preloader
বাংলা বইয়ের e-ভুবন
Menu Categories Search Cart 0
Menu
Cart

Total 0 Items

☹ Your cart is empty

Sub Total:

$0

₹0

বিভাগ
চৈতন্যে বধিবে কে!: পর্ব ৮
ধারাবাহিক

চৈতন্যে বধিবে কে!: পর্ব ৮

সরস্বতীর বুকের দিকে তাকিয়ে ছিল আবদুল। সেই চাউনি অপাপবিদ্ধ হলেও দস্তুর নয়। চোখ দুটোকে বড় কষ্টে ওই বুক থেকে ছিঁড়ে নিয়ে বলেছিল আবদুল, “তোর মনে হল কেন যে বিশ্বামিত্র সেনের খুনটার সাথে আমি জড়িয়ে থাকতে পারি? ফোন করলে ধরিস না...! এদিকে মার্ডারের খবর পেয়ে হাজির হয়ে গেলি!”
আবদুলের থেকে ভালো আর কে জানে যে খুনটা সে করেনি, কিন্তু সেই কথা সরস্বতী শুনলে তো!
সত্যিই তো আবদুল সামাদ খুনটা যদি না করে থাকে তবে খুনটা করল কে!

বাইশ

ফুলওয়াড়িতোড়। ঝাড়খণ্ড।

আরও দু-এক মুহূর্ত মাথা ঝুঁকিয়ে বসে থাকার পর আবদুল সোজা তাকিয়েছিল পাথর কাটা মেয়েটার দিকে। সরস্বতী বৈগার পীনোন্নত বুক যেন বড় বেশি অহংকারী ঠেকেছিল তার। চেপে ধরে নামিয়ে দিতে পারলে মনে হচ্ছিল ভিতরের জ্বালাটা খানিক জুড়োবে।

সে দিনও এই রকম ইচ্ছে হয়েছিল আবদুলের। তবে সেদিন প্রশয় ছিল সরস্বতীর শরীরী ভঙ্গিমায়। আজ যা নেই। 

সেদিন পাহাড়েও ছিল প্রগলভতা। দুগ্ধার যেখানে দাঁড়ালে বহুদূরে চোখে পড়ে দামোদর, বোকারো স্টিল প্ল্যান্টের চিমনির পায়ের কাছে পড়ে থাকা রুপালি নূপুরের মত, সেইখানে দাঁড়িয়েছিল ওরা। ওই একদিনই শুধু।

পাথর কাটা মেয়েটার শরীর বেয়ে নামছিল কালাচ সাপের আগুন। আহা ওই আগুনে পুড়তেও বড় সুখ মনে হয়েছিল সেইদিন আবদুলের। সরস্বতীর লম্বা বিনুনি দুলছিল সবুজাভ পাহাড়ের শূন্যতায়। টিকালো নাক আড়াল করতে চেয়েছিল দূরের দামোদর আর ধোঁয়া ওঠা শিল্প নগরীর সভ্যতা।

আগুনে সেদিন কাচপোকা হয়েছিল আবুদুল। সাক্ষী ছিল বেশ খানিক উঁচুতে স্থির হয়ে থাকা রাধামাধবের মন্দির আর নীল আকাশের সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকা ছোটো ছোটো গ্রামগুলি।

এক মুসল্লির ছেলে আর এক হিঁদুর মেয়ে মিশে গিয়েছিল, একে অন্যের সাথে। আকাশের শূন্যতা ফুঁড়ে রাধামাধব মন্দিরের মাথায় তখন উড়েছিল অনাদির গোসাঁইয়ের জয়ধ্বজা। লালন ফকির থেকে চৈতন্য, যে ধ্বজা উড়িয়েছিলেন একদিন।

দাঙ্গার পরের ঘটনাই সেইসব। পরমেশ্বর বৈগাও নেই তখন। কিন্তু তখনও সরস্বতীর মাথায় এই বিশ্বাস গেঁথে দেওয়া হয়নি যে, আবদুলের ছোঁড়া বোমাতেই মরেছে বাপ পরমেশ্বর। যাই হোক, সেদিন প্রশয় ছিল কিন্তু আজ আগুন, প্রত্যাখ্যানের। সরস্বতীর বুকের দিকে তাকিয়ে ছিল আবদুল। সেই চাউনি অপাপবিদ্ধ হলেও দস্তুর নয়।  চোখ দুটোকে বড় কষ্টে ওই বুক থেকে ছিঁড়ে নিয়ে বলেছিল আবদুল, “তোর মনে হল কেন যে বিশ্বামিত্র সেনের খুনটার সাথে আমি জড়িয়ে থাকতে পারি? ফোন করলে ধরিস না...! এদিকে মার্ডারের খবর পেয়ে হাজির হয়ে গেলি!”

আবদুল এই কথা বলেছিল বটে, কিন্তু তার গলার আওয়াজ ছিল বড় বেশিরকম ফাঁপা। কারণ, এটা সত্যি যে তার হাতে বিশ্বামিত্রের মৃত্যু হয়নি। কিন্তু এটাও তো মিথ্যা নয় যে,  সেও বিশ্বামিত্রকে খুন করতেই দুগ্ধার জঙ্গল ফুঁড়ে ভোর রাতে হাজির হয়েছিল রাধামাধবের মন্দিরে। নেহাত ততক্ষণে তার শিকার অজানা একজনের হাতে বধ হয়ে গিয়েছিল তাই, নাহলে তো...

এইদিকে সরস্বতী বলে, “ঠিক বলেছিস। ভুল হয়েছে, না আসলেই ভালো হত।”

খোঁচাটা গায় না মেখে আবার মাথা উঁচু করে সরস্বতীর চোখে চোখ রাখে আবদুল। আরে ওই চোখে জল নাকি! হ্যাঁ সেরকমই তো মনে হচ্ছে। ফাঁপা গলায় আবদুল বলে, “ফোন ধরিস না কেন?”

উত্তর নেই। 

 “আমি জানি তুই কী ভাবিস?”

“কী?” 

“ভাবিস পরমেশ্বর কাকাকে আমিই মেরেছি...। তোর মাথায় এই কথাটা অ্যাদ্দিনে খুব ভালো করে গেঁথে দিয়েছে ওই পুরুতের পোঁ।”

এরপরও দাম্ভিক মেয়েটা কোনও উচ্চবাচ্য করেনি। দাঁড়িয়েছিল চুপ করে। অতঃপর নিচু হয়ে, পড়ে থাকা সাইকেলের চাবিটা কুড়িয়ে নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল আবদুল।

অবিশ্বাস অতি বিষম বস্তু। সব খায়। ঘর-গেরস্থালী-প্রেম, সবকিছু। সাইকেলের লকটা খুলতে খুলতে সরস্বতীর পরের বাক্যটা কানে আসে আবদুলের, “ঠোঁট দিয়ে এখনও তো রক্ত বার হচ্ছে... কোথায় যাবি এই অবস্থায়! তা যেখানে খুশি যা, যাওয়ার আগে এইটা একবার দেখে যা।” কথাটা বলে একটা চিরকুট বার করে ছুঁড়ে দিয়েছিল আবদুলের দিকে।

আসার সময় ধানের মাঠে যখন পড়ে গিয়েছিল আবদুল তখন বৈগাপাড়ার সীমানা থেকে তা নজরে পড়েছিল সরস্বতীর। সেই দেখেই কাগজের টুকরোটা বুকের মধ্যে গুঁজে সে রওয়ানা দেয় পাহাড়ের দিকে।

চিরকুট দেখে আবদুল বলেছিল, “এটা আবার কী?”

“পড়ে দেখ।”

ঝাড়খণ্ডী এবং বাংলা, দুই ভাষাতেই লেখা একটা লিফলেট। পড়লেই বোঝা যায়, স্রেফ ধর্মের নামে উসকানি দেওয়া হয়েছে।

 “এই দেশ আমাদের। এই পাহাড়-জল-জঙ্গল-মাটি সব আমাদের। আজ নিজেদের দেশেই আমরা নিরাপত্তাহীন। কর্মহীন। আমাদের খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানে ভাগ বসাচ্ছে একদল বহিরাগত। খোলা আকাশের নীচে, ভুখা নাঙ্গা অবস্থায় আমাদের দিন কাটে। বাঁচার উপায় আমাদেরই খুঁজে বার করতে হবে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, হাত হাত রেখে লড়াই করতে হবে ভাই সকল।

সকল হিন্দুকে জোটবদ্ধ হতে হবে। মনে রাখতে হবে, আজ থেকে আমাদের মধ্যে আর কোনও ভেদাভেদ নেই। বহিরাগত ওই মুসল্লিদের বিরুদ্ধে আমাদের এক হতে হবে। ব্রাহ্মণ-মুচি-মেথর, এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। লড়াই করতে হবে চোখে চোখ রেখে। আদায় করে নিতে হবে নিজেদের অধিকার। —জয় শ্রী শম্ভু...”

“কোথা থেকে পেয়েছিস এটা!”

“সদাশিব ঠাকুর বিলি করেছে।”

“অঃ...তা তোদের গাঁয়ে এখন কী অবস্থা?”

“সে সব তোকে বলে লাভ?”

সরস্বতীর এই কথায় কোনও উত্তর করেনি আবদুল। এর দু-এক মুহূর্ত বাদে ফের কথা বলেছিল সরস্বতী বৈগা। কেন যেন তখন মনে হচ্ছিল, তার গলার স্বর আগের মত অতখানি রুক্ষ নয়। সে বলেছিল, “আবার যাতে আগুন লাগানো যায় তার সব ব্যবস্থাই করা হচ্ছে গাঁয়ে। তবে এরই মধ্যে একা লড়াই করছেন গোসাঁইজি।”

“কী রকম?”

“বৈগাপাড়ার মানুষ জনকে নিজের মত করে বোঝানোর চেষ্টা করছেন।  বলছেন, মুসলমানরা আমাদের শত্রু নয়। মানুষের জাত আসলে দুটো। গরীব আর বড়লোক। গতকালও গিয়েছিলেন গোঁসাইজি আমাদের গাঁয়ে। আজ সকালে ফিরে এসেছেন।”

“নামকীর্তনের দল নিয়ে তো?”

“হ্যাঁ। এইদিকে মোহান্তি ঠাকুর রেগে আগুন হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। আমার মনে হয়, সে আর বাপি হাঁসদা মিলে কোনও বদ মতলব আঁটছে? এর মধ্যেই কিছু একটা ঘটাবে।”

“তাই নাকি?”

“হ্যাঁ।”

এইবার আবদুল বুঝতে পারে কেন হঠাৎ দুগ্ধায় হাজির হয়েছিল মোহান্তি। সকালের ‘হরিনামের’ জ্বালা মেটাতে।

আবদুল জানতে চায়, “লেখাটা কার?”

“মানে?”

“বলছি লিফলেটের ভাষাটা কার?”

“কেন সদাশিবের নয়!”

“নয় বলেই তো মনে হচ্ছে। কাগজটা মোহান্তি ঠাকুর বিলি করেছে ঠিকই কিন্তু বয়ানটা ওর বলে মনে হচ্ছে না! এত গুছিয়ে সদাশিব মোহান্তি লিখতে পারবে না।”

বর্তমানে সরস্বতী দু’টো ভাবনার মধ্যে আটকে আছে। একবার মনে হচ্ছে সদাশিব যা বলছে সেটাই সত্যি। অর্থাৎ বাপটা আবদুলের ছোড়া বোমাতেই মরেছে। আবার অন্যদিকে মনে হচ্ছে, এটা হতেই পারে না। তার আবদুল আর যাই করুক মানুষ মারতে পারে না। কিছুতেই নয়।

দ্বিতীয় ভাবনার উপর দাঁড়িয়েই সে ঠিক করেছিল যে, আবদুলকে আজ সে লিফলেটটা একবার দেখাবে। যে দাঙ্গার আগুন আবার লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তা যাতে আগের থেকেই আটকানো যায়। কারণ সে চায় না তার মত আরও কারো বাপ বোমায় পুড়ে ঝামা হয়ে যাক।

লিফলেটটা আরও একবার ভালো করে দেখতে দেখতেই আবদুলের কানে আসে সরস্বতীর পরের বাক্য, “একজন বাইরের লোককে আমি দেখেছি মন্দিরে…।”

“কবে!”

“পরশু দিন।”

“তাই নাকি! এর আগেও কি ওই লোকটাকে দেখেছিস?”

“না।”

“দেখতে কেমন?”

“ঠাকুরদালানের পাশেই মোহান্তি ঠাকুরের ঘর। ওইখানে বসেছিল। প্রসাদ নেওয়ার সময় সেদিকে চোখ পড়তে দেখতে পাই।”

“জানালা খোলা ছিল?”

“হ্যাঁ। কিন্তু পুরোটা নয়, একটা পাল্লা। ওইটুকু দিয়ে খুব একটা ভালো বুঝতে পারিনি। তবে চেনামুখ নয়।”

“বুড্ডা নাকি জওয়ান?”

আবার চিন্তায় পড়ে সরস্বতী। দু-এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলে, “নাহ...জওয়ান বলে তো মনে হল না…”

তাহলে আবদুল এতদিন ধরে যা ভাবছে সেটাই ঠিক। শুধু যে অরবিন্দ আর অনন্ত ওদের গাঁয়ে এসে উসকানি দিচ্ছে তা নয়, দু’দিক থেকেই দেওয়া হচ্ছে উসকানি। খোঁজ করলে হয়ত বা দেখা যাবে, ওই যে লোকটা যাকে সরস্বতী দেখেছে, সে হয়ত অনন্তদেরই লোক। কী যে কোথায় হচ্ছে বলা মুশকিল।

আরও একটা কথা এখানে বলবার, যে লিফলেট প্রসঙ্গে ওদের কথা হচ্ছিল সেটার নীচে এরকম একটা জায়গার নাম লেখা ছিল যা সরস্বতী অথবা আবদুল, কারো চোখেই তখন পড়েনি। সেটা নজরে পড়লে হয়ত চক্ষু  চড়কগাছ হয়ে যেত ওদের।

তেইশ

যাদবপুর। কলকাতা।

আরও একটু খুঁজে দেখা যাক, স্বপ্ননীল এবং অলকানন্দার যোগসূত্র। অলকানন্দা ভাবছে, আজ নয় কাল খুন করা হবেই স্বপ্ননীলকে। স্বপ্ননীলকে নিয়ে এত দুঃশ্চিন্তা কেন তার, সেটা আরও খানিক তলিয়ে দেখা প্রয়োজন।

মাস্টার্সের ফাইনাল ইয়ারে, স্বপ্ননীলের আলাপ অলকানন্দার সাথে। নন্দার তখন সেকেন্ড ইয়ার। হিস্ট্রি। সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল হিস্ট্রি অফ মডার্ন ইন্ডিয়া। উইথ পার্টিকুলার রেফারেন্স অফ বেঙ্গল।

একদিন কলেজ ক্যান্টিনে বন্ধুদের সাথে আড্ডা মারছিল নীল, খানিক দূর থেকে ভেসে আসে নামটা— অলকানন্দা। বাঃ বেশ নাম তো। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় টেবিলটার দিকে। চায়ের পেয়ালায় হাসির হুল্লোড় সেখানে তখন। জানলার ধারে বসে আছে মেয়েটা। কথা তো নয় যেন হাতের তালুতে রাখা প্রজাপতি উড়িয়ে দিচ্ছে ফুঁ দিয়ে। আর সেই প্রজাপতির দল ঘুরে বেড়াচ্ছে ক্যান্টিনময়।

মেয়েটার মুখের মধ্যে একটা অদ্ভুত ব্যাপার আছে। কাটা কাটা নাক চোখ কিন্তু তা সত্ত্বেও এক দারুণ পেলবতা। যেন পাকদণ্ডী পথ ছুঁয়ে থাকা মেঘপুঞ্জ। ভেজা ভেজা স্ট্রেইটেইন চুল চওড়া পিঠে। স্লিভলেস আপার চুইয়ে আসা সোঁদা মাটির গন্ধে বাতাস তখন দিশেহারা।

এইদিকে, অলকানন্দাও যে বহুদিন ধরে লক্ষ্য রাখছিল স্বপ্ননীলকে, সেটা স্বপ্ননীল কী করে জানবে? ইউনিভার্সটির লাইব্রেরিতে প্রায়শই যেত নীল। ফার্মাকোলজি নিয়ে পড়াশুনার জন্য নয়, ইতিহাস নিয়ে খননকার্য চালাতে। তার ইতিহাস চর্চা একটা নির্দিষ্ট দিকে মোড় নিয়েছে ততদিনে।

কলেজ লাইব্রেরিতে সব সময় চাহিদামত বই পাওয়া যেত না ঠিকই কিন্তু যা পাওয়া যেত তাও নেহাত কম নয়। একটা পর একটা গোগ্রাসে গিলত স্বপ্ননীল। মি. বিশ্বামিত্র সেন আসলে নীলের মাথার মধ্যে গেঁথে দিয়েছিলেন যে, চৈতন্য মহাপ্রভু ওরই একজন পূর্বপুরুষ। মন্দিরের মধ্যে হয় তাঁকে খুন করা হয়েছিল, নয়ত মন্দির থেকেই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কোনও গুপ্তস্থানে, আজীবন গুম করে রাখার উদ্দেশ্যে। যা ছিল ঘোরতর অন্যায়। কিন্তু আজ কয়েকশো বছর বাদেও তার কোনও প্রতিকার হয়নি, এবং সেই বিষয়েই নতুন করে অনুসন্ধান শুরু করেছেন বিশ্বামিত্র। লড়াই করছেন একা।

এটা জানার পর নীল ভেবেছিল, যে করেই হোক ওঁর পাশে দাঁড়াতে হবে। সত্যকে উন্মোচিত করার জন্য সাহায্য করতে হবে, যথাসাধ্য। কিন্তু তা করতে হলে আগে জানতে হবে সবটা। সেই তাড়নাতেই যেন ছুটে বেড়াচ্ছিল স্বপ্ননীল। নিজের ভিতর মগ্ন থাকতে থাকতে খেয়ালই করে নি , যে একজোড়া চোখ ওকে লক্ষ্য রাখছে বেশ কিছুদিন ধরেই।

অলকানন্দাকেও লাইব্রেরিতে আসতে হত রেফারেন্সের জন্য।

শব্দহীন পাঠাগার। অলকানন্দার নূপুরের মৃদু আওয়াজটাও ভঙ্গ করত মৌনতা। আশে পাশের অনেকেই চোখ তুলে তাকাত জলতরঙ্গের দিকে। তারপর, তাদের চোখ বেশ কিছুক্ষণ আটকে থাকত সেই তরঙ্গে। ওই সব তুচ্ছ দৃষ্টিপাত দু’পাশে ঝেড়ে ফেলতে ফেলতে এগিয়ে যেত অলকানন্দা। তখনই হঠাৎ এমন একজনকে চোখে পড়েছিল তার, যার ধ্যান ভঙ্গ হচ্ছে না নিক্বণে। কে এই তপস্বী! ফার্মা ডিপার্টমেন্টের ছেলেটা না ! হ্যাঁ তাই তো।

কৌতূহল জাগে। দু-একদিন বাদে বই নিয়ে ওর টেবিলেই বসতে আরম্ভ করে অলকা। না! তাতেও লক্ষ্য নেই জ্ঞান-তপস্বীর! এবার জানতে ইচ্ছে করে কী এমন অধ্যয়ন করছেন ওই ঋষি, যার জন্য তার মত অপ্সরাকেও উপেক্ষা করতে পারছেন!

স্বপ্ননীলের পড়াশুনার বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে আরও অবাক হয় সে। একটা এই বয়েসের ছেলে যার সাবজেক্ট ফার্মাকোলজি, সে কী না পড়ে আছে বৈষ্ণব ধর্ম নিয়ে!

একদিন ঘাড়খানা রাজহংসীর মত উঁচিয়ে, ভালো করে দেখার চেষ্টা করে, পাশে ছড়িয়ে থাকা বইপত্তর। দেখা যায়, দু-খানা বই এর মধ্যে একটা  বিপিন বিহারী মজুমদারের ‘বঙ্গ সমাজে বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাব’ এবং আর একটি হল, জয়দেব মুখোপাধ্যায়ের ‘কাঁহা গেলে তোমা পাই’।

উরি সাট্টা এ ছেলে তো দেখছি সত্যিকারের সাধু!

কেতাব-ই'র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন manuscript.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’

চব্বিশ

ফুলওয়ারিতোড়। ঝাড়খণ্ড। দুই চৈতন্য-কথা।

হোটেল পদ্মনাভয় মিটিং শেষ হলে উমানাথ এবং অলকানন্দা চলে যায় তাদের মত আর, অরবিন্দ প্রতিহারী এবং অনন্ত মহাষুর চলে আসে চন্দ্রপুরায়।

অরবিন্দদের জন্য, এয়ারপোর্ট মেইন গেটের ঠিক উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে থাকার কথা ছিল ইনোভা-র। ড্রাইভার কী সংকেত ব্যবহার করবে সেটাও বলে দেওয়া হয়েছিল।

এখানে যারা ক্ষমতায় আছে তারা ওদেরই শরিক দল। তা হলেও বি. এইচ. এম. ডি.-র সব খবর যে জানে বা জানানো হয়, এরকমটা নয়। এছাড়াও এই রাজ্যে বিরোধীপক্ষ বেশ শক্তিশালী। এখনও অনেক ছোটো ছোটো রিজিওন যেগুলিকে রাজনীতির পরিভাষায় বলা হয় ‘পকেট’, সেখানে বি. এইচ. এম. ডি. অথবা রুলিং পার্টির সংগঠন বেশ দুর্বল।

শক্তিশালী বিরোধী, অতএব সেয়ানে সেয়ানে কোলাকুলি। সেইজন্য নানা সাবধানতা অবলম্বন করতেই হয়। আর এখন যে কাজে অনন্ত মহাষুরদের এইখানে আসা, সেটা একেবারেই বি. এইচ. এম. ডি. কোর কমিটির বিষয়।

জামশেদপুর এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে কোনও গাড়ি দেখা যায় না। মিনিট পাঁচেক দাঁড়িয়ে থাকার পর মিস্টার প্রতিহারী ফোন বার করেন। সার্চে গিয়ে খুঁজতে থাকেন সালাউদ্দিনের নম্বর, এমন সময়ই দূরে দেখা যায় নীল ইনোভা।

গাড়ি এসে দাঁড়ায় রাস্তার উল্টো দিকে। নেমে যায় কাচ। ড্রাইভার দু’আঙুল দিয়ে ভি-এর মত দেখায়। এটাই আজকের নির্দিষ্ট সংকেত।

দু’পাশে ছোটোখাটো টিলা। পাথুরে টিলার গায়ে বড় বড় গাছ। বেশির ভাগই শাল-পিয়াল। মাঝে মাঝে আদিবাসীদের গ্রাম। জঙ্গল আর ছড়িয়ে থাকা বসতি ভেদ করে চলে গেছে হাইওয়ে। ছুটে চলে গাড়ি। এয়ারপোর্ট থেকে সালাউদ্দিনের গ্রাম বড়জোর ঘণ্টা দেড়েক।

অনাদির মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে দুই জল্লাদ যাচ্ছে এক কসাইয়ের গাঁয়ে। গাঁয়ের নাম, সনাতন গাজীর বটতলা। কসাইয়ের নাম, সাল্লাউদ্দিন মোল্লা।

দিন কয় পূর্বেই কাশী মিশ্রের টোটায় একখানি অভূতপূর্ব কাণ্ড ঘটিয়া গিয়াছে। দ্বার রুদ্ধ তথাপি প্রভু টোটার বাহিরে। তিনি অচেতন হইয়া জগন্নাথ মন্দিরের গুপ্ত পথের সম্মুখে পড়িয়া রহিয়াছেন। পরিকরদের মধ্যে কেহ কেহ ইহাকে প্রভুর গম্ভীর লীলা বলিয়া প্রচার করিলেও রায় রামানন্দ কিংবা স্বরূপ তাহা মানিয়া লইতে প্রস্তুত নহেন। তাঁহাদের মনে হইতেছে ইহার নেপথ্যে কোনও অশুভ শক্তির চক্রান্ত বিদ্যমান। এবং শুধু তাহাই নহে, চক্রান্তকারীদের মধ্যে এমন কেহ আছে যে তাঁহাদের মতই প্রভুর নিত্যসঙ্গী। রায় রামানন্দের, ভৃত্য গোবিন্দ এবং দেহরক্ষী কাশীশ্বরকে খুবই সন্দেহ হইতেছে।

স্বরূপের সহিত ইহা লইয়া বিস্তারিত আলোচনা করিয়াছেন। স্বরূপও দ্বিমত পোষণ করেন নাই। উভয়ের আলোচনা হইতে যে সারমর্ম উদ্ধার হইয়াছে তাহা হইল, ইহারা গোবিন্দ বিদ্যাধরেরই গুপ্তচর। তাঁহার নির্দেশ অনুসারেই ইহারা প্রভুর খাদ্যে বিষপ্রয়োগ করিয়াছে। তবে সেই বিষের মাত্রা খুব বেশি বলিয়া মনে হয় না। কারণ ব্রহ্মহত্যার পাপ কেহ লহিতে চাহিবে না। খুব সম্ভব, অল্পমাত্রায় বিষ প্রয়োগে প্রভুকে অচেতন করাই ছিল তাহাদের উদ্দেশ্য।

সেই মত প্রভুর জ্ঞান লুপ্ত হইলে, তাঁহাকে ধরাধরি করিয়া বাহিরে আনিয়া, ভিতর হইতে আবার কেহ কপাটের আগল তুলিয়া দিয়াছে। প্রভুকে অচেতন করিয়া মন্দিরের গুপ্তপথ দিয়া কোথাও সরাইয়া লইয়া যাইবার অভিপ্রায় ছিল বলিয়া মনে হইতেছে চক্রান্তকারীদিগের। যে কোনও কারণেই হউক তাহাদের সেই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয় নাই।

সম্যক উপলব্ধি করিতে পারিলেও, গোবিন্দ বিদ্যাধরদের অনুচরদের এই মুহূর্তে কিছু ধরা দিতে চাহেন না রামানন্দ। ক্রমেই শক্তিশালী হইয়া উঠিতেছে এই বিদ্যাধর। এই অবস্থায় শক্তি নহে, তাঁহার সহিত কৌশলে লড়াই করিতে হইবে। নিজে কিছু বুঝিতে দেন নাই, স্বরূপকে কিছু কহিতে বারণ করিয়াছেন। তবে সন্দেহজনক যাহারা তাহাদের প্রতি কড়া নজরদারী জারি আছে।

এইদিকে বোধ হয় প্রভু স্বয়ং কিছু আঁচ করিয়াছেন। কিঞ্চিৎ সুস্থ হইবার পর হইতেই মধ্যে মধ্যে বড়ই অস্থির দেখাইতেছে তাঁকে। ভাবগ্রস্থতায় গম্ভীরার দেয়ালে নাক মুখ ঘষিয়া নিজেকে ক্ষত বিক্ষত করিতেছেন। নীলাচলে তাঁহার খুব বেশি দিন থাকা হইবে না— এই বলিয়া উচ্চকণ্ঠে কখনও বা বিলাপও করিতেছেন।

সত্যই কি কুটিল এবং দুর্বিনীত গোবিন্দ বিদ্যাধর নীলাচল হইতে প্রভুর বিদায়ের কারণ হইয়া দাঁড়াইবেন? সত্যই কি প্রভু আর নীলাচলে নিরাপদ নহেন? রাজা প্রতাপরুদ্র কি প্রভুর এই সঙ্কট সম্পর্কে আদৌ অবগত আছেন? মহারাজ সমীপে এই সঙ্কট-বার্তা পৌঁছিলেও কি কোনোরূপ সুরাহা সম্ভব?

এই সাতকাহন ভাবিতে ভাবিতেই রায় রামানন্দ বালুকাবেলা ধরিয়া চলিয়াছেন। তাঁহার ডানপার্শ্বে আদিগন্ত বিস্তৃত তরঙ্গমালা। সুনীল সেই জলরাশিও যেন আজ তাঁহারই মত বড় চঞ্চল। গর্জনে অন্তরীক্ষ বিদীর্ণ করিতেছে।

তবে সেই গর্জন, রায় রামানন্দের কর্ণকুহরে প্রবেশ করিতেছে না। তাঁহার চিত্ত জুড়িয়া অন্য ঝড়ের পূর্বাভাস। গুণ্ডিচাবাড়ী ছাড়াইয়া আরও ক্রোশ দু’য়েক যাইতে হইবে তাঁহাকে। সেই স্থানে তাঁহার জন্য অপেক্ষা করিয়া থাকিবার কথা দুইজনের।

এইদিকে, আপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে, অকুতোভয় অনাদি গোসাঁই অর্থাৎ ‘চন্দ্রপুরার চৈতন্য’ আছেন নিজের মতন। কিন্তু ভিতরে ভিতরে তাঁর অন্তরাত্মাও যেন বড় অস্থির। তাঁরও কেন যেন মনে হচ্ছে রাধামাধবের কাছ থেকে বিদায় আসন্ন। যেমত সেইদিন মনে হয়েছিল স্বয়ং মহাপ্রভুর-প্রাণেশ্বর জগন্নাথের কাছ থেকে তাঁর বিদায় আসন্ন।

শুধুই মাথার ভিতর নয়। অনাদির দেহেও যেন সাক্ষাৎ মহাপ্রভুর বসত। দীর্ঘ গৌড় অঙ্গ, সুতীব্র নাসিকা যা অতি রক্তিম দুই ওষ্ঠদ্বয়ের উপর পেতে দিয়েছে এক সূক্ষ্ম অর্ধচন্দ্রাকৃতি ছায়া। আজানু লম্বিত দু’হাত যখন ‘মায়ামৃদঙ্গে’ তোলে কৃষ্ণনাম, তখন মনে হয় ওই হস্ত-যুগলেরই একমাত্র অধিকার ওই বাদ্যযন্ত্রে। যাঁর মুণ্ডিত মস্তক, গেরুয়া বসন এবং ললাটে আঁকা চন্দন চিহ্নে, উদ্ধত এই মালভূমিও পরাভূত। সত্যই তিনি ‘চৈতন্যে’। চন্দ্রপুরার চৈতন্য।

থানা থেকে ফিরে বসেছিলেন মন্দির চত্বরে। এইখান থেকে মন্দিরের বিগ্রহ খুব ভালো করে চোখে পড়ে। অনাদি এক দৃষ্টে চেয়েছিলেন রাধামাধবের দিকে। বন্ধু বিশ্বামিত্র রিক্ত করে দিয়ে চলে গিয়েছেন আজ। রাধামাধবের চোখের দিকে তাকিয়ে ভোলার চেষ্টা করছিলেন পার্থিব শোক।

হঠাৎ কী মনে করে উঠে গিয়ে নিজের ঘর থেকে খোলটা নিয়ে আসেন। কোলে নিয়ে বসেন অশ্বত্থ গাছের বেদিতে। এলোমেলো দু-একটা চপেটাঘাত করার পর বুঝতে পারেন, সুরতাল কলজের অংশ। সেই কলজে যখন ছটকায় তখন সুর-তালও মুখ ফেরায়।

মন্দিরের দ্বার রক্ষক বলবন্ত সিং দূর থেকে খেয়াল করেছিলেন গোঁসাইয়ের যন্ত্রণাবিদ্ধ এই ‘নির্জনতা’। এরপর তিনিও যান নিজের ঘরে। বড় মন্দিরাখানা নিয়ে এসে বসেন গোসাঁইয়ের পাশটিতে। বলবন্ত সিংয়ের বড় আফসোস। তিনি ইচ্ছে করলেও গোসাঁইজির সাথে নগর সংকীর্তনে যেতে পারেন না। অনাদি এবং তিনি, দু’জনেই যদি মন্দির ছেড়ে চলে যান, তবে রাধামাধব থাকবে কার কাছে? কিন্তু কৃষ্ণনাম যে তাঁকে বড় টানে। তাঁরও তো ইচ্ছে করে সব গ্রন্থি ছিন্ন করে খোল করতাল নিয়ে বেরিয়ে পড়তে, পথে।

অনাদি খোল নিয়ে বসে একদৃষ্টে চেয়ে ছিলেন রাধামাধবের দিকে। যেন মগ্ন হয়ে গেছেন চিকনকালার চোখের ভিতর। যে ভাবে গরুড় স্তম্ভের পদতলে দাঁড়িয়ে জগন্নাথ দর্শন করতেন মহাপ্রভু। এই মায়া পৃথিবী তুচ্ছ করে ভেসে যেতেন ভাবসাগরে। 

কিন্তু দুগ্ধা পাহাড়ের মধ্যাহ্নকালীন নীরবতা তখন অসহনীয় ঠেকে বলবন্তের কাছে। অনাদির মত ‘চৈতন্য’ তো তাঁর নেই, কাজেই সে আর থাকতে না পেরে তার মন্দিরায় ধাতব আওয়াজ তোলে। সম্বিৎ ফিরে আসে অনাদির। বোল ওঠে খোলে। দু’জনে মিলে গেয়ে ওঠেন কৃষ্ণনাম। শাল পিয়াল আর আসন্ন পলাশের কুড়ি, শোক ভুলে বাঁচতে চায় নতুন করে। কৃষ্ণনামের নামাবলিতে অনাদি মুড়ে দিতে চান দুগ্ধার শরীর।

নাম গান গাইতে গাইতেই হঠাৎ যেন কী হয় অনাদির, অশ্বত্থ বেদির উপর বসে খোলটাকে সহসা জড়িয়ে ধরেন বুকের ভিতর, এক নেশাতুর আলিঙ্গনে। বোঝার চেষ্টা করেন এই ভাবেই মহাপ্রভু আলিঙ্গন করতে চেয়েছিলেন কি তাঁর জগন্নাথে, অন্তিম অন্তর্ধানের পূর্বে। হয়ত বুঝতে পেরেছিলেন আর কোনও দিন দেখা হবে না। আর ফিরে আসা হবে না এই নীলাচলে।

এইদিকে বলবন্ত, অনাদির কাণ্ডের কোনও কার্যকারণ খুঁজে না পেয়ে দিশেহারা হয়ে যান। অনাদির পায়ের কাছে শুয়ে পড়েন ষাষ্ঠাঙ্গে উপুড় হয়ে। তাঁর চোখের জলে সিক্ত হতে থাকে দেবালয় প্রাঙ্গণ।

কিন্তু অনাদির যেন কোনোদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। চোখের সামনে তিনি একে একে দেখতে পাচ্ছেন টোটা গোপীনাথ-গুণ্ডিচা বাড়ি আর জগন্নাথ মন্দির। কৃষ্ণপ্রেম যাঁহার অন্য প্রেম তাঁহার কীসেরও লাগি! দুগ্ধার শীর্ষদেশ আর নীলাচলের রাজপথ, মিলে মিশে এক হয়ে যায়।


কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন


এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।

Image Description

Parijat Majumder

1 সপ্তাহ আগে

বেশ টানটান ভাব আছে উপন্যাসে, পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।


মন্তব্য করুন

লেখক

জন্ম-৮ সেপ্টেম্বর, কলকাতা। ছাত্রাবস্থায় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখার মাধ্যমে লেখালেখির শুরু। এই উপন্যাস ছাড়াও লেখকের প্রকাশিত অন্য উপন্যাসগুলি হল— ‘আসলে ভালবাসার গল্প’, ‘রোধবতীর নীল রং’, ‘একে রহস্য দুইয়ে লক্ষ্যভেদ’। দেশ, আনন্দমেলা, কৃত্তিবাস, কিশোর জ্ঞান বিজ্ঞান, কথা-সাহিত্য, বহুরূপী এবং আনন্দবাজার পত্রিকায় ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কিছু লেখা। এছাড়াও বাংলার শ্রেষ্ঠ নাট্যকারের সম্মান ‘সুন্দরম পুরস্কার’ পান ২০১৪ সালে।

অন্যান্য লেখা

দেখতে পারেন