পাহাড়ের শরীরে এখন গোধূলির রং। হাওয়ায় শরীরে রাধামাধব মন্দিরের ‘জয়ধ্বজা’। এই দৃশ্য দেখলেই মহাষুর কিংবা প্রতিহারীর মাথায় খুন চাপে। ওই পতাকা যেন অনাদির কপালে আঁকা জয়তিলক। যা অনাদিকে দিয়েছে অহংকার। যে-অহংবোধে সে অস্বীকার করতে চায় এলাকার বিধান। কিন্তু এত সহজ নয়। হিঁদুর মন্দিরে মুসল্লি নিয়ে ফষ্টিনষ্টি করার সাজা তাঁকে পেতেই হবে। সেইজন্যই ছুটে আসা অনন্ত মহাষুর আর অরবিন্দ প্রতিহারীর।
দু’দুটো হত্যা ঘটে গেছে এরমধ্যেই, আরও কি নারকীয় ঘটনা দেখার অপেক্ষায় চন্দ্রপুরা...
উনসত্তর
ফুলওয়ারিতোড়। ঝাড়খণ্ড
দু-দুটো হত্যা ঘটে গেছে এরমধ্যেই, আরও কি নারকীয় ঘটনা দেখার অপেক্ষায় চন্দ্রপুরা? দেখা যাক।
বেশ কয়েকবার চেষ্টা করার পর রতন বুঝতে পারে, যে তার মোবাইল থেকে ফোন করা যাচ্ছে না। ব্যালেন্স নেই। বাড়ির দিকে সাইকেল ঘোরায়। প্রাণপণে চাপ দেয় প্যাডেলে।
ঘরে পৌঁছে দেখে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ। নিশ্চয়ই সরস্বতী ঘুমিয়ে পড়েছে অবেলায়। খিল এঁটে। ডাকে না রতন।
আসলে উত্তেজনায় রতন খেয়ালই করে না যে, দরজায় ছোট্টো তালাটা ঝুলছে। দরজার কালো রংয়ের সাথে মিশে গেছে বলে ওইটুকুন তালা নজরে পড়ে না। না, সরস্বতী ঘরে নেই, বাইরে কোথাও গেছে। কোথায় গেল আবার!
যাইহোক, রতনের এখন প্রথম কাজ হল আবদুলকে খবরটা দেওয়া। বাবলা তলায় সাইকেলটা রেখে লক করে দেয়। হনহন করে হাঁটা দেয় মুসলমান পাড়ার দিকে। মাঠের আল ধরে কেউ যদি আড়াআড়ি হেঁটে যায়, তাকে দেখা যায় বৈগা পাড়ার মন্দির থেকে। বাপি হাঁসদা এবং তার কয়েকজন সাঙ্গোপাঙ্গ দাঁড়িয়েছিল শান বাঁধানো চত্বরে। রতনকে মুসলমান পাড়ার দিকে যেতে দেখে এগিয়ে আসে, “হ্যাঁ রে রতন ওই দিকে কেন যাচ্ছিস!”
“কোনদিকে?”
“বুঝতে পারছিস না! বলছি... মুসল্লি পাড়ার দিকে কী করতে যাচ্ছিস?”
“সে কৈফিয়ত তোকে দেব নাকি?”
“সেকথা ঠিক। কিন্তু খেয়াল রাখিস আর বেশিদিন নেই। ফের পঞ্চায়েত বসবে। এইবার শুধু একঘরে নয়, তোদের এই বৈগাপাড়া ছাড়া করা হবে।”
“বসা না আবার পঞ্চায়েত। যতবার খুশি বসা। কে বারণ করেছে তোদের?”
“আমার উপর গরম খেয়ে লাভ নেই। ঘরের মেয়ে শালা মাঠে-ঘাটে পিরিত মারিয়ে বেড়াচ্ছে এক মোল্লা ছাওয়ালের সাথে, তাকে কিছু করতে পারছিস না, এইদিকে আমার উপর গরম দেখাচ্ছিস!”
এই নিয়ে আজ বার তিনেক কথাটা বলল বাপি হাঁসদা। পঁয়তাল্লিশ ইঞ্চি বুকের ছাতি রতনের। গায়ে অসুরের শক্তি। অন্যসময় হলে এতক্ষণে কাজ হয়ে যেত। লাফ দিয়ে বাপি হাঁসদার টুঁটি চেপে ধরত সে এবং চোখ ঠিকরে কলজে থেকে প্রাণবায়ু বার না হওয়া অব্দি ছাড়ত না। কিন্তু আজ নানা পাকেচক্রে সেটা করা হয়ে উঠছে না। কারণ আজ একটু বিশেষ কাজ আছে তার। শুধু দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসায়, “একটু সবুর কর বাপি। তোর চোখ আমি গেলে দেব রে শুয়োরের বাচ্চা। কে কোথায় কী করে বেড়াচ্ছে, সেইসব দেখার পরিশ্রম আর তোকে যাতে করতে না হয়। সবুর কর একটু।”
কথাটা বলে আর দাঁড়ায় না রতন। দ্রুত পায়ে এগিয়ে যায় মাঠের আল ধরে। পিছন থেকে কী বলে হাঁসদা কানে আসে না। তবে যেতে যেতে একটা কথা মনে হয়, চাচাজানকে বাপিরা মারেনি।
সদাশিব মোহান্তি এই কথা চারদিকে চাউর করে দিয়েছে যে আবদুলের বুলেট বৈগাপাড়ার মন্দিরের ‘ইজ্জত’-এ ঘা দিয়েছে। আজ নয় কাল শাস্তি আবদুলকে পেতেই হবে। তাই প্রথমে রতন ভেবেছিল বাপিরাই মেরেছে চাচাকে, ওই ঘটনার বদলা হিসাবে। কিন্তু এখন মনে হয়, যদি ওরাই মারত তবে এতখানি স্বাভাবিক থাকতে পারত না।
এই কথার সাথে সাথেই আরও একটা জটিল প্রশ্ন মাথায় আসে, তাহলে কে মারল চাচাজানকে? আবদুলের নেতা, ওই সালাউদ্দিন মোল্লাই মার্ডার করিয়ে দেয়নি তো! হ্যাঁ। খুব সম্ভব তাই হবে। রতন যতটুকু চিনত চাচাকে, তাতে এটা বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছিল যে, তিনি কোনোদিনই সাল্লু মিঞার বশে আসার পাত্তর ছিলেন না। সবসময় সাল্লুর বিপক্ষে কথা বলে এসেছেন। আবদুলের সাথেও চাচাজানের মন-কষাকষি ছিল ওই হারামির বাচ্চাটাকে নিয়ে। বাইরের অশান্তি ঢুকে পড়ছিল ঘরেও। আজ চাচাকে নিশ্চয়ই কোনোভাবে একা পেয়ে গিয়েছিল সাল্লুর লোক। মার্ডার করে দিয়েছে।
জমির একপাশে বুনো গাছের ঝোপ-জঙ্গল। প্রধান গাছ বলতে শিমুল পলাশ এবং বাবলা। জঙ্গল গভীর, শেয়াল অথবা ভাম বিড়ালের দেখা পাওয়া যায় যখন-তখন। সন্ধ্যার পর দু-একটা চিতা বাঘের পথ ভুলে চলা আসাটাও দস্তুর। কিন্তু এখন ওইসব নিয়ে ভাবার সময় নেই রতনের। দ্রুত হাঁটতে থাকে সে।
আবাদি জমি পেরিয়ে, গাজি বটতলার মেঠো পথে এসে ওঠে। এখনও যা আলো, তাতে বেশ খানিক দূর অব্দি দেখা যাচ্ছে।
আবদুলের ঘরটাই গন্তব্য ছিল রতনের। কিন্তু পুরোটা যেতে হয় না। এদিকেই আসছিল আবদুল। অস্থির মাথাটা একটু ঠাণ্ডা করে নিতে হাঁটা লাগিয়েছিল মাঠের পানে। কিছুদূর আসতে-না-আসতেই সে-ও দেখতে পায় রতনকে।
আবদুল খানিক আগেই গিয়েছিল গাজি বটতলার বাজারে। জরুরি তলব করেছিল সাল্লু। বাজারে সবচেয়ে বড়ো মাংসের দোকানটা সাল্লাউদ্দিনের। নিজে আজকাল খুব একটা গরু ভেড়া কাটে না। চার-চারটে লোক আছে তার জন্য। কিন্তু আজ একটু চাপ আছে, তাই কাজে হাত লাগাতে হয়েছিল সাল্লুকে। চার-চারখানা গরু সদ্য চামড়া ছাড়িয়ে ঝুলিয়ে রাখা ছিল হুকের থেকে। আর নিজে একটা বড়ো ঠ্যাং নিয়ে বসেছিল টুকরো করতে। খালি গায়ে, অসুরের মতো শরীরটা নিয়ে।
কাটা গাছের গুড়িটার উপর সাল্লুর হাত যখন নেমে আসে চপার সমেত, সে এক ভয়ংকর দৃশ্য। প্রথম দেখলে গায়ের রক্ত হিম হয়ে যেতে পারে। ভাঁটার মতো লাল চোখে জ্বলতে থাকে এক অদ্ভুত হিংস্রতা। চকচকে বিশাল চপারখানা যেন কোনো পশুদেহের উপর নয়, নেমে আসে শত্রুর গলায়। মৃতদেহ এবং যাবতীয় তথ্য প্রমাণ, সব যেন লোপাট হয়ে যেতে পারে ওই এক কোপে।
সাল্লুর ভঙ্গিমা, উলটে ঝুলিয়ে রাখা মুণ্ডহীন পশুদেহ, রক্তাক্ত মেঝের উপর ছড়িয়ে রাখা শিংওয়ালা মাথাগুলো, যখন চরম ভয়াবহতা দিয়েছে সমগ্র দৃশ্যপটকে, তখনই ধীর পায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল আবদুল সামাদ, সাল্লু মিঞার সামনে। হ্যাঁ, সিনা টান করেই।
বাঘের মতো গর্দানখানা তুলে হেসেছিল সাল্লু, “আজ আমাকে দোকানে আসতে হল বুঝলি। ওয়াশিপুরে মাল যাবে। একটা বড়ো অর্ডার আছে। কর্মচারীগুলো এখনও গাণ্ডুই রয়ে গেল। মাল বেশি সাপ্লাই করতে হলে এখনও শালা আমার চপার না ধরে উপায় নেই...হা হা হা...”
সাল্লুর ওইসব ধানাইপানাই তখন ভালো লাগছিল না আবদুলের। সে কিঞ্চিৎ হেঁড়ে গলায় প্রশ্ন করেছিল, “এমন কী জরুরি দরকার যে মসজিদে না ডেকে এখানে ডাকতে হল!”
আবদুলের ত্যাড়া প্রশ্নের উত্তরে আর একটা প্রশ্ন করে সাল্লু, “হ্যাঁ রে আবদুল আজকাল নাকি যখন-তখন বৈগা পাড়ায় গিয়ে হাজির হচ্ছিস!”
“কে বলল?”
“এইসব খবর বাতাসে ভাসে, জানিস না সেকথা! তা সে যাইহোক, বৈগাপাড়ার গোলমাল হয়েছে শুনলাম। কী হয়েছিল রে?”
“বাপি হাঁসদারা অনাদি গোসাঁইকে অ্যাটাক করেছিল।”
“কেন অ্যাটাক করেছিল?”
“নামগানের দল নিয়ে গিয়েছিল গোসাঁই... তাই।”
বাসন্তী হাওয়ায় দু-একটা শিরিষ পাতা উড়ে এসে পড়েছিল সাল্লুর মাথায়, চালার পিছনের গাছটা থেকে। একহাত দিয়ে সেই পাতা ঝেড়ে ফেলে চপারটা কাঠের গুড়ির উপর ঘষতে শুরু করে সালাউদ্দিন। সাল্লুর এটা একটা ইঙ্গিত, কারও ধড় থেকে গলা নামানোর।
বার তিনেক ঘষার পর হেসে উঠেছিল দস্যুর মতো, “হা হা হা...বৈগাপাড়ায় নামগানের দল নিয়ে খেজুরে করতে গিয়েছিল অনাদি। তাকে যেভাবে রগড়ানোর সেইভাবে রগড়াচ্ছিল বাপিরা। তাতে তোর লাফ দিয়ে পড়ার দরকার কী ছিল!”
সাল্লুর চমক-ঠমককে আর খুব একটা পাত্তা দেবে না ঠিক করেছে আবদুল। সে সাল্লুর কথার কোনো উত্তর না করে ঘেটি টেটিয়েই দাঁড়িয়ে থাকে। আবদুলকে ওই অবস্থায় দেখে মুখনিঃসৃত শব্দে আরও লালা মেশায় সাল্লু, “হিঁদুর ব্যাপার। হিঁদুরাই বুঝে নিত। তোকে ওখানে মাতব্বরি করতে কে বলেছে! তুই জানিস ওইখানে গিয়ে বন্দুক বার করে দাদাগিরি করে আসার জন্য কী হতে পারে? তোকে এইসব বাল ছেঁড়ার জন্য আমি গ্লক দিয়েছি রে গাণ্ডু!”
“মুখ সামলে সাল্লুভাই। এইবার কিন্তু নেতা-ফেতা মানব না। আমার মুখ দিয়েও কাঁচা বেরোবে...।” একটু থেমে আবার বলেছিল আবদুল, “তখন আমি বাপিদের না আটকালে গোসাঁইকে ওরা জানে মেরে দিত।”
সাল্লু বিকারহীন কণ্ঠে বলে, “কাকের মাংস কাকে খেত। তাতে তোর কী! তুই শালা একজন সাচ্চা মুসলমান হয়ে একটা বামনার বাচ্চার জন্য ঝাঁপাতে গেলি গাণ্ডু!”
এই জায়গাটাতেই সমস্যা হচ্ছে আবদুলের। কিছুতেই মিলছে না হারামি সাল্লুর সাথে। ওইদিকে সাল্লুর কথা তখনও শেষ হয়নি, “আজ নয় কাল শালা ওই অনাদি মরবেই। মাঝখান দিয়ে তুই বেফালতু আমাদের কেস খাওয়ালি। চাঁদপুরার মামা তোর ওই রিভলভারের গন্ধ শুঁকে গাজি বটতলায় এল বলে।”
এই কথার পরও ঘেটি ত্যাড়া করেই আবদুল বলেছিল, “আবার মুখ খারাপ করছ মোল্লা সাহেব... ভালো কথা বলছি কথাবার্তা ঠিক করে বলো।”
অধস্তনের এই বাক্য এবং এই শরীরী ভাষা সহ্য করা সহজ নয়। কিন্তু সাল্লু তখন আর কথা বাড়াতে চায় না। দাঁতে দাঁত চেপে বলে, “ঠিক আছে তুই এখন যা। তবে একটা কথা মনে রাখিস যা করেছিস, তার কোনো দায় কিন্তু পার্টি নেবে না। পুলিশের ব্যাপারটা তোকেই বুঝে নিতে হবে।”
“হ্যাঁ। ঠিক আছে বুঝে নেব। তুমি তোমারটা বুঝে নিয়ো।”
কথাটা বলে আর দাঁড়ায়নি আবদুল। এক লহমায় বেরিয়ে এসেছিল বাজার চত্বর ছেড়ে। মাথাটা একটু ছাড়িয়ে নিতে সোজা হাঁটা দিয়েছিল মাঠের দিকে। ওইদিকে, সালাউদ্দিন হাঁ হয়ে তাকিয়েছিল আবদুলের দিকে। মনে মনে হিসাব কষতে শুরু করেছিল, কবে ছাঁটা যায় পাখির ডানা।
দূর থেকে রতনকে আসতে দেখে এখন থমকে দাঁড়ায় আবদুল, “তুই এইদিকে! কোথায় যাচ্ছিস?”
“তোর কাছেই যাচ্ছিলাম...”
“আমার কাছে!” দু-এক মুহূর্ত চুপ করে থাকে রতন। তারপর যে বাক্যটা বলে সেটা তিরের ফলার মতো ঢুকে পড়ে আবদুলের হৃদপিণ্ডে, “চাচাজানকে কারা যেন ...”
তিড়িং করে একটা লাফ দেয় আবদুল। ঝাঁপিয়ে পড়ে রতনের উপর, “বল কী হয়েছে আব্বুর!”
রতনের মুখ থেকে কথা বার হয় না প্রথমে। তারপর অনেক চেষ্টায় দু-খানা আঠালো শব্দ বেরিয়ে আসে, “চাচাজান নেই...”
আদিবাসী রতনের পেটানো শরীরে বিশাল বুকের ছাতি, কিন্তু ছ-ফুটিয়া আবদুলও পাথর কোঁদা। বাঘের মতো লাফ দিয়ে রতনের টুঁটি চেপে ধরে সে, “তোরাই মেরেছিস আব্বুকে। তোর সাথে আর কে কে ছিল! বাপি? বাপি হাঁসদা? ওই হারামখোরকে কেটে আমি দামোদরে ভাসিয়ে দেব, তবে তার আগে তোকে আমি ...”
পকেট থেকে এক লহমায় রিভলভারটা বার করে আবদুল। গ্লক সিরিজ।
অন্ধকার নামছে ক্রমে বৈগাপাড়ায় মেঠো পথে এবং দুগ্ধার মাথায়। ঘনীভূত এই সময়ে এক বন্ধুর বুকে, আর এক বন্ধু চেপে ধরে মারণাস্ত্র, যতটা জোরে পারে।
কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
সত্তর
ফুলওয়ারিতোড়। ঝাড়খণ্ড। দুই চৈতন্য কথা। আদি ও অনাদি।
সনাতন গাজি বটতলা। সোনা মসজিদের অথিতিশালায় স্থান হয়েছে অরবিন্দ এবং অনন্ত মহাষুরের। সালাউদ্দিন মোল্লা কিংবা তার লোকজনের আতিথেয়তায় কোনো কমতি নেই। কিন্তু তাও যেন ভিতর অশান্ত হয়ে রয়েছে অরবিন্দদের। অনাদির ‘হিসেব’টা না মেটা পর্যন্ত, বাহ্যিক কোনো আয়োজনই তাদের সন্তুষ্ট করার পক্ষে যথেষ্ট নয়।
পাশাপাশি দু-খানা খাট। গদির উপর দুগ্ধ ফেননিভ বিছানা। বিলাসবহুল বিছানায় সারা দুপুর এপাশ-ওপাশ করার পর মহাষুর কিছু আগে এসে দাঁড়িয়েছে জানালায়। একটা পাল্লা সামান্য ফাঁক করে সে এখন তাকিয়ে আছে দুগ্ধার দিকে, গতকাল রাতের মতোই। এই পাহাড় চন্দ্রপুরায় এমন এক জায়গা দখল করে রেখেছে যে, সারা ফুলওড়ারিতোড় কিংবা চাঁদপুরা থেকে দেখা যায়। গাজি-বটতলাই হোক কিংবা বৈগা পাড়া, চোখ এড়িয়ে যাবার উপায় নেই।
পাহাড়ের শরীরে এখন গোধূলির রং। হাওয়ায় শরীরে রাধামাধব মন্দিরের ‘জয়ধ্বজা’। এই দৃশ্য দেখলেই মহাষুর কিংবা প্রতিহারীর মাথায় খুন চাপে। ওই পতাকা যেন অনাদির কপালে আঁকা জয়তিলক। যা অনাদিকে দিয়েছে অহংকার। যে-অহংবোধে সে অস্বীকার করতে চায় এলাকার বিধান। কিন্তু এত সহজ নয়। হিঁদুর মন্দিরে মুসল্লি নিয়ে ফষ্টিনষ্টি করার সাজা তাঁকে পেতেই হবে। সেইজন্যই ছুটে আসা অনন্ত মহাষুর আর অরবিন্দ প্রতিহারীর।
হাতে আর বেশি সময় নেই। তৈরি হয়ে বেরোতে হবে তাদের। সালাউদ্দিনের থেকে বিশদে রাধামাধব মন্দিরের খুঁটিনাটি জেনে নিয়েছে তারা। সন্ধ্যা আরতির পর মন্দির একেবারে ফাঁকা হয়ে যায়। সিকুরিটি বলবন্ত অনেক সময় ঠাকুর দালানে বসে থাকে, আবার অনেক সময় ফিরে যায় নিজের ঘরে। অবশ্য সে ঠাকুর দালানে থাকলেও খুব বেশি কিছু চিন্তার নেই। কারণ তার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র বলতে একখানা গাদা বন্ধুক। যেটা আবার কখনো কেউ তাকে চালাতে দেখেনি। আদৌ চালাতে পারে কি না সেই নিয়েই ঘোরতর সন্দেহ আছে। কাজেই, সন্ধ্যারতির পরের সময়টাই সব থেকে ভালো সময় অনাদির বুকে সিসা ভরে দেবার।
“ওহে অনন্ত এইবার যে আমাদের বার হতে হবে।”
অরবিন্দর কথায় সায় দিয়ে জানালার পাট বন্ধ করে এগিয়ে আসে মহাষুর। হ্যাঁ, সত্যি ওদের হাতে সময় কম। মাঠের পথ দিয়ে ওরা যাবে ঠিকই কিন্তু মন্দিরে যাওয়ার জন্য পাহাড়ের গা বেয়ে না উঠে, পাকদণ্ডী পথটাই ধরতে বলেছে সাল্লু মিঞা। দুটো কারণে তাদের ওই পথে যেতে বারণ করেছে মিঞা সাহেব। এক, সন্ধ্যার সময় পাহাড় বেয়ে ওঠা নিরাপদ নয়। সাপখোপের ভয় আছে। ওই পাহাড়ের বড়ো চন্দ্রবোড়াকে অনেকেই অজগরের বাচ্চা বলে ভুল করে। আর দুই, উপর থেকে যদি কেউ পাহাড়ের গা বেয়ে ওদের উঠতে দেখে ফেলে, তাহলে আগের থেকেই কিছু আঁচ করে সাবধান হয়ে যেতে পারে।
এত কিছু বুঝিয়াও রামানন্দের কিছু করার নাই। জগন্নাথদাস এবং মহাকাল প্রতিহারী, ভয়ংকর গোবিন্দ বিদ্যাধরের সহযোগী জানিয়াও তাহার কিছু বলিবার নাই, এই মুহূর্তে। কারণ বিদ্যাধর সত্যই দিন দিন ক্ষমতাশালী হইয়া উঠিতেছেন। তাঁহার অনুচরদিগকে ক্ষুণ্ণ করিলে হিতে বিপরীত হইবার সমূহ সম্ভাবনা। এবং রামানন্দ ইহাও অবগত আছেন যে, গোবিন্দর লালসা রাজ সিংহাসন অবধি পৌঁছিয়াছে। সিংহাসনহেতু সে মহাপ্রভুকে হত্যা করিতেও দ্বিধা করিবে না।
রামানন্দ, পঞ্চসখার অন্যতম জগন্নাথদাসকে বলিলেন, “তাহা হইলে প্রভুর বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত লওয়া আবশ্যক বলিয়া আপনাদিগের বোধ হইতেছে?”
এতক্ষণে যেন উপযুক্ত প্রসঙ্গে আসিয়া পড়া গেছে, এইরূপ মুখভঙ্গি করিয়া জগন্নাথদাস কহেন, “প্রভুকে আমরা দায়িত্ব লইয়া নিরাপদে বৃন্দাবনে পৌঁছাইয়া দিব। এবং তাহার উপায়ও একরূপ আমরা ভাবিয়াই রাখিয়াছি।”
“কী সেই উপায়!”
“গরুড় স্তম্ভ হইতে একদিন প্রভুকে আচম্বিতে জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশ করিতে হইবে। অভ্যন্তরে দুইজন, পূর্ব হইতেই প্রস্তুত থাকিবে। প্রভুর প্রবেশ মাত্রই তাহারা কালাঘাট দ্বার বন্ধ করিয়া দিবে। তাঁহার পর মন্দিরের গুপ্তপথ দিয়া...”
কিঞ্চিৎ সময় লইয়া জগন্নাথ তাঁহার কথা শেষ করিলেন, “ইহার পর প্রভুকে লইয়া বাহির হইয়া যাওয়া হইবে। অতঃপর...”
পুনরায় চুপ করিলে রামানন্দ অস্ফুটে কহিলেন, “অতঃপর?”
“অতঃপর আমাদিগের লোকজন প্রভুকে লইয়া রওয়ানা হইয়া যাইবে বৃন্দাবনের পথে।”
“ইহাতে আমার করণীয় কী?”
রামানন্দের প্রশ্নের উত্তরে এইবার মহাকাল এবং জগন্নাথদাস একত্রে কহিয়া উঠিলেন, “আপনি এবং স্বরূপ ব্যতীত আর কাহারও পরামর্শ প্রভুর কর্ণগোচর হয় না বলিয়াই জানি। আপনারা দুইজনে অনুগ্রহ করিয়া প্রভুকে বুঝাইবেন যে এই স্থান তাঁহার পক্ষে আর নিরাপদ নহে, এবং আমাদের এই সুপ্রস্তাব তিনি যেন দ্বর্থ্যহীন মানিয়া লন।”
রামানন্দ উত্তর করিলেন, “অগ্রপশ্চাৎ চিন্তা করিবার জন্য আমাদিগের কিঞ্চিৎ সময়ের প্রয়োজন।”
রামানন্দ যখন এই কথা বলিতেছেন তখন সকলের অলক্ষ্যে থাকিয়া বিধাতাপুরুষ বেদনাক্লিষ্ট হাসি হাসিয়া উঠিলেন, এই মনে করিয়া যে, রামানন্দের চিন্তাশক্তি তাহাকে এই প্রস্তাবের অন্তর্নিহিত দুরভিসন্ধিখানি অন্বেষণ করিতে এতটুকু সাহায্য করিবে না। ফলে যাহা ঘটিবে তাহা ভয়াবহ।
একাত্তর
চন্দ্রপুরা থানা। ঝাড়খণ্ড। মহাদেবের কোয়ার্টার। অমোঘ নিয়তির দিকে স্বপ্ননীল।
এস.আই মহাদেব, কোয়ার্টারের বাইরে যেতে বারংবার বারণ করেছিলেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও স্বপ্ননীলকে খানিক বাদেই বার হয়ে যেতে হবে রহস্যময় ‘কুয়াশা কুহকের’ ডাকে। কিন্তু সে-কথা এখনও জানে না স্বপ্ননীল। তাই সে, সারাদিনের পরিশ্রমের শেষে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েছে মহাদেবের কোয়ার্টারে। এবং শুধু তাই নয়, তার ঘুমের দোসর হয়েছে অদ্ভুত এক মায়া স্বপ্নও।
বিকালবেলা। বড়ালঘাটে বসে আছে স্বপ্ননীল। একা। দুটো নৌকা বাঁধা আছে ঘাটে। মাঝিমাল্লা, লোকলস্কর কেউ নেই কোথাও। এমনকী খেয়াঘাটের টিকিট ঘরটা, যা সবসময় গমগম করে, সেখানেও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না কারও। এক-শো ওয়াটের আলো, যেটা সারাদিন ধরে জ্বলে জেনারেটর ছাউনির নীচে, উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে প্রাক-সন্ধ্যায়।
মৃদু হাওয়া ভেসে আসছে মায়াপুরের দিক থেকে। শুকনো পাতার শিরশিরানি আর ঘাটে বাঁধা নৌকার শরীরে জলের ছলাৎ ছলাৎ, এ ছাড়া আর কোনো শব্দও নেই চরাচরে।
হঠাৎ স্বপ্ননীলের কাছে এসে দাঁড়ান মহাপ্রভু, ধীর পায়ে। মুখে মৃদু হাসি। জল ফুঁড়েই উঠে এলেন কি না ঠিক বোঝা যায় না। অথচ গৌর দীর্ঘাঙ্গে জলছাপ তো দুরস্ত, ইহজগতের সামান্যতম গ্লানিও নেই। আত্মহারা অথচ সমাধিস্থ, গঙ্গাবক্ষে বয়ে চলা স্রোতের মতই প্রগল্ভ অথচ হিমালয়ের মতো শান্ত।
“কেমন আছ নীল?”
হঠাৎ করে কথা জোগায় না স্বপ্নর। কোনোক্রমে বলে, “ভালো আছি প্রভু...”
“প্রভু একজনই। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।”
“কিন্তু আপনাকে তো মহাপ্রভু বলেই ডাকে সবাই?”
স্মিত হাসি, “হ্যাঁ তা ডাকে। আমার পথে হাঁটেনি মানুষ কিন্তু আমাকে করেছে দেবত্বে উত্তীর্ণ। যা অহেতুক শুধু নয়, হাস্যকরও বটে।”
“একথা কেন প্রভু?”
“যাঁকে দেবত্বে উত্তীর্ণ করা হয় তাঁকে দূরে সরিয়ে রাখা সহজ। সহজ তাঁকে অমরত্ব দেওয়াও।”
এই কথার পরই একটা শ্লোক আবৃত্তি করতে আরম্ভ করেন মহাপ্রভু, “কলিকালে নামরূপে কৃষ্ণ অবতার। নাম হৈতে হয় সর্বজগৎ নিস্তার।।”
ছন্দোবদ্ধ এই শ্লোকটা স্বপ্ননীলের কাছে নতুন নয়। বিশ্বামিত্রের কাছে সে বহুবার শুনেছে। কিন্তু এখন এই শ্লোকের হেতু? জিজ্ঞাসা নিয়েই চেয়ে থাকে স্বর্ণচ্ছটা বিচ্ছুরিত মূর্তির দিকে। তিনি বলে যান, “কোথায় স্বপ্ননীল! কোথায় আকাশ বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে ওই মহামন্ত্র! কোথায় শোনা যাচ্ছে কৃষ্ণনাম?”
নীল বোধ হয় বুঝতে পারে, আলোচনাকে কোন পথে নিয়ে যেতে চাইছেন তিনি। সে উৎসাহিত হয়, “কেন? নবদ্বীপের মন্দিরে মন্দিরে কি ওই মন্ত্র শোনা যাচ্ছে না প্রভু?”
‘প্রভু’ শব্দটা কিছুতেই ঝেড়ে ফেলতে পারে না নীল। এই অলীক মানুষটিকে ওই ছাড়া আর কী বলেই-বা সম্ভাষণ করা যায়!
“না স্বপ্ননীল। শোনা যাচ্ছে না।”
মহাপ্রভুর মুখে নিজের নামটা শুনতে বড়ো ভালো লাগে। একটা একাত্মতা অনুভব করে। আজ থেকে পাঁচ-শো বছর আগে, এই আনন্দপুরুষই শিখিয়েছিলেন মানুষে মানুষে কীভাবে তৈরি করতে হয় মেলবন্ধন। ‘বেঁধে বেঁধে থাকা’ আসলে কাকে বলে। উঁচু-নীচু, ধনী-দরিদ্র সব ভেদাভেদ কেমন করে ভেসে যায় এক মহামন্ত্রে।
‘যুগধর্ম’ শিখিয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি, মর্মস্পর্শী করেছেন সেই ধর্মের বাণীও। বলেছিলেন, কলিকালে মানুষের আয়ু বড়ো অল্প। স্বল্প সময়ে ঈশ্বর লাভের একমাত্র উপায় হল ‘হরিনাম সংকীর্তন’।
স্বপ্ননীল পড়াশুনা করেছে। সে জানে, এই বীজমন্ত্র আসলে কী? এই মন্ত্র আসলে নিজেকে খননের এক হাতিয়ার। খুঁড়ে খুঁড়ে পৌঁছতে হবে আত্মার কাছে। যার মধ্যে লুকিয়ে আছেন তিনি। ঈশ্বর। মুক্ত করতে হবে তাকে। ছড়িয়ে দিতে হবে মহাকাশে। ভালোবাসার মতো। এক ভালোবাসা জন্ম দেবে আরও এক ভালোবাসার। সে জন্ম দেবে আরও এক...। যার চলন, অবিরত ও অনন্তব্যাপি।
চৈতন্য মহাপ্রভুকে নিয়ে পড়তে পড়তে নীলের ভিতর অদ্ভুত এক বোধ জন্মেছিল একসময়। মনে হয়েছিল, হরিনামের বীজমন্ত্র আসলে এক পারমাণবিক বিস্ফোরক। পারমানবিক বিভাজনে, পরমাণুর একটি বিশেষ কণা আঘাত করে আর একটি কণাকে। আঘাতপ্রাপ্ত সেই কণা হয় দ্বিখণ্ডিত। মা পরমাণু থেকে তৈরি হয় দুহিতা পরমাণু। দুহিতা পরমাণু আবার আঘাত করে নতুন কণাকে। নবতম কণা হয় দ্বিখণ্ডিত। পূর্ববতী দুহিতা পরবর্তীতে মাতা। চলতেই থাকে এই বিভাজন।
মানুষে মানুষে বন্ধন সৃষ্টি যাঁর সহজাত, সে তিনি নিজের উত্তরপুরুষকে বাঁধবেন স্নেহের ডোরে, এ আর তেমন বড়ো কথা কী? নিজের কথার সূত্র ধরেই মহাপ্রভু বলেন, “না নীল শোনা যাচ্ছে না। যা শোনা যাচ্ছে তা হল নিষ্প্রাণ মন্ত্রোচ্চারণ। হরিনামও যে অন্তঃসারশূন্য তন্ত্রমন্ত্রের মতো হয়ে উঠতে পারে তা দেখতে পাচ্ছি বেশ। কোথায় নামগানের সেই আনন্দস্রোত যাতে একসাথে ভেসে যায় রাজা, প্রজা, হিন্দু, মোসলমান, মুচি, মেথর, ব্রাহ্মণ সবাই? কোথায় সেই নগর সংকীর্তন, যাতে একসাথে পথ হাঁটে যবন হরিদাস থেকে রাজা প্রতাপরুদ্র!”
“না তা নেই...”
“তাহলে কোথায় আমি? তাহলে কোথায় আমার সেই ভাবগঙ্গার ধারা? আমি পথকে বানিয়েছিলাম মন্দির, আর এরা পথের মাঝে চার দেয়াল তুলে বানিয়েছে দেবালয়। সবার পথ যেখানে পৌঁছতেই পারে না। নিত্যানন্দ-অদ্বৈত, গদাই-গৌরাঙ্গের উত্তরসূরি যারা, তারা আসলে বৈষ্ণব ধর্মের নামে ফিরিয়ে এনেছে সেই ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রকেই। ভাবখানা এরকম, যেন ব্রাহ্মণদের মধ্যে যারা বৈষ্ণব তারা আরও উন্নততর ব্রাহ্মণ। হায় কৃষ্ণ...!”
ভারী ভারী কথা। নীল ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। মহাপ্রভু স্বপ্ননীলের পাশে আসন গ্রহণ করেন একসময়। বলে যান নিজের কথা, “আচ্ছা স্বপ্ননীল, তুমি এই নবদ্বীপের মন্দিরে কখনো শূদ্র পূজারি দেখেছ?”
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় স্বপ্ন। মানে কী এই প্রশ্নের! মহাপ্রভুর পরের প্রশ্ন আরও কঠিন, “তারা কি হিন্দু নয়! সর্বোপরি তারা কি মানুষ নয়?”
দু-এক মুহূর্ত চিন্তা করে নীল। বলে, “হিন্দু হবে না কেন? হিন্দুই তো!”
“তাহলে! এইদিক কিংবা ওইদিক, যে-দিকেই খুঁজে দেখো না কেন, আমার বিশ্বাস, তুমি একজনকেও খুঁজে পাবে না।”
‘এইদিক’ বলার সময় মহাপ্রভু নবদ্বীপকে নির্দেশ করেন, আর ‘ওইদিক’ দেখানোর সময়, গঙ্গাবক্ষের ওইপারে মায়াপুরকে নির্দেশ করেন।
“কী খুঁজে পাব না প্রভু?”
“ওই যে বললাম ..., একজন মুচি অথবা মেথর, যার হাতে ঈশ্বর আরাধনার প্রধান দায়ভার ন্যস্ত।”
“তাহলে?”
“সেটাই তো বলছি। তাহলে আমার সারাজীবনের ওই প্রাণান্তকর চেষ্টা, যাকে ইতিহাস গাল ভরা নাম দিয়েছে ‘ভক্তি আন্দোলন’, তার ফল কী হল? যে হরিদাসকে আমি ‘হরিনাম সংকীর্তনের আনন্দযাত্রায়’ সামিল করেছিলাম, তাকে আবার বহিষ্কার করা হয়েছে। আবার তো সেই কৌলীন্যের দম্ভ আর হুংকার। হ্যাঁ, এই নবদ্বীপ, যা আমার জন্মভূমি, তার বুকেও।”
একের পর এক, মহাধনুর্ধর পণ্ডিতদের তর্কযুদ্ধে পরাস্ত করেছেন মহাপ্রভু। বোঝা যায়, আজও একইরকম ক্ষুরধার তাঁর মস্তিষ্ক এবং বাচনভঙ্গি। সামান্য নীলের পক্ষে ওই মহাজ্ঞানীর সাথে বাক্যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া, বাচালতার নামান্তর মাত্র। চুপ করে শুনে যায় সে...
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
মন্তব্য করুন