আগের পর্বের শুরুতে বলা হয়েছিল, বিশ্বামিত্র সেনের দৃষ্টি দিয়ে দেখলে বেশ বোঝা যাবে এইবার, ঠিক কী ঘটেছিল আজ থেকে পাঁচশ বছর আগে, পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে। সেই ঘটনার বর্ণনা জারি থাকল এই পর্বেও…
একান্ন
গন্তব্যের খুব কাছে স্বপ্ননীল।
ট্রেন আসানসোল ছাড়ল। চন্দ্রপুরায় ঢুকতে আর মাত্র একঘণ্টা। খিদে পাচ্ছে স্বপ্ননীলের। ঝালমুড়ি অথবা টুকটাক কিছুতে হবে না। ভারি কিছু পেটে দিতে হবে। গোটা দুয়েক স্যান্ডউইচ বানিয়ে এনেছিল। লাঞ্চবক্সটা বার করে। মুখে দিয়ে চিবোয়। মনে মনে ফিরে যায় আবার সেই বৃষ্টির রাতে।
বিশ্বামিত্র তাঁর যুক্তি দিয়ে ততক্ষণে এটি প্রায় প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, মহাপ্রভু জগন্নাথ মন্দির থেকেই উধাও হয়ে যান চিরকালের জন্য। কিন্তু এইবার এমন এক প্রশ্ন করেন রত্নাকর মিশ্র যা ‘প্রমাণিত’ বিষয়টিকে আবার কঠিন প্রশ্নের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেয়। রত্নাকর বলেন, “একটি বিষয় আমার কাছে কিন্তু অদ্ভুত লাগছে।”
“কী বিষয়?”
“আমি যতদূর জানি, মহাপ্রভু নীলাচলে যাওয়ার পর একবারই মাত্র জগন্নাথ মন্দিরে ঢুকেছিলেন। সেটাও তাঁর নীলাচলে আসার একেবারে প্রথমদিকে। বয়সের তারুণ্যে সেদিন দৌড়ে ঢুকেছিলেন মন্দিরের গর্ভগৃহে এবং বাঁধা দিতে আসা কয়েকজন পাণ্ডার সাথে শুধু যে ধস্তাধস্তি হয়েছিল তাই নয়, অনন্ত প্রতিহারী নামে অত্যন্ত শক্তিশালী একজন পাণ্ডাকে ধাক্কা মেরে ছিটকে ফেলে দিয়েছিলেন অনেক দূরে। এবং সেই কারণে তিনি পাণ্ডাদের হাতে যথেষ্ট লাঞ্ছিতও হয়েছিলেন। অভিমানী মহাপ্রভু এরপর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে আর কখনও তিনি মন্দিরে প্রবেশ করবেন না।
আজি হৈতে আমি এই বলি দঢ়াইয়া
জগন্নাথ দেখিবাঙ বাহিরে থাকিয়া।
অভ্যন্তরে আমি আর প্রবেশ নহিব
গরুড়ের পাছে রই ঈশ্বর দেখিব।
এরপর থেকে গরুড় স্তম্ভের কাছে দাঁড়িয়ে, অর্থাৎ সত্তর ফুট দূর থেকে জগন্নাথ দর্শন করেছেন, পরবর্তী তেইশ বছর। যে মানুষটা এতদিন ধরে ভিতরে প্রবেশ করলেন না, তিনি হঠাৎ-ই একদিন প্রবেশ করলেন, এবং সাথে সাথে দ্বার বন্ধ হয়ে গেল, এবং তাঁকে গুম করা হল... ! কালাঘাট দ্বারের মত বিশাল প্রবেশ দ্বার খুব কম মন্দিরেই আছে। আগের থেকে একাধিক লোক প্রস্তুত না থাকলে, সাথে সাথে ওই দরজা বন্ধ করা অসম্ভব। তিনি প্রবেশ করলেন আর অমনি দরজা বন্ধ হয়ে গেল! এটা কি আদৌ সম্ভব! যদি না আগের থেকে দরজা বন্ধ করার লোক প্রস্তুত হয়ে থাকে?”
বিশ্বামিত্রর মুখ-মণ্ডল জুড়ে অপরূপ এক হাসির ছটা, “যুক্তি আছে। আপনার এই কথায় যুক্তি আছে। প্রস্তুত ছিল তো… হা হা হা...। দরজা বন্ধ করার লোক আগের থেকেই তো প্রস্তুত ছিল।”
“মানে!”
“মানে... মহাপ্রভু নিজেও ঐ পরিকল্পনার অংশ ছিলেন।”
“মহাপ্রভু নিজেও এই পরিকল্পনার অংশ! কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।”
স্মিত হাস্যে বলে যান বিশ্বামিত্র, “আসলে ফাঁদটা পাতা হচ্ছিল অনেক দিন ধরেই। হ্যাঁ ফাঁদই বলব এটাকে। ঈশ্বর প্রেমে আকণ্ঠ নিমজ্জিত একজন মানুষকে, ঈশ্বরের চরণ ছোঁয়ার জন্য লোভাতুর করা এবং একটি নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিয়ে, মহানামের সাধনায় মগ্ন হয়ে থাকার সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলা, ফাঁদ ছাড়া আর কি?”
কেতাব-ই’র ব্লগজিন বিভাগে লেখা পাঠাতে চান? মেল করুন blogzine.ketabe@gmail.com-এ। মেলের সাবজেক্ট লাইনে লিখুন ‘কেতাব-ই ব্লগজিনের জন্য লেখা’।
সেই সময় উড়িষ্যায় ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছেন রাজা প্রতাপরুদ্র আর ওইদিকে শক্তি বাড়াচ্ছেন গোবিন্দ বিদ্যাধর। হয়ত বিদ্যাধর কিংবা তাঁর কোনও অনুচরই মহাপ্রভুকে বলেছিলেন উড়িষ্যা ছেড়ে যাওয়ার জন্য। সম্ভবত তাঁরা মহাপ্রভুকে বলেছিলেন যে, তাঁর জন্য বৃন্দাবনে গিয়ে বাস করার উপযুক্ত ব্যবস্থা করা হয়েছে। এইদিকে প্রতাপরুদ্রের ভালোর জন্যই মহাপ্রভুর সামনে অন্য কোনও পথ খোলা ছিল না। কারণ সেই সময় তাঁর নীলাচলে বসবাস, প্রতাপরুদ্রকে আরও বেশি করে গোবিন্দ বিদ্যাধরের রোষাগ্নির সম্মুখীন করতে পারে বলে, তিনি মনে করেছিলেন।
আর সর্বোপরি ছিল... ঈশ্বরের চরণ স্পর্শের লোভ। তেইশ বছর পর, যদি মন্দির অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন তাহলে একটিবারের জন্য জগন্নাথের শ্রীচরণ স্পর্শ করবেন না, তা কি হয়! কিন্তু তিনি জানতেনই না বৃন্দাবনের কথাটা আসলে একটা ভাঁওতা। তিনি আদৌ আঁচ পাননি গোবিন্দর দুরভিসন্ধির। তিনি বুঝতেই পারেননি যে, মন্দির অভ্যন্তরে প্রবেশের পর তাঁকে বৃন্দাবনে নিয়ে যাওয়া তো দুরস্ত, তাঁকে গুপ্তপথ নিয়ে যাওয়া হবে ভয়ংকর চূড়ঙ্গগড়ে। এবং সেখানে গোবিন্দ বিদ্যাধরের তালুবন্দী হবেন তিনি।”
রত্নাকরবাবুও যে মহাপ্রভু সম্পর্কে সবিশেষ ওয়াকিবহাল, তা আবারও বুঝতে পারা যায় তার পরের কথায়, “মি. সেন যদি এটা মেনেও নেই যে তিনি একদিন পরিকল্পনা মত মন্দিরের ভিতর ঢুকে পড়লেন, তাহলেও যে অন্য কিছু বিষয়ে এসে ঠেকে যেতে হচ্ছে হে...। প্রথম কথা— মহাপ্রভুকে মন্দিরের ভিতর গুম করতে হলে, সেদিন মন্দিরের কর্মযজ্ঞে এমন মানুষদের নিয়োজিত থাকতে হবে যারা চৈতন্যের ঘনিষ্ঠ হবেন না। দ্বিতীয় কথা— যেহেতু দ্বার অনেকক্ষণ ধরে বন্ধ থাকবে, তাই দ্বারের বাইরেও আগত দর্শনার্থীদের সামলাবার জন্য বিশ্বস্ত লোকেদের থাকতে হবে। কী তাই তো?”
মুখে দেবসুলভ হাসিটি বজায় রেখে রত্নাকরের কথায় সায় দেন বিশ্বামিত্র সেন। রত্নাকর বলেন, “তাহলে আপনি আমাকে বলুন এতজনকে জুটিয়ে নিয়ে একটা পরিকল্পনা করা কীভাবে সম্ভব!”
“এতজনকে পরিকল্পনার অংশীদার করার কোনও প্রয়োজন নেই। মাথাদের নিয়ে বসলেই যথেষ্ট। মানে প্রধান কাণ্ডারীদের অংশীদার করলেই যথেষ্ঠ। মাথা যেদিকে যাবে ল্যাজ সেইদিকেই যাবে। আই মিইইন… বিষয়টা যদি এইরকম ভাবে ভাবা যায়— গোবিন্দ বিদ্যাধরের প্রধান অনুচরগণ এবং মহাপ্রভুর প্রধান অনুচরগণ বসে একটা শলাপরামর্শ করলেন, এই মর্মে যে, মহাপ্রভুকে মন্দিরের গুপ্তপথ দিয়ে বার করে, নিরাপদে বৃন্দাবনে পৌঁছে দেওয়া হবে। মহাপ্রভু এবং তাঁর অনুচরগণ বিষয়টি বিশ্বাসও করলেন। এরপর বিষয়টা শুরু হল, পরিকল্পনা অনুযায়ী কিন্তু... ”
“কিন্তু!”
“কিন্তু মহাপ্রভু মন্দিরে প্রবেশ করার পর বিষয়টা গেল পাল্টে। এরপর সেটাই ঘটল, যেটা গোবিন্দ বিদ্যাধর এবং তাঁর অনুচরগণ চেয়েছিলেন, এবং তাঁদের সেই দুরভিসন্ধির কথা আদৌ জানতেই পারেননি মহাপ্রভু এবং তাঁর অনুগামীরা। তাহলে!”
রত্নাকর চুপ করে থাকেন। একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বিশ্বামিত্র, “যাই হোক, ফিরি আমার কাজের প্রসঙ্গে। হ্যাঁ যা বলছিলাম, বিশ্বরূপের বংশলতিকা পাওয়ার পর, বাইরে প্রকাশ না করলেও, আমার দু-একজন কলিগ সেটি দেখে ফেলেছিল। বলা ভাল, উত্তেজনা নিজের ভিতর চেপে রাখতে না পেরে আমিই তাদের সাথে বিষয়টি শেয়ার করে ফেলেছিলাম এবং বংশলতিকাটি দেখিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে বুঝতে পারি, তাঁদের অতটা বিশ্বাস করা আমার ঠিক হয়নি।”
ছাদে বৃষ্টির আওয়াজ খুব বেড়েছিল। কিন্তু সেই শব্দ ছাপিয়ে বিশ্বামিত্রের কণ্ঠস্বর কানে আসছিল স্বপ্ননীলের। সবে কৈশোরে পা দেওয়া ছেলেটার দিকে তাকিয়ে একটু মৃদু হেসেছিলেন মি. সেন। তারপর বলেছিলেন, “আমি বিজ্ঞান দিয়ে ইতিহাসকে প্রমাণ করতে চাইলে কী হবে, বিজ্ঞানেরও তো ইতিহাসের প্রয়োজন আছে।”
বলা বাহুল্য, এই বাক্যের বিন্দু-বিসর্গ বোঝা যায় না। বিশ্বামিত্র আবার বলেন, “আসলে, বংশলতিকাটি যে সঠিক কিনা... মানে যে খণ্ড খণ্ড সময় কালকে গেঁথে মালাটা তৈরি করা হয়েছে, সেটি আদৌ ঠিক কি না, উদ্ধার করা দেহাবশেষের সাথে, উদ্ধার করা বংশলতিকার এখনও যাঁরা আছেন, আই মিন দেহাবশেষের সাথে যাঁদের ডিএনএ মিলিয়েছি তাঁরা আদৌ মহাপ্রভুর বংশধর কিনা, সেটা নিয়েই তো প্রশ্ন তুলে দেওয়া হতে পারে সবার আগে। তখন আমি সেটিকে প্রমাণ করব কী ভাবে? কাজেই, তালিকাটি তখনই প্রকাশ্যে না এনে, নিজেকে গুছিয়ে নেবার জন্য আরও কিছুদিন সময় নেওয়া উচিত ছিল আমার। যাতে আরও কিছু সাপোর্টিং জোগাড় করা যায়। আর তাছাড়াও, তালিকাটি অন্তরালে রাখার আরও একটা যুক্তি আছে, যেটা বেশ ভয়ের…”
“ভয়ের!”
“ঐ তালিকার শেষ নামগুলো যাদের, তাদের নিরাপত্তার বিষয়টা...”
“মানে!”
“ইয়েসস... যারা এখনও বিরাজ করছেন এই পৃথিবীর বুকে তাঁরাই তো একমাত্র ‘রেফারেন্স’। আই মিন, তাঁদের দেহ থেকেই সংগ্রহ করা যাবে সেই স্যাম্পল, যাঁর সাথে কম্প্যারিজন করে পৌঁছানো যাবে আসল লক্ষ্যে। তাঁদেরকেই যদি সরিয়ে দেওয়া হয় পৃথিবী থেকে, তাহলে? কাজেই, তালিকা কয়েকজনের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়বার পর আমি আরও একটা কাজ করি।”
“কী!”
“তালিকার নামগুলো পারমুটেশন কম্বিনেশন করে আরও কয়েকটা তালিকা বানিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবেই ছড়িয়ে দিই বাজারে। যাতে সহজে বোঝা না যায় কোনটা ‘রিয়েল’…।”
দু-এক মুহূর্ত স্তব্ধতার পর, বলেন রত্নাকর, “আচ্ছা… এটা আমি এখন যতদূর বুঝতে পারছি যে, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবেন না বলে আপনি চাকরি ছেড়েছিলেন। কারণ তখন এই গবেষণাই আপনার কাছে অগ্রাধিকার পেয়েছিল। ভালো কথা। এরপর এটাও, ধরে নেওয়া হল যে আপনি নিজের মত করে একটা সত্যে ‘রিচ’ করলেন, কিন্তু আপনার সেই ‘সত্যি’-কে গভর্মেন্ট যদি স্বীকৃতি না দেয়, তবে!”
এই প্রশ্ন আত্মবিশ্বাসী বিশ্বামিত্র ফুঁৎকারে উড়িয়ে দেন। “হা হা হা… না দিতেই পারে...। সেটাই তো বললাম এইমাত্র, কিছুটা সময় আমার প্রয়োজন আরও কিছু প্রমাণ অর্থাৎ ‘সাপোর্টিং’ যোগাড় করার জন্য। যাই হোক, যদি আমি এটা ধরেনি যে, আমি নিজের মত করে একটা ‘ট্রুথ’ অ্যারাইভ করলাম এবং সরকার সেটাকে স্বীকৃতি দিল না, তখন অন্য পথ তো আমার সামনে খোলাই রইল।”
“সেটা কী?”
“আমার ‘সত্যি’টাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ভাইরাল’ করে দেওয়া। সবরকম প্রমাণসহ যদি সেটা আমি করতে পারি তবে তাকে চাপা দিয়ে রাখা খুব মুশকিল।”
রত্নাকরবাবু অথবা নীল দুজনেই চুপ করে থাকে। দীর্ঘ কথোপকথনের পর বিশ্বামিত্র উঠে দাঁড়ান। টেবিলের দিকে এগিয়ে যান। কাঁধের ঝোলা ব্যাগটা রাখেন। ভিতর থেকে ছোট্টো একটা গোল বাক্স বার করেন। স্বচ্ছ কাচপাত্র। নীল ভিতরের জিনিসটাকে দেখেই চিনতে পারে। কটন উল বাডস্। প্যাকটিক্যাল করার সময় কলেজ ল্যাবে দেখেছে।
“রত্নাকরবাবু যদি কিছু মনে না করেন..., আপনার কাছে একটা সাহায্য চাইতে পারি? সত্যি কথা বলতে কী... এর জন্যই আমার অতদূর থেকে ছুটে আসা...। অ্যাকচুয়ালি... আপনার ডিএনএ আমি কালেক্ট করতে চাই। তালিকার অর্ডার অনুযায়ী আপনিই এখন লিভিং রেফারেন্সের অন্যতম। এরপর অবশ্য আরও একজন আছে...”
একটু সময় নিয়ে হাসতে হাসতে বলেন, “তিনি হলেন মি. স্বপ্ননীল...”
রত্নাকর বলেন, “আমাদের কোনও অসুবিধা নেই। আপনি স্যাম্পল কালেক্ট করতে পারেন।”
মি. সেনের হাসি এবার আরও চওড়া, “থ্যঙ্কস আ লট...”
স্বপ্ননীল বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে দেখতে থাকে বিশ্বামিত্রের কার্যকলাপ। কন্টেনারের ভিতর থেকে একটা কটন উল বাড্স বার করেন তিনি। এগিয়ে যান গ্র্যান্ড ফাদারের কাছে। বলেন, “মাথাটা উঁচু করে, বড় করে একটা হাঁ করুন।”
রত্নাকরবাবু তাই করেন। মি. সেন তুলো জড়ানো কাঠিটা ওঁর মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে একবার ঘোরান, তারপর বার করে নিয়ে আসেন।
নিজের ঝোলাখানা থেকে আর একটা স্বচ্ছপাত্র বার করেন এরপর। সেটা ফাঁকা। কাঠিটা ওর মধ্যে রেখে দেন সযত্নে। বুক পকেটের মার্কার-পেনটা দিয়ে প্রথমে ওই পাত্রের গায়ে তারিখটা লেখেন, তারপর ক্যাপিটাল লেটারে ‘রত্নাকর মিশ্র’ নামটা। ঘুরে দাঁড়ান নীলের দিকে। “হ্যাঁ স্বপ্ননীল বাবু এইবার তোমার পালা...।”
আর একটা বাডস নিয়ে বিশ্বামিত্র এগিয়ে আসেন তার দিকে। খুব দ্রুত স্যাম্পল কালেকশন শেষ হয়।
“হ্যাঁ আমার প্রাথমিক কাজ শেষ। এবার ল্যাবে শান্তি মত পরের কাজটুকু করতে পারব। আর একটা কথা— পরীক্ষার ফলাফল যাই হোক না কেন, সেটা আমি সময়মত প্রকাশ করব। সব দিক বিচার বিবেচনা করে।”
“সেটা আপনার বিষয় মি. সেন। ঐ নিয়ে আমি বা আমরা চিন্তিত নই।”
মুখে ওই কথা বললেও রত্নাকরের কপালে চিন্তার ভাঁজ স্পষ্ট। তিনি এইবার আরও একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা জানতে চান, আচ্ছা ধরে নিলাম যে চূড়ঙ্গগড়ে যে দেহাবশেষ আপনি পেয়েছেন তার সাথে আমাদের ডিএনএ ম্যাচ করে গেল। কিন্তু তাতে কী হল? মাঝখানে আর কোনো বংশধর তো নেই, তাদের স্যাম্পল তো আপনি পাচ্ছেন না!
“তাতে খুব কিছু অসুবিধা নেই। কারণ প্রতিটা বংশগতির একটি আলাদা আই মিন একটি স্পেশিফিক মানচিত্র থাকে। আর এটাই আমার ভরসা। এই ভিত্তিটাই তো, আমার প্রশ্নটা তুলে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। আর, এই প্রশ্নটাকেই তো ভয়...”
“কারা ভয় পাচ্ছে বিশ্বামিত্রবাবু?”
“অন্ধ ভক্তরা… ধর্মের জায়গীরদাররা হা হা হা...।”
এত কিছুর পরও যে প্রশ্নটা থেকে যায়, তা হল, চূড়ঙ্গগড়ে পাওয়া ওই দেহাবশেষের সাথে, স্বপ্ননীল কিম্বা রত্নাকরের ডিএনএ ম্যাচ করে গেলেই এটা কী ভাবে প্রমাণ হয়ে যায় যে ওই দেহাবশষে চৈতন্য মহাপ্রভুর। সঙ্গত প্রশ্ন। উত্তর পাওয়া যাবে উপাখ্যান চলতে চলতেই।
কেতাব-ই’র মুদ্রিত বই, ই-বই এবং ব্লগজিন বিভাগের লেখালিখির নিয়মিত খোঁজখবর পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন।
এই ব্লগজিনে প্রকাশিত সমস্ত লেখার বক্তব্য লেখকের নিজস্ব।
মন্তব্য করুন