবং গোটা দুয়েক টেস্ট টিউব হোল্ডার।”

খানিকক্ষণ কী যেন চিন্তা করেন উমানাথ। তারপর বলেন, “এইগুলো দিয়ে আদৌ কাজ হবে না। আরও অন্য কিছু দরকার ছিল... এই রকম কিছু যা বিশ্বরূপ মিশ্র ব্যবহার করতেন। যেটা আসলে ‘লিভিং রেফারেন্স’-এর সাথে ‘লিঙ্ক’ করছে মহাপ্রভুর। ঐটা হাতে পেয়ে গেলে আর কোনও চিন্তাই থাকত না। আমাদের দুশ্চিন্তা রয়ে গেল বৈকি।”

দু-এক মুহূর্ত থেমে আবার বলেন সিন্ধিয়া, “সে যে যাই হোক, যা যা পাওয়া গেছে ল্যাবরেটরিতে সেগুলো আপাতত কোথায়? সালাউদ্দিনের হেফাজতে কি?”

“না। এখনও আবদুল বলে ছেলেটির কাছেই আছে...”

“হুমম...”

একটা ছোট্টো শব্দ বেরিয়ে আসে সিন্ধিয়ার মুখ থেকে। আর, অলকানন্দাকে দেখে মনে হয় সেও গভীর কোনও এক চিন্তায় মগ্ন। এত কীসের চিন্তা তাঁর?


কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন


এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।

মন্তব্য করুন

লেখক

জন্ম-৮ সেপ্টেম্বর, কলকাতা। ছাত্রাবস্থায় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে লেখালেখির শুরু। এই উপন্যাস ছাড়াও লেখকের প্রকাশিত অন্য উপন্যাসগুলি হল— ‘আসলে ভালবাসার গল্প’, ‘রোধবতীর নীল রং’, ‘একে রহস্য দুইয়ে লক্ষ্যভেদ’। দেশ, আনন্দমেলা, কৃত্তিবাস, কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান, কথা-সাহিত্য, বহুরূপী এবং আনন্দবাজার পত্রিকায় ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু লেখা। এছাড়াও বাংলার শ্রেষ্ঠ নাট্যকারের সম্মান ‘সুন্দরম পুরস্কার’ পান ২০১৪ সালে।

অন্যান্য লেখা

দেখতে পারেন